ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ পৌষ ১৪৩১, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নতুন ইঞ্জিনের ট্রায়াল ট্রিপে ছিল পোড়া লঞ্চটি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
নতুন ইঞ্জিনের ট্রায়াল ট্রিপে ছিল পোড়া লঞ্চটি

ঝালকাঠি: অনুমতি না নিয়ে ইঞ্জিন বদলেছেন এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক। আগে এ লঞ্চে ৫৫০ হর্স পাওয়ারের দু’টি ইঞ্জিন থাকলেও তা পাল্টে ৭২০ হর্স পাওয়ারের দু’টি ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে।

নতুন ইঞ্জিন লাগানোর পর লঞ্চটির দ্বিতীয় যাত্রা গত শুক্রবার। এটিকে ‘ট্রায়াল ট্রিপ’ (পরীক্ষামূলক যাত্রা) বলা যায়।

আগুন লাগলে তা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সে বিষয়ে লঞ্চের কর্মীদের প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকলেও তা কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেটিও জানেন না লঞ্চের কর্মীরা। ফলে চলন্ত অবস্থায় লঞ্চে আগুন লাগলে হয় পানিতে ঝাঁপ দিতে হবে, নয় তো উদ্ধারকারীদের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।  

ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, লঞ্চের কর্মীদের অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা নেই। এমনকি লঞ্চ ডুবে গেলে যাত্রীরা কীভাবে জীবন রক্ষাকারী বয়া (পানিতে ভেসে থাকার সরঞ্জাম) ব্যবহার করবেন, সে সম্পর্কেও তারা ভালোভাবে জানেন না। আর বেশির ভাগ লঞ্চের মধ্যে বয়া এত শক্ত করে বাঁধা থাকে যে এগুলো প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করার মতো অবস্থা থাকে না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্য অনুযায়ী, সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে ২২১টির মতো যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অনুমতি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৮৫টি লঞ্চ ঢাকা থেকে ছাড়ে।

সদরঘাট টার্মিনালে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মচারীদের জন্য অগ্নি মহড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর মালিকরা আবেদন না করলে লঞ্চের কর্মীদের জন্য অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ বা মহড়ার ব্যবস্থা ফায়ার সার্ভিস করে না। গত দুই বছরের মধ্যে শুধু ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলা এমভি মানামী লঞ্চে একবার অগ্নিমহড়া করা হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়।

নৌ অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধের মূল দায়িত্ব ঢাকার শ্যামপুরের বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাটে অবস্থিত ‘রিভার ফায়ার স্টেশন’– এর। বিশেষ এ ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা মালেক মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড যাতে না ঘটে, সে জন্য তারা সচেতনতামূলক প্রচার চালালেও কোনো মহড়া বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন না।

অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুমের সঙ্গেই ছিল রান্না ঘর। নিয়ম না মেনে সেখানে রান্না ঘর স্থাপন করা হয়।  



এ বিষয়ে সুন্দরবন-১১ লঞ্চের চালক আবদুস সালাম মৃধা বলেন, বড় লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে রান্না ঘরের দূরত্ব বেশি থাকলেও ছোট আকৃতির লঞ্চগুলোতে রান্না ঘর একদম লাগানো থাকে। রান্নার কাজে ব্যবহার করা গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

নৌপরিবহন অধিদপ্তর সূত্র বলছে, এমভি অভিযান–১০ লঞ্চের মালিক অনুমতি না নিয়ে লঞ্চের ইঞ্জিন বদলেছেন। আগে এ লঞ্চে ৫৫০ হর্স পাওয়ারের দু’টি ইঞ্জিন থাকলেও তা পাল্টে ৭২০ হর্স পাওয়ারের দু’টি ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে। নতুন ইঞ্জিন লাগানোর পর লঞ্চটির দ্বিতীয় যাত্রা শুক্রবার। এটিকে ‘ট্রায়াল ট্রিপ’ (পরীক্ষামূলক যাত্রা) বলা যায়।

তবে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাট টার্মিনাল ছাড়ার আগে বিআইডব্লিউটিএ যে ‘চেক লিস্ট’ তৈরি করেছিল তাতে বলা হয়েছিল, লঞ্চে কোনো ত্রুটি নেই। চেক লিস্ট অনুযায়ী, লঞ্চের যাত্রী ধারণক্ষমতা দিবাভাগে ৭৫০ জন, যা রাতে ৪২০ জন। তবে লঞ্চ ছাড়ার আগে ২৫ জন স্টাফসহ যাত্রী সংখ্যা ৩১০ জন উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে যাত্রী ছিল অনেক বেশি। লঞ্চে ১২৫টি বয়া এবং ২০টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকার কথা। তবে আগুন লাগার পর অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। বয়াগুলোও পুড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার ভোরে ঝালকাঠি সদর থানায় মামলাটি হয়েছে। পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল গ্রামের গ্রামপুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন একটি অপমৃত্যু মামলা (২৯/২১) দায়ের করেছেন। আইন অনুযায়ী নৌ দুর্ঘটনা বিষয়ক সব মামলা নৌ আদালতে দায়ের হতে হবে। নৌ আদালতে মামলার বাদী হবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক। রোববার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত নৌ আদালতে কোনো মামলা হয়নি বলে জানান নৌ আদালতের প্রসিকিউটিং অফিসার মুন্সী মো. বেল্লাল হোসাইন।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোর রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামে লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় ৩৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন শতাধিক। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। নিহতের বেশিরভাগই বরগুনার বাসিন্দা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।