ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

কিশোরের পায়ে ১০ বছরই শিকল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২১
কিশোরের পায়ে ১০ বছরই শিকল সুজয় শীল মহাদেব।

মানিকগঞ্জ: সুজয় শীল বা মহাদেব। ১৫ বছর বয়সী এই কিশোর একজন মানসিক প্রতিবন্ধী।

যার জীবনের ১০ বছরই কেটে গেছে শিকলে বন্দি অবস্থায়। সুচিকিৎসা নিতে না পারায় দিন দিন অবনতি হচ্ছে তার।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের দশ-আনি এলাকার নরসুন্দর সুশান্ত শীল ও অর্চনা রাণী শীলের ছেলে মহাদেব। ২০০৬ সালের ৯ ডিসেম্বর গাজীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম হয় তার। জন্মের পর প্রথম পাঁচ বছর সবকিছু ঠিক ছিল। কিন্তু বেড়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে অবনতির দিকে গেলো মহাদেবের মানসিক অবস্থা। ঝামেলা এড়াতে ছেলেকে শিকলে বন্দি রাখার সিদ্ধান্ত নেন বাবা-মা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে শিকলে বন্দি হয়ে আছে কিশোর মহাদেব। আশপাশের লোকজন বাড়ির পাশে হেঁটে গেলে অস্পষ্ট শব্দ করে সে। হয়তো তাদের ডাকে। তবে মা, বাবা, কাকা এসব শব্দ উচ্চস্বরে বললে কিছুটা বোঝা যায়। খিদে লাগলে কিংবা পায়ে ব্যথা অনুভব করলে অস্পষ্ট স্বরে ডাকে সে। সবমিলিয়ে যে বয়সে তার স্কুল কিংবা মাঠে থাকার কথা, সে বয়সে তাকে বন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে শিকলে।

তাদের পাঁচ সদস্যের পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একজনই, তার বাবা সুশান্ত শীল। নরসুন্দরের কাজ করে যে টাকা তিনি আয় করেন, তা খাবার আর ছেলের ওষুধ খরচ জোগাতেই শেষ হয়ে যায়।

ছেলের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুশান্ত শীল বলেন, মহাদেবের জন্মের কিছুদিন পর থেকে সমস্যার শুরু। তখন ডাক্তার দেখাই, কিছুদিন ভালো ছিল। এরপর আবার অসুখের শুরু। বিভিন্ন স্থানে ডাক্তার-কবিরাজ দেখিয়েছি। কিন্তু ছেলেটা আমার ভালো হয় নাই। এক ডাক্তার ভারতের ভেলোর নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু যে টাকা আয় করি, তা ওষুধ আর বাজার কিনতেই শেষ হয়ে যায়।

মহাদেবের মা অর্চনা রাণী বলেন, ওর বাবা যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে আমাদের চলে না। সরকার থেকে একটা প্রতিবন্ধী কার্ড দিয়েছে। তিন মাস পরপর ৫০০ করে ১৫০০ টাকা দেয়। এগুলোও মহাদেবের ওষুধের খরচের তুলনায় কম। আমাদের যদি কেউ একটু সহযোগিতা করতো, আমার মনে হয় ছেলেটা সুস্থ হয়ে যেতো। তাদের প্রতিবেশী রিপন সরকারের কথাও এমনই। পাশাপাশি মহাদেবকে যেন বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়, সে বিষয়েও জোর তার।

তবে মহাদেব যে নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে তা নিশ্চিত করেছেন কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিপ্লব হোসেন সেলিম। তিনি ওর সুচিকিৎসার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান।

মানিকগঞ্জের ডিসি আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, মহাদেবের বিষয়টি আমার জানা নেই। তার বিষয়ে দ্রুত খবর নিচ্ছি। তার চিকিৎসায় যতটুকু সম্ভব, আমার জায়গা থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২১
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।