ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

যৌথ পরিবারে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
যৌথ পরিবারে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে: প্রধানমন্ত্রী ফাইল ফটো।

ঢাকা: পড়াশোনায় অমনযোগী শিক্ষার্থীদের শুধু বকাঝকা না করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্রমবর্ধমান একক পরিবারের কারণে শিশুর বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং যৌথ পরিবারে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে বলেও মনে করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) এক ভিডিও কনফারেন্সে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

শিক্ষক-অভিভাবকদের শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের দেশে অনেকে এ বিষয়ে সচেতন না। অনেক সময় বাচ্চারা পড়তে পারে না বা পড়া দিলে দেখা যাচ্ছে, সে পড়তে পারছে না। অথবা তার মনোযোগ নেই বা সে পড়াশোনার দিকে খেয়ালই করতে পারছে না। শিক্ষক কি বলছে, শুনছে না। তখন বলা হয় যে সে অমনোযোগী, তাকে হয়তো মারধর করা হয় অথবা ধমক দেওয়া হয়, বকাঝকা করা হয়। ’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টা কিন্তু তা না। এটা এক ধরনের প্রতিবন্ধিতা। এটা হচ্ছে অন্য ধরনের একটা সিনড্রোম। কাজেই এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। কেন সে এটা করতে পারছে না বা কি কারণে পারছে না। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমনও দেখা গেছে যে, অনেক বাচ্চারা পড়তে গেলে তারা দেখে যে অক্ষরগুলো জায়গায় নেই। অক্ষরগুলো নড়াচড়া করছে। এটা কিন্তু এক ধরনের মানসিক সমস্যা। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে আমরা একেবারেই সচেতন না। আমাদের অভিভাবকরাও সচেতন না, শিক্ষকরা সচেতন না। কাজেই শিক্ষকদের এই সচেতনতাটা একান্তভাবে প্রয়োজন। ’

‘আবার অনেকে দেখা যায় যে একটা বিষয়ে খুবই ভালো, কিন্তু তাকে একটু ধমক দিলে সে আর পড়তে পারে না, আর লিখতে পারে না। সে মনোযোগ দিতে পারে না। নার্ভাস হয়ে যায়। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই দুই লাখ শিক্ষককে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমি মনে করি প্রত্যেক শিক্ষকের এ বিষয়ে সচেতন করা উচিত। ’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি বলবো না যে প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন মানসিক বিশেষজ্ঞ রাখতে হবে, সেটা সম্ভব না। কিন্তু প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে মানসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে অন্তত শিক্ষার্থীদের একটা পরীক্ষা নেওয়া দরকার, যে কার ভেতরে কি ধরনের সমস্যাটা আছে। ’

‘শুধু ধমক দেওয়া বা বকাঝকা করা নয়। শিক্ষার্থীদের অবস্থাটা বুঝে তাদের সঙ্গে সেভাবেই আচরণ করতে হবে। বাবা-মা, শিক্ষক বা বন্ধু-বান্ধব সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ’

যৌথ পরিবারে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে

একক পরিবারের কারণে শিক্ষার্থীদের মানসিক জটিলতা বাড়ার এবং যৌথ পরিবারের সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় আমাদের পরিবারগুলো যৌথ পরিবার ছিল। কোনো সমস্যা হলে যৌথ পরিবারের মধ্যে আরও অনেক বাচ্চাদের সঙ্গে হেসে-খেলে এগুলো ঠিক হয়ে যেতো। ’

‘কিন্তু এখন সবাই একক পরিবার হয়ে গেছে। হয়তো পরিবারে একটা বাচ্চা বা দুইটা বাচ্চা। বাবা-মা দুজনেই ব্যস্ত। বাচ্চাদের সময় দেওয়া যাচ্ছে না। যাদের একটু আর্থিক স্বচ্ছলতা আছে, তাদের বাচ্চারা ওই টেলিভিশন আর মোবাইল ফোন নিয়েই সময় কাটায়। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু গ্রামে এই সমস্যাটা অতো দেখা যায় না। তারা মাঠে ঘাটে হেসে-খেলে বেড়াতে পারে। কিন্তু শহরে আজকাল সব এককভাবে থাকতে যেয়ে তাদের চলাফেরা, পোশাক-পরিচ্ছদ এই দিকে এত বেশি সচেতন হয়ে পড়ে, বাচ্চাদের চাহিদার দিকে হয়তো নজর দিতে পারে না। ভাবে, কিছু টাকা-পয়সা হাতে ধরিয়ে দিলে বা একটা মোবাইল ফোন দিয়ে দিলেই দায়িত্ব পালন হয়ে গেল। বিষয়টা কিন্তু সেটা না। ’

‘বাচ্চারাও তাদের সাথী চায় এবং বাবা-মাকে সেই সাথী হতে হবে। তাদের অন্তত সবার সঙ্গে মেশার সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যটা ভালো হয়, উদার হয়, অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে শিখে। অর্থাৎ সবার সঙ্গে যেন মিশে চলতে পারে, সেভাবেই শিক্ষা দেওয়া উচিত। ’

সরকার শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি- বিষয় দুটির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আরও দুটি বিষয়ের ওপর নজর দিয়েছি। একটা হচ্ছে পুষ্টি বিষয়ের ওপর সচেতনতা। ... আমি মনে করি যখন বাবা-মা খাবারের ব্যবস্থা করবেন, তারা পুষ্টির দিকটা লক্ষ্য করবেন। শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যাতে তারা আমাদের ছেলেমেয়েদের পুষ্টি নিয়ে সচেতন করে, শিক্ষা দেয়। ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ শিক্ষক এবং কর্মকর্তাকে পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ২ লাখ শিক্ষককে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ’

পড়াশোনাটা শুধু পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ না রেখে মানবিক মানুষ হওয়ার শিক্ষা গ্রহণের তাগিদ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘শিক্ষাটা শুধু একগাদা পাঠ্যপুস্তক পড়ে যে শিক্ষা, সে শিক্ষা না। শিক্ষাটা পরিবেশ সম্পর্কে, মানবিক সম্পর্কে, শিক্ষাটা সবার সঙ্গে চলার একটা শিক্ষা, সেটাই সবাইকে  দিতে হবে। সেভাবেই সবাইকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করছি। ’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল)।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
এমইউএম/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।