ঢাকা: একটি চক্র বৈধ অস্ত্রের দোকানের আড়ালে অবৈধ অত্যাধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করে আসছিল। অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করা এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটটসি)।
সোমবার (০১ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান ও ডিমের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে রোববার (৩১ অক্টোবর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন সায়দাবাদ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি অস্ত্র এবং ৩০১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতার হলেন- চট্টগ্রামের বৈধ অস্ত্রের দোকানের মালিক মো. হোসেন, রাঙ্গামাটির এলাকার পাড়ার হ্যাডম্যান লাল তন পাংখোয়া ও চট্টগ্রাম এলাকার মো. হোসেনের দুই সহযোগী মো. আলী আকবর এবং মো. আদিলুর রহমান।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, সিটিটিসির ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি টিম রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড মোড়ের শ্যামলী পরিবহনের ছয় নম্বর কাউন্টারের সামনে অভিযান চালায়। অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
আসাদুজ্জামান বলেন, মো. হোসেন বৈধ অস্ত্রের একজন ডিলার। চট্টগ্রামে তার একটি বৈধ অস্ত্রের দোকান রয়েছে। এ দোকানকে ব্যবহার করে আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করতেন। তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে চড়া দামে বিক্রি করতেন। সব থেকে বড় আশ্চর্যের বিষয় হলো, যারা বৈধ অস্ত্র আগে ব্যবহার করতেন কিন্তু এখন মারা গেছেন আবার কেউ কেউ এই অস্ত্র আর ব্যবহার করেন না, তাদের কাছ থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতেন হোসেন। এই সব লাইসেন্স দিয়ে অস্ত্র কিনে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করতেন। তার কাছ থেকে জব্দ হওয়া শটগানটিও এরকম একটি লাইসেন্স দিয়ে কেনা।
তিনি আরও বলেন, লাল তন পাংখোয়ার বাড়ি রাঙ্গামাটির বরককলের সাইচালে। তিনি পাড়ার হেডম্যান ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বরকল সীমান্তবর্তী মিজোরাম রাজ্য এবং বান্দরবানের মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে অস্ত্র ও গুলি চোরাচালানের মাধ্যমে পাবর্ত্য অঞ্চলসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্রি করতেন। আলী আকবর ও আদিলুর রহমান সুজন মো. হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তারা দীর্ঘদিন ধরে হোসেনের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র ও গুলি কিনে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং চট্টগ্রামের হামিদুল হক, আবদুল মান্নান আহমেদ, কক্সবাজারের সেলিম, জুয়েলদের কাছে বিক্রি করতেন।
তিনি আরও বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ আমরা অবৈধ অস্ত্র কেনা-বেচার সঙ্গে যুক্ত অনেকের নাম পেয়েছি। রিমান্ডে তাদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করা হবে। আশা করছি জিজ্ঞাসাবাদে আমরা এই চক্রের বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবো। তারা ইতোপূর্বে অনেক অস্ত্র ও গুলি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করেছেন। তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমরা পুনরায় অভিযান পরিচালনার জন্য চেষ্টা করবো। আমাদের ধারণা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ও কক্সবাজারের বড় কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকতে পারে।
ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে এত বড় অস্ত্রের চালান নিয়ে আসতে পারা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে চারজন এসেছেন তারা আলাদাভাবে এসে এখানে মিলিত হয়েছেন। তবে অবশ্যই এটা হুমকি তো বটেই। অস্ত্রগুলো বড় ধরনের কোনো অপরাধ সংগঠিত করার জন্য ব্যবহার করা হতে পারতো। যেটা আমাদের জন্য বড় হুমকি।
তারা কতজনের কাছে এখন পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই ব্যবসা করে আসছেন। আমরা সবগুলো বিষয় সামনে রেখে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবো। আমরা আশা করছি জিজ্ঞাসাবাদে এসব নাম পাবো।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। গ্রেফতারের সময় অস্ত্রগুলো তাদের ব্যাগের মধ্যে ছিল। তিনজনের কাছে আমরা অস্ত্রগুলো পেয়েছি, আরেকজনের কাছে গুলি পেয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২১
এমএমআই/এমআরএ