ঢাকা, সোমবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আড়াই বছর পর মাকে ফিরে পেলেন সন্তানরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২১
আড়াই বছর পর মাকে ফিরে পেলেন সন্তানরা

পিরোজপুর: ঢাকার মিরপুর থেকে হারিয়ে যাওয়ার আড়াই বছর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আরিফুর রহমান আরিফের ভাইরাল করা পোস্টের কল্যাণে মাকে ফিরে পেলেন ছেলে দুলাল মিয়া, হানিফ মিয়া ও নাজমা।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) সকালে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানা বলদিয়া ইউনিয়নের বিন্না গ্রামে স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল বাহাদুরের আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় মা সন্তানদের দেখা হয়।

সন্তানদের  ফিরে পেয়ে ৬৫ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন মা আবেগাপ্লুত হয়ে ছেলেকে ও মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলে-মেয়েরা তাদের মাকে ফিরে পেয়ে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত শতাধিক নারী-পুরুষের চোখের পানি চলে আসে।

জানা যায়, প্রায় আড়াই বছর আগে (২৮/০৮/২০১৯ তারিখে) ঢাকার মিরপুরে ছেলেদের কাছে থাকা অবস্থায় হারিয়ে যান মানসিক ভারসাম্যহীন মা অজুফা বেগম। ছেলেরা অনেক খোঁজাখুজি করে, মাইকিং করে, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, ফেসবুকে প্রচার করেও আর মায়ের খোঁজ পায়নি দুলাল মিয়া। এদিকে মা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় এতোদিন কোথায় ছিলেন তা কেউ বলতে পারেন না। তবে এক মাস আগে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানার বিন্না বাজারে তাকে ঘুরতে দেখে লোকজন স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল মেম্বারকে জানান। তিনি ১ নম্বর বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করে ইউনিয়ন পরিষদের ত্রাণ তহবিল থেকে চাল দিয়ে একটি বাড়িতে তার আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং অন্যান্য খরচ পরিচালনা করতে থাকেন।

গত ২১ নভেম্বর উক্ত গ্রামে কর্মরত আলী হায়দার মল্লিক আব্দুল্লাহ নামে এক এনজিও কর্মী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আরিফুর রহমান আরিফের সঙ্গে উক্ত ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনি উদ্ধারকৃত বৃদ্ধার একটি ছবি ও ভিডিও নিয়ে তার নিজের ফেসবুক আইডিতে, নিজের পেজে, শতাধিক পাবলিক ও প্রাইভেট গ্রুপগুলোতে ছড়িয়ে দিয়ে ভাইরাল করেন এবং অজুফা বেগমের একটি ভিডিও আপলোড করেন। দেশে-বিদেশে ভাইরাল হয় ভিডিওটি। ওই ভিডিওর সূত্র ধরে অজুফা বেগমের নিজ জেলা কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার চর বেতাল গ্রামের কয়েকজন যোগাযোগ করেন অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমানের সঙ্গে। তারপর তারা ছেলে দুলালকে জানান গত ২২ নভেম্বর। তারপর ছেলে-মেয়ে লঞ্চে ২৩ নভেম্বর নেছারাবাদের বিন্না গ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য ও মাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে আড়াই বছর পর ছেলে-মেয়ে তার মাকে ফিরে পেয়েছে, তাতে আমার অনেক আনন্দ লাগছে। মা সন্তান জীবিত থেকেও দেখা করতে না পারার এই বিচ্ছেদ যেন যুগ যুগ অতিক্রম না করে তাই আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাপক পরিসরে প্রাপ্তি স্বীকার নিউজটি প্রচার করি। অবশেষে আল্লাহ আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করেছেন।

দুলাল মিয়া বাংলানিউজকে জানান, কোনোদিন ভাবিনি আমার মা'কে দেখতে পাবো। আল্লাহ আমাদের সহায় হয়েছে, আল্লার কাছে শুকরিয়া।

দুলাল মিয়ার বোন নাজমা বেগম বাংলানিউজকে জানান, আমি সব সময় বলতাম একদিন আমার মা ফিরে আসবে। আল্লাহ আমার ডাক কবুল করেছেন। আমরা আমার মাকে অ্যাডভোকেট আরিফ স্যারের কল্যাণে ফিরে পেয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।