ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শাহীন হত্যাকাণ্ড: কিলিং মিশনে ছিল আরও একাধিক ব্যক্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
শাহীন হত্যাকাণ্ড: কিলিং মিশনে ছিল আরও একাধিক ব্যক্তি

ফেনী: ফেনীর পরশুরামে আলোচিত শাহীন হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হতে পারেন আরও একাধিক ব্যক্তি।

নিহত শাহীন চৌধুরীর (৪৮) পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টোসহ ৬ জনের নামোল্লেখ করে মামলা হলেও শাহীনকে বেধড়ক মারধরে উপস্থিত ছিল ১৫ থেকে ২০ জন।



নিহত শাহীনের বড় ভাই পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত উপ পরিদর্শক আবদুল মতিন চৌধুরী অভিযোগ করেন, শাহীনকে বেধড়ক মারধরে অংশ নেয় ছাত্রলীগ নেতা আবদুল আহাদ চৌধুরী, মির্জানগর ইউপি দুই নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শাখাওয়াত হোসেন রুবেল, চেয়ারম্যান ভূট্টোর বেয়াই জামাল উদ্দিন ও তার ভাই ফরিদ উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন।

মামলা বহির্ভূত এসব ব্যক্তিদের আসামি না করার কারন প্রসঙ্গে মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী জানান, তাৎক্ষণিক যাদের নাম শুনেছি এবং জেনেছি তাদের আসামি করেছি। এখন আরও অনেকের নাম বেরিয়ে আসছে। পুলিশকে আমি ও আমার ভাসুর আসামিদের নাম বলেছি। কিন্তু প্রধান আসামি হাসেম ও ভুট্টো চেয়ারম্যানকে এখনও পুলিশ গ্রেফতার করে হয়নি।  

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত শাহীনের ভাতিজা জয়নাল আবেদীন চৌধুরী এ মামলার অন্যতম সাক্ষী।  

তিনি জানান, হামলার সময় ভুট্টো চেয়ারম্যানসহ ১৫ থেকে ২০ জন উপস্থিত ছিল। এ বিষয়ে পুলিশকে জানিয়েছি।  

শাহীনকে বাঁচানোর ব্যর্থচেষ্টা প্রসঙ্গে তিনি জানান, উল্লেখিত আসামিরা ছাড়াও রুবেল মেম্বারসহ একাধিক ব্যক্তি এলোপাথাড়ি শাহীনকে মারধর করতে থাকেন।

উল্লেখ্য, নিহত শাহীন ও জয়নাল স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু বকর ছিদ্দিক ওরফে বাবুল কন্ট্রাক্টরের প্রাণী খাদ্য বিক্রি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। বাবুল কন্ট্রাক্টর অভিযোগ করেন, শাহীনের ওপর বর্বর হামলায় ছিল ছাত্রলীগ পরিচয় দানকারী আবদুল আহাদ।

নিজ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া আদায় করতে গিয়ে শাহীন হত্যায় বিমর্ষ বাবুল কন্ট্রাক্টর। তিনি বলেন, সেদিন অভিযুক্ত হাশেম পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। টাকা না দেওয়ায় স্থানীয় বাজারে শাহীনের সঙ্গে তার কথাকাটি হয়। হাশেম আমাকে ফোনে ক্ষোভ প্রকাশ করলে শান্ত থাকতে বলি এবং আমি ঢাকা হতে ফেনী এলে এ বিষয়ে আলাপ করবো। কিন্তু তারা আমার কথা না শুনে দোকানে এসে হামলা করে এবং বর্বরভাবে শাহীনকে মারধর করে। ফেনী এসে জেনেছি এ হামলায় অনেকজন ছিল।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে আবদুল আহাদ চৌধুরী ও শাখাওয়াত হোসেন রুবেলকে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। একটি সূত্র দাবি করে, তারা জেলার বাইরে অবস্থান করছে।

এ প্রসঙ্গে পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ হোসেন বলেন, বাদী ৬ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। এখন প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণ ও তদন্তের ভিত্তিতে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

অপরদিকে অর্থাভাবে নিহত শাহীনের স্কুলপড়ুয়া দুই মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়েছে আগেই। ছোট ছেলে স্কুল পড়ুয়া। বাবুল কন্ট্রাক্টরের দোকানের ম্যানেজার হিসেবে যতটুকু পেতেন তা দিয়ে ভরণপোষণ চলা দায়। মাটির মেঝের দুই কক্ষের ঘরের ভাঙা বেড়া অভাবের মাত্রা নির্দেশ করছে। তবে, সততা তাকে কখনো ছেড়ে যায়নি।

এ প্রসঙ্গে শাহীনের চাকরিদাতা বাবুল কন্ট্রাক্টর বলেন, প্রায় দুই দশক আমার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছে তিনি। কখনো এক টাকারও গড়মিল দেখিনি। অথচ অভাবের তাড়নায় দোকানের পার্শ্ববর্তী দারুল উলুম এতিমখানায় মাঝেমধ্যে বিনামূল্যের খাবার খেতেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও শাহীনের সহকর্মী জয়নাল আবেদীন চৌধুরী বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রতি তিনি ছিলেন অকৃত্রিম আন্তরিক। বকেয়া আদায় করতে গিয়ে জীবন দিলেন তিনি।

নিহতের ছোট ভাই দিদারুল আলম চৌধুরী ও নিহতের স্ত্রী জানান, শাহীনের কোনো সঞ্চয় নেই। সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবে তা এখন মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর হয়ে পড়ছে।

উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে মির্জানগর ইউনিয়নের উত্তর বাজার এলাকার সাবেক মেম্বার বাবুলের দোকানে শাহীনকে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।