খুলনা: করোনার ধাক্কা কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়েছে জীবনযাত্রা। চাকরি, ব্যবসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবই চলছে পুরোদমে।
আর্থিক সংকট, প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবসহ নানান কারণে সাংস্কৃতিক অঙ্গন ঝিমিয়ে পড়েছে বলে জানান সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
তারা বলেন, খুলনায় শতাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠন থাকলেও করোনার প্রকপে এগুলোর কোনো কার্যক্রম নেই। নামে মাত্র অফিস ভবন ও সাইনবোর্ড ছাড়া তেমন কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও নেই। খুলনাকে বলা হয় সংস্কৃতির পীঠস্থান, কারণ এই অঞ্চলের শিল্পী-কলাকুশলীদের দ্বারাই জাতীয় পর্যায়ের প্রায় সব মূল জায়গাগুলো পরিচালিত হয়ে থাকে, কিন্তু আলোর নিচে যেমন অন্ধকার থাকে তেমনি খুলনাতেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও সুষ্ঠু চর্চার জায়গার অনেক অভাব সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন বা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আগের মতো সেই প্রাণচাঞ্চল্য আর নেই।
খুলনা লেখক-শিল্পী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব নাট্যশিল্পী কামরুল কাজল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যারা মঞ্চের মানুষ সারা বছর মঞ্চ প্রোগ্রাম করি করোনাকালে আমাদের প্রোগ্রাম বন্ধ ছিলো। যদিও এখন সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে তবুও আমরা আমাদের মঞ্চের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। করোনার সময়ে অনেক সংগঠন তাদের ভাড়া বহন করতে না পেরে ঘর ছেড়ে দিয়েছে, বিভিন্ন জেলার মানুষ এই শহরে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতো তারা অনেকেই শহর ছেড়ে অনত্র চলে গেছেন জীবন ও জীবিকার তাগিদে। শিল্পকলার মাধ্যমে বেশ কিছু অনুদান এসেছিল প্রকৃত শিল্পীরা সেই অনুদান থেকে বঞ্চিত হওয়ায় অনেকের মন ভেঙে গেছে। প্রকৃতপক্ষে তারা আর্থিক সচ্ছলতা হারিয়েছেন। শিল্পকলা হচ্ছে শিল্প অঙ্গনের প্রাণ। দীর্ঘদিন ধরে সেটা বন্ধ আছে। নতুন ভবন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। হয়তো শিল্পকলা একাডেমি উদ্বোধন হলে আবার এই অঙ্গনের গতি কিছুটা ফিরে আসবে। সবশেষে বলা যায়, সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে পুনরায় চাঙ্গা করতে হলে সব শ্রেণির মানুষের এগিয়ে আসতে হবে।
গল্পকার আইনুল্লাহ পারভেজ বলেন, মহামারি করোনার জন্য বন্ধ হয়েছিল সব। তেমনি শিল্প- সংস্কৃতি অনুষ্ঠানগুলো, সাহিত্য আসর ও নিয়মিত হতো না। তবে এখন সাহিত্য সংগঠনগুলো সাহিত্য আসর শুরু করেছে। তবে কবি-সাহিত্যিকদের উপস্থিতি কম। কারণ এখনো করোনার ভয়াবহতা আমাদের মন থেকে মুছে যায়নি। হয়তো আগামীতে আরো প্রাণবন্ত হবে। তবে মাঝে মাঝে কিছু সমমনা কবি-সাহিত্যিক বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিচ্ছেন, সাহিত্য চর্চা হচ্ছে। আগামীতে কবি-সাহিত্যিকদের বিচরণ বাড়বে।
খুলনা নাট্য নিকেতনের নাট্য পরিচালক শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন পঙ্গু হয়ে গেছে। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য তেমন কোনো বরাদ্দও নেই। শহরে মহড়া (রিহার্সেল) দেওয়ার মতো জায়গাও তেমন নেই। মহড়ার জন্য আমাদের নাট্য নিকেতন কেউ চাইলে ব্যবহার করতে দিচ্ছি।
খুলনার আঞ্চলিক গানের সম্রাট গুরুপদ গুপ্ত বলেন, করোনার কারণে খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। এটা উজ্জ্বীবিত করতে হবে। সামনের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক অঙ্গন কিছুটা চাঙ্গা হবে বলে আশা করি।
আব্বাস উদ্দিন একাডেমি সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে ইন্ডোর প্রোগাম হচ্ছে। শুধু হচ্ছে না খুলনায়। শুক্রবার ঢাকায় শুরু হয়েছে ১২দিন ব্যাপী ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’। এতে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির ৫টি মিলনায়তনে ১৪০টি সাংস্কৃতিক দলের সাড়ে ৩ হাজার শিল্পী-কলাকুশলী অংশ নিচ্ছে। ১২ দিনে ৩৬টি নাটক থাকছে এ উৎসবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় করোনা পরিস্থিতি অনেকটা ভালো হলেও খুলনায় কোন আয়োজন নেই। সারা দেশে পার্কে প্রোগ্রাম হচ্ছে কিন্তু খুলনার পার্কে অনুষ্ঠানের অনুমতি মিলছে না।
তিনি আরও বলেন, এমনিতেই খুলনায় সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর অবস্থা সব থেকে আশঙ্কাজনক। কারণ প্রশিক্ষণের জায়গার অভাব, এদের জন্য একটি স্থায়ী কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করে সেখানে প্রকৃত প্রশিক্ষণ সংগঠনগুলোকে বরাদ্ধ দেওয়ার জন্য দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। কারণ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ঘর ভাড়া পাওয়া খুবই কঠিন।
তিনি অবিলম্বে নবনির্মিত আধুনিক শিল্পকলা একাডেমির উদ্বোধন ও খুলনা টেলিভিশন কেন্দ্র চালুর দাবি জানান।
খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সুজিত কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গন নিয়ে আমাদের বিশাল পরিকল্পনা রয়েছে। আধুনিক জেলা শিল্পকলা একাডেমিকে কেন্দ্র করে তা বাস্তবায়ন করা হবে। শিল্পকলা একাডেমির উদ্বোধন করা হলে এটাকে সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে। শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব পরিকল্পনার বাইরে কেউ চাইলে যৌথ আয়োজনেও অনুষ্ঠান করা যাবে এই একাডেমিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২১
এমআরএম/এজে