ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

একই কেমিক্যাল, লেবেল পরিবর্তনে দাম হয়ে যায় দ্বিগুণ!

সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২২
একই কেমিক্যাল, লেবেল পরিবর্তনে দাম হয়ে যায় দ্বিগুণ!

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের অরুণ হালদার। চাকরি করতেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় (এসএসএস) একজন মাঠকর্মী হিসেবে।

চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি আরএমসি কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের এডমিক্সার কংক্রিটের টাঙ্গাইলের ডিলার হন। এরপর থেকে আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অধিক লাভের আশায় এক হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের এডমিক্সার কংক্রিটগুলোর ড্রামে শুধু লেবেল (স্টিকার) পরিবর্তন করে দুই হাজার ৮০০ টাকায় বাজারে বিক্রি করে অল্প দিনেই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, অরুন হালদার আরএমসি কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের এডমিক্সার কংক্রিটের টাঙ্গাইলের ডিলার হিসেবে শহরের আদালতপাড়া এলাকায় একটি গোডাউন ভাড়া নেন। সেই গোডাউন থেকেই টাঙ্গাইলসহ ময়মনসিংহ ও জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায় বহুতল ভবনের নির্মাণকাজে ও বিভিন্ন দোকানে এই এডমিক্সারগুলো পাইকারি ও খুচরা দামে বিক্রি করে করেন।  

এছাড়া ডালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত এক হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের এডমিক্সার কংক্রিটের এডিকন প্লাস নামের একটি ড্রামে প্লাস্টারের কাজে ব্যবহৃত প্লাস্ট-১০০-এর লেবেল (স্টিকার) লাগিয়ে তা দুই হাজার ৮০০ টাকা মূল্যে বিক্রি করেন।

সম্প্রতি শহরের বেলটিয়াবাড়ি এলাকায় ফারুক মিয়া নামে এক ব্যক্তি তার ভবনের কাজ করার সময় বিষয়টি নজরে আসে। এরপরই অরুণ হালদারের প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ পায়।

ফারুক মিয়া জানান, বাসা-বাড়ি ও কনস্ট্রাকশন কাজে কংক্রিটের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য এডমিক্সার ব্যবহার করা হয়। ঢালাইয়ের কাজে এডিকন প্লাস ও প্লাস্টারের কাজে প্লাস্ট-১০০ ব্যবহার হয়ে থাকে। এই দুইটিই অরুণ হালদারের কাছে অর্ডার করা হয়। পরে সাপ্লাইম্যান নাসিরের মাধ্যমে এডিকন প্লাস ও প্লাস্ট-১০০ তার বাসায় পাঠান। কাজ করার সময় প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ দুইটি ড্রামে একই ধরণের পণ্য থাকার বিষয়টি দেখতে পান। এরপর সাপ্লাইম্যান নাসিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অরুণ হালদারের প্রতারণার বিষয়টি তাদের কাছে স্বীকার করেন।

ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ জানান, কনস্ট্রাশনের কাজ করার জন্য তিনি অরুণ হালদারের কাছে দুইটি এডমিক্সার অর্ডার করেন। পরে সাপ্লাইম্যান নাসিরের মাধম্যে তার কাছে পাঠানো হয়। সন্দেহ হলে সবার সামনে ড্রাম দুইটি খোলার পর দেখা যায়, দুইটি ড্রামের মধ্যেই একই কেমিক্যাল। তখন দেখে বুঝতে পারেন শুধু লেবেল পরিবর্তন করা হয়েছে। ভেতরের কেমিক্যাল একই। পরে নাসিরকে চাপ দিলে বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছেন এতে তার (নাসির) কোনো দোষ নেই। অরুণ হালদার অনেকদিন ধরেই এ কাজ করে আসছেন। তিনি ১৮০০ টাকার কেমিক্যালে শুধু লেবেল পরিবর্তন করে ২৮০০ টাকা বিক্রি করেন। এতে প্রতিটি কেমিক্যালে তার এক হাজার টাকা করে লাভ হচ্ছে।
সাপ্লাইম্যান মো. নাসির জানান, অরুণ দীর্ঘদিন ধরেই কেমিক্যালে লেবেল পরিবর্তন করে অনেক মানুষের সঙ্গে প্রতারণ করে আসছেন। এটা তিনি দেখেছেন। এ নিয়ে তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। পরবর্তীকালে বেলটিয়াবাড়ির একটি সাইটে বিষয়টি প্রমাণিত হয়। সেখানে লেবেল পরিবর্তনের কারণে তাকে আটক করে রাখা হয়েছিল।

অভিযুক্ত অরুণ হালদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মোবাইলে তিনি জানান, এই মিস্টেকটা তাদের না। কোম্পানি থেকেই একই ড্রাম আসে, শুধু লেবেল পরিবর্তন হয়ে। এটা এখানে পরিবর্তন করার কোনো প্রশ্নই আসে না। এরপর লেভেল পরিবর্তনের ভিডিওর কথা জানানো হলে আর কোনো জবাব না দিয়ে ফোন কেটে দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।