ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

এবার ডিজিটাল ডাস্টবিন বানালেন সাংবাদিক মোস্তফা কামাল

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২১
এবার ডিজিটাল ডাস্টবিন বানালেন সাংবাদিক মোস্তফা কামাল ডিজিটাল ডাস্টবিন

সিরাজগঞ্জ: সাংবাদিক মোস্তফা কামাল। সিরাজগঞ্জ থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক যমুনা প্রবাহ’র সম্পাদক ও প্রকাশক।

২৩ বছর ধরে দক্ষতার সঙ্গে পত্রিকা সম্পাদনা করে আসছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি লোহা-লক্কড় নিয়ে গবেষণা তার নেশা। আর সেই নেশা থেকেই এবার উদ্ভাবন করেছেন ডিজিটাল ডাস্টবিন। “নগর সাফ সৌধ” নামে এ ডাস্টবিন পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছেন সিরাজগঞ্জ পৌরসভা মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা।  

এর আগে মোস্তফা কামাল সম্পূর্ণ বাংলাদেশি নকশায় দেশীয় গাড়ি তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের সাসপেনশনযুক্ত মৌলিক নকশার দু’টি গাড়ির চ্যাসিস তৈরি করেছেন। এর একটি ১৮০০ সিসির, অন্যটি ১৪০০ সিসির। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অটো মোবাইল ক্লাবের অটো মায়েস্ত্রো টিমের সদস্যরা পরিদর্শন শেষে তার গাড়ির ভূয়সী প্রশংসা করেছে।  

মোস্তফা কামালের প্রিয় প্রতিষ্ঠান দৈনিক যমুনা প্রবাহ পত্রিকা অফিসের দ্বিতীয় তলায় গড়ে তুলেছেন “তারা মোটর ও শিল্পযন্ত্র প্রকৌশল সংস্থা”। এখানেই নগর সাফ সৌধ মেশিনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।  



জানা যায়, এ ডাস্টবিনটি ১ থেকে ৩ হর্স ইলেকট্রিক মোটরে চালিত গিয়ার সিস্টেমে পরিচালিত হবে। মেশিনের স্বয়ংক্রিয় কার্যাবলী স্টিলরোপ ও স্টিল চেইনের দ্বারা এবং বিভিন্ন ধরনের স্প্রিং, পুল ও গিয়ারের মাধ্যমে করা হয়েছে। যার কারণে মেশিনটির রক্ষণাবেক্ষণ অনেক সহজ এবং টেকসই। মূল মেশিনটির ওজন প্রায় দেড় টন।  

এটি নগর পরিষ্কার করা একেবারে সহজ করে দেবে। একজন মাত্র কর্মী একটি ড্রাম ট্রাক নিয়ে অতি দ্রুত শহরের সমস্ত আবর্জনা অপসারণ করতে পারবেন। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব স্বয়ংক্রিয় নগর পরিষ্কার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এ মেশিনটি।

মেশিনটি দেখতে দৃষ্টিনন্দন একটি টাওয়ারের মতো। যার চূড়ায় ঘড়ি ও দুদিকে দুটি বৈদ্যুতিক বাতি রয়েছে। মেশিনটি রাস্তার পাশে বা মধ্যে আইল্যান্ডে স্থাপনের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। এর মূল কাঠামোর প্রস্থ ৩ ফুট ও দৈর্ঘ্য ৫ ফুট আর উচ্চতা ১৪ ফুট। ময়লা রাখার বাক্সটিকে ১৪ ফুট উঁচু কাঠামোর মধ্যে এমনভাবে বসানো হয়েছে, যাতে এটি ওপর থেকে নিচে চলাচল করতে পারে। ময়লার বাক্সটি সব সময় নিচে নামানো থাকে। বাক্সটির মুখ মানুষের মাথার উচ্চতায় এবং দুটি ঢাকনা দিয়ে এর মুখ বন্ধ থাকে। টাওয়ারের দুপাশে দৃষ্টিনন্দন হাতলযুক্ত চার ধাপের সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়ির ওপরের ধাপের সঙ্গে ময়লা রাখার বাক্সের ঢাকনাটি স্টিলের তার দ্বারা সংযুক্ত রয়েছে। শেষ ধাপের সিঁড়িটিতে ৩০ কেজি ওজনের চাপ দিলেই ঢাকনাটি খুলে যাবে এবং ময়লা ফেলার পর সেখান থেকে নেমে এলেই ঢাকনা বন্ধ হয়ে যাবে। ঢাকনা বন্ধ থাকার কারণে ময়লা আবর্জনা পাখির দ্বারা ছড়ানো বন্ধ হয়ে যায় এবং ময়লার দুর্গন্ধও ছড়ায় না।

ময়লার বাক্সটি উঁচু কাঠামোর ওপর থেকে স্টিল রোপ দিয়ে আটকানো রয়েছে। স্টিল রোপটি বিভিন্ন পুলির মাধ্যমে দিক পরিবর্তন করে সিঁড়ির নিচে বসানো মোটর সংযুক্ত গিয়ার বক্সের সঙ্গে যুক্ত নাটাইয়ে লাগানো হয়েছে। নাটাই ঘোরানোর মাধ্যমে এ বাক্সটিকে ওপরে নিচে ওঠানো নামানো যায়। বাক্স ভর্তি ময়লা ড্রাম ট্রাকে ঢেলে দেবার জন্য মোটর চালু করলে এটি ১২ ফুট ওপরে উঠে কাঠামোর দুপাশে বিশেষভাবে লাগানো ক্যাম্প ও নিচে লাগানো চেইন দ্বারা পরিচালিত ধাক্কা দেওয়ার লিভারের মাধ্যমে বাক্সটিকে কাত করে ময়লা ট্রাকে ঢেলে দেবে। ১০ মণেরও বেশি আবর্জনা উঁচুতে উঠিয়ে ড্রাম ট্রাকে ঢেলে দিতে পারবে। ময়লা ট্রাকে ফেলে দেওয়ার জন্য বাক্সটি চালানোর সুইচবোর্ড সিঁড়ির নিচে তালাবদ্ধ জায়গায় রাখা আছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তালা খুলে সুইচ দিয়ে এ যন্ত্রটি পরিচালনা করবেন।



এ মেশিনের উদ্ভাবক ‘‘তারা মোটর ও শিল্পযন্ত্র প্রকৌশল সংস্থা”র প্রোপাইটর এবং দৈনিক যমুনা প্রবাহর সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, প্রায় ছয়/সাত মাস আগে ভাসানী কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমার পায়ে ডাস্টবিনের নোংরা লেগে যায়। ওই ডাস্টবিনের দুপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ময়লা থাকতে দেখা যায়। আর এ থেকেই আমার মাথায় ডিজিটাল ডাস্টবিন স্থাপনের ভাবনাটি আসে। দীর্ঘ ছয় মাসের প্রচেষ্টায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে পৌরসভার উদ্যোগে ভাসানী কলেজের সামনে একটি ডাস্টবিন স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়াও ছোট-বড় আরো ৪টি ডিজিটাল ডাস্টবিন সিরাজগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপনের জন্য তৈরির অর্ডার দিয়েছে সিরাজগঞ্জ পৌরসভা। এ ডাস্টবিনটিতে ১ বছরের গ্যারান্টি এবং ৫ বছরের সার্ভিসিং সুবিধা দেওয়া হবে।  

সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা বলেন, এটি একটি ডিজিটাল ডাস্টবিন। মেশিন দ্বারা এর ময়লা অপসারণ করা হবে। এ ডাস্টবিনের মুখে ঢাকনা থাকার কারণে দুর্গন্ধ ছড়াবে না। আশপাশের পরিবেশও বিনষ্ট করবে না। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে মুজিব সড়কস্থ ভাসানী কলেজের সামনে এ ডাস্টবিনটি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। সফল হলে আরও বেশ কয়েকটি স্থানে এ ডাস্টবিন স্থাপন করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।