ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

কিশোরগঞ্জের ‘বড়ইতলা গণহত্যা’ দিবস আজ

নজরুল ইসলাম খায়রুল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২১
কিশোরগঞ্জের ‘বড়ইতলা গণহত্যা’ দিবস আজ স্মৃতিসৌধ

কিশোরগঞ্জ: আজ ১৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের বরইতলা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াল ইউনিয়নের বড়ইতলা নামক স্থানে ৩৬৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে রাজাকার ও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী।

সেই থেকে এই দিনটি এখন বড়ইতলা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে স্থানীয়রা।

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত যুদ্ধাপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তাদের বিচার হয়নি। এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার শহীদদের পরিবারের সদস্যদের বুকফাটা কান্না যেন থামছে না। বড়ইতলা হত্যাকাণ্ডে স্বজনহারা শত শত পরিবার এখনো মানবেতর জীবন- যাপন করছেন। তাদের খবর রাখে না কেউ। এখনো মেলেনি শহীদ পরিবারের
স্বীকৃতি ও মর্যাদা।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের এদিন (১৩ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে কিশোরগঞ্জ থেকে ট্রেনে করে কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়নের বড়ইতলা নামক স্থানে আসে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস। পরে তারা পার্শ্ববর্তী দামপাড়া গ্রামে প্রবেশ করে ৪-৫ জন নিরীহ স্থানীয় বাসিন্দাকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রাণে বাঁচতে কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়নের দামপাড়া, বীরদামপাড়া, কড়িয়াইল, তিলকনাথপুর, গোবিন্দপুর, চিকনিরচরসহ আশপাশের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে। এ সময় পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগীরা গ্রামের সাধারণ মানুষকে সভা হবে বলে ডেকে বড়ইতলা নিয়ে যায়।

পরে তাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয় রাজাকাররা পাকিস্তানী সৈন্যদের নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাড়িঘরে লুটতরাজ, নারী নিপীড়ন ও অগ্নি সংযোগ করে। এ সময় এক রাজাকার গুজব ছড়ায় যে, গ্রামবাসী দুই পাকিস্তানী সৈনিককে মেরে ফেলেছে। এ গুজবের পর বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেললাইনের পাশে বড়ইতলা নামক স্থানে নিরীহ ৩৬৫ গ্রামবাসীকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।

দেশ স্বাধীনের পর তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বড়ইতলার গণহত্যারস্থল পরিদর্শন করেন। পরে বড়ইতলার নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ নগর’ রাখা হয়। শহীদদের স্মরণে সেখানে তখন একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়।

পরে ২০০০ সালে সরকারের সহযোগিতায় বড়ইতলা এলাকায় রেললাইনের পাশে ৬৬৭ বর্গফুট এলাকায় ২৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। দিবসটি পালন উপলক্ষে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনাসভাসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২১
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।