ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হত্যা-ধর্ষণ মামলায় সহায়তা পাবেন না আত্মসমর্পণকারী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২১
হত্যা-ধর্ষণ মামলায় সহায়তা পাবেন না আত্মসমর্পণকারী

রামপাল (বাগেরহাট) থেকে: আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মধ্যে যাদের হত্যা ও ধর্ষণ মামলা রয়েছে, তারা সেই সব মামলার বিষয়ে কোনো আইনগত সহযোগিতা পাবেন না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

তিনি বলেন, এ দুটি খুবই জঘন্য ও গর্হিত অপরাধ।

যদি কোনো নারী ধর্ষিত হয়ে থাকেন, সেই নারীর বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। জলদস্যুদের এ দুটি অপরাধ ছাড়া বাকি সব ধরনের অপরাধের বিষয়ে নমনীয় হবো।

সোমবার (১ নভেস্বর) দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবসের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আত্মসমর্পণকৃতদের পুনর্বাসন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন।

সুন্দরবন দিবসের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মাঝে ১০২টি ঘর, ৯০টি মুদি দোকান (মালামালসহ), ১২টি জাল ও মাছ ধরার নৌকা, ৮টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং ২২৮টি গবাদিপশু (বাছুরসহ) উপহার দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ২০১৬ সালে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণে সরকার সাড়া দেয় এবং বিনাশর্তে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও তাদের কাছে যে অস্ত্রসস্ত্র ছিল সেগুলোও র‍্যাবের কাছে হস্তান্তর করে। বেআইনি অস্ত্রের জন্য আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুরা জেলে যায়, এরপর তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে সহযোগিতা করা হয়।

আইজিপি বলেন, সুন্দরবনে জলদস্যুমুক্ত করতে র‍্যাব একটি সাঁড়াশি অভিযান চালায়। এরপর ২০১৬ সালের প্রথম দিকে একাধিক অভিযান চালানো হয়। তখন শহীদ কর্নেল আজাদ আমাকে বলেন—এই জলদস্যু র‍্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চায়। সাংবাদিক মোহসিনুল হাকিম সুন্দরবন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন। সাংবাদিক মোহসিনুল হাকিমের সঙ্গে জলদস্যুদের যোগাযোগ ছিল। অভিযানে তখন অনেক জলদস্যুর র‍্যাবের সঙ্গে গোলাগুলি হচ্ছিল, জলদস্যুরা মারা যাচ্ছিল। তখন এই জলদস্যুরা চাপের মুখে আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয় সাংবাদিক মোহসিনুল হাকিম। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে নির্দেশনা দেন। এরপরই র‍্যাব ২০১৬ সালে প্রথম জলদস্যু আত্মসমর্পণ করাতে সমর্থ হয়।

বেনজীর আহমেদ বলেন, শুধু আত্মসমর্পণ করলেই হবে না, জলদস্যুদের সমাজে পুনর্বাসনের একটি বিষয় ছিল। আত্মসমর্পণের পরে প্রধানমন্ত্রী জলদস্যুদের মাঝে অর্থ সাহায্য দিয়েছেন। আবার পুনর্বাসন করলেই হবে না, সমাজের মূলধারায় পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জ ছিল। যারা আত্মসমর্পণ করেছে তারা কী কারণে জলদস্যু হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের একটি করে গল্প আছে। সাংবাদিক ভাইয়েরা চাইলে সেই সমস্ত গল্প পাতার পর পাতা লিখতে পারেন।

আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুরা দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করেছেন জানিয়ে আইজিপি বলেন, এতদিন ধরে জলদস্যুতা করলেও তদের থাকার একটি ঘর ছিল না। কিছু করে খাওয়ার মতো তাদের সামর্থ্য ছিল না। আত্মসমর্পণকৃত ৩২৮ জন জলদস্যুর মধ্যে মাত্র একজন ডাকাতের অর্থবিত্তের সন্ধান আমরা পেয়েছিলাম। বাকি কারোরই কোনো সামর্থ্য ছিল না। কারণ, এই জলদস্যুদের কেন্দ্র করে বিশাল একটি সুবিধাভোগী চক্র গড়ে উঠেছিল।

পুলিশপ্রধান বলেন, আমি যখন র‍্যাব ডিজি ছিলাম, তখন এই অঞ্চলে চারটি র‍্যাবের ক্যাম্প বানানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। কারণ চারটি ক্যাম্প বানানোর মতো জায়গা এখানে পাইনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আমরা পারিনি। দুবলার চরে র‍্যাবের একটি ক্যাম্প আছে। সেখানে তিনদিন থাকলে শরীরের ওপর দুই ইঞ্চি লবনের প্রলেপ পড়ে যায়। এছাড়া যে পরিমাণ তাপ সেখানে দায়িত্ব পালন করা খুবই কষ্টসাধ্য।

জলদস্যুমুক্ত হওয়ার পরে সুন্দরবনে হরিণ বেড়েছে ও বাঘের সংখ্যাও বেড়েছে। এটির বহুমুখী প্রতিফলন তৈরি হয়েছে বলে জানান আইজিপি। সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ নিধন না করার জন্য জেলেদের প্রতি অনুবাধ জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২১
এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।