ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বিহারীপল্লীতে গ্যাংয়ের আধিপত্যের জেরে খুন হন জাহিদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
বিহারীপল্লীতে গ্যাংয়ের আধিপত্যের জেরে খুন হন জাহিদ

ঢাকা: গাঁজা সেবন ও গ্যাং গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের জেরেই পল্লবীর সি ব্লকের কাঁচাবাজার পেঁয়াজ পট্টি এলাকায় নৃশংসভাবে জাহিদকে হত্যা করেন ইফরান ওরফে ডামরু ও তার সহযোগীরা।

শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত পল্লবী, নারায়ণগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত চার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার চারজন হলেন, সিনিয়র গ্যাং গ্রুপের লিডার মো. ইফরান ওরফে ডামরু (২৪), তার সহযোগী ডলার হোসেন ওরফে ডলার (২৫), রাজা হোসেন (২২) ও মো. কোরবার (২৫)।

রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

এর আগে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা ১০ মিনিটে পল্লবী থানাধীন ব্লক-সি, কাঁচাবাজার পেঁয়াজ পট্টি এলাকায় গ্যাং গ্রুপের আধিপত্যের জেরে জাহিদ হাসানকে হত্যা করা হয়। পরদিন নিহত জাহিদের বাবা হানিফ খাঁন বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নিহত জাহিদ পল্লবী থানাধীন বেনারশী পল্লী এলাকায় সপরিবারে বসবাস করতেন। তিনি পেশায় ছিলেন বাসচালক। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে যানবাহন চলাচল সীমিত হওয়ায় পেশা পরিবর্তন করে মাছ ব্যবসা শুরু করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক কন্যা সন্তানের জনক।

অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, ঘটনার পর র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত পল্লবী, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত  আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, মূলত সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্ব ও গাঁজা সেবনকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। জাহিদ ও গ্রেফতার ব্যক্তিরা একই এলাকার বাসিন্দা। এলাকাটি ননবাঙালি বিহারী ক্যাম্প (জল্লা ক্যাম্প, মুসলিম ক্যাম্প ও মিল্লাত ক্যাম্প) এর আওতাধীন। ওই এলাকায় মাদকের অপব্যবহারসহ গ্যাং কালচারের প্রবণতা রয়েছে। এলাকায় সিনিয়র গ্রুপ ও  জুনিয়র গ্রুপ নামে দুটি গ্রুপ রয়েছে। যারা এলাকায় চুরি-ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসায় করে থাকেন। গ্রুপ দুটি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সার্বক্ষণিক দাঙ্গা-হাঙ্গামাও করে।  জাহিদ জুনিয়র গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং গ্রেফতার আসামিরা সিনিয়র গ্রুপের সদস্য।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় প্রথমে জুনিয়র গ্রুপ ও সিনিয়র গ্রুপের ইমরান আলীর সঙ্গে মাদক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বাগ-বিতণ্ডা হলে জুনিয়র গ্রুপের ৫/৬ জন সদস্য ইমরানকে থাপ্পড় মারে। এ খবর জানতে পেরে সিনিয়র গ্রুপের প্রধান ইফরান ওরফে ডামরু ও ডলারের নেতৃত্বে রাতে সিনিয়র গ্রুপের ১৫/১৬ জন সদস্য দেশীয় অস্ত্র (ছুরি, সুইস গিয়ার, হকিস্টিক, এসএস পাইপ, লোহার রড) নিয়ে কাঁচাবাজারের পেঁয়াজ পট্টি এলাকায় অবস্থানরত জুনিয়র গ্রুপের ৫/৬ জনের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করেন। এ সময়  মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মিঠুন, কামরান, ডলার, রাজা ও কোরবানসহ আরও কয়েকজন হকিস্টিক, এসএস পাইপ এবং রড দিয়ে ভিকটিম জাহিদসহ অন্যান্যদের ওপর হামলা করেন।

মিঠুন, ডলার ও কামরানের এলোপাতাড়ি আঘাতে জাহিদ ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে মামলার প্রধান আসামি ইফরান ও ডামরু তার হাতে থাকা ধারালো সুইস গিয়ার (চাকু) দিয়ে ভিকটিমের পেটে ছুরিকাঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং নাড়িভুড়ি বের হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।

সংবাদ সম্মলনে আরও জানানো হয়, ঘটনাস্থলে ভিকটিম জাহিদ ছাড়াও জুনিয়র গ্রুপের সদস্য কামরান এবং হাসান গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন জাহিদসহ আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। আহতদের মধ্যে জাহিদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে পরবর্তীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রেফতার ইফরান রাজধানীর পল্লবী থানাধীন জল্লাক্যাম্পে বসবাস করেন। তিনি জুতার কারখানায় কাজ করলেও এলাকায় সিনিয়র গ্রুপের নেতৃত্ব স্থানীয় সদস্য হিসেবে প্রকাশ্যে চুরি-ছিনতাই এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। তিনি নিজেও মাদকসেবী। মূলত মাদকের অর্থ যোগানের জন্য নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত হন তিনি। গ্রেফতার ডলার রাজধানীর পল্লবী থানাধীন জল্লাক্যাম্পে বসবাস করেন। তিনি স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন এবং পরবর্তীতে একটি ডিমের দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। তিনি সিনিয়র গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য এবং মাদকসেবী।

গ্রেফতার রাজা হোসেন রাজধানীর পল্লবী থানাধীন মুসলিম ক্যাম্পে বসবাস করেন। তিনি স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ২০১৯ সালে বিএ পাস করেন ও একটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করেন। তিনি সিনিয়র গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য। গ্রেফতার কোরবার, রাজধানীর পল্লবী থানাধীন জল্লাক্যাম্পে বসবাস করেন। তিনি মিষ্টির দোকানে কাজ করলেও এলাকায় সিনিয়র গ্রুপের সক্রিয় সদস্য এবং চুরি-ছিনতাই, এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। তিনিও মাদকসেবী। মূলত মাদকের অর্থ যোগানের জন্য বিভিন্ন অপকর্মে করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, ভুক্তভোগী জাহিদের নামে কোনো মামলা বা জিডি নেই। তিনি ওদের সঙ্গে মেলামেশা করলেও কোনো অপরাধে জড়িত না। পলাতক আসামি ও জুনিয়র গ্রুপের সদস্যদের গ্রেফতারে অনুসন্ধান চালাচ্ছে র‌্যাব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।