ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী এখন বিলুপ্তির পথে

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৭ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২২
ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী এখন বিলুপ্তির পথে বাঁশের তৈরি পণ্য

বরগুনা: দিন দিন বাঁশের তৈরি পণ্যের কদর কমে যাওয়ায় ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্প। বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব বাঁশ শিল্পের সঙ্গে সদর উপজেলার খেজুরতলা,কুমড়াখালী,হেলুবুনিয়া,খাজুরা গ্রামের ২১টি পরিবারের নারী ও পুরুষ বাঁশ শিল্প কারিগরদের ভাগ্যে নেমে এসছে চরম দুর্দিন।

আগে মানুষ গৃহস্থালি,কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা হলেও আধুনিক জীবনধারায় প্লাস্টিকের ব্যবহারে তা এখন বিলুপ্তির পথে।  

কালের পরিবর্তের সঙ্গে সঙ্গে বাঁশের তৈরি পণ্য বিশেষ আর চোখে পড়ে না। অপ্রতুল ব্যবহার আর বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাঁশ শিল্প আজ হুমকির মুখে। এসব বাঁশের তৈরি সামগ্রী বাচ্চাদের দোলনা, পাখা, কুলা, চালনীসহ বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্র গ্রামঞ্চলে বিস্তার ছিল।  

যে বাঁশ একসময় ৮০ থেকে ১০০ টাকায় পাওয়া যেত সেই বাঁশ বর্তমান বাজারে কিনতে হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। বাঁশের দাম যেমন বেড়েছে সেই পরিমাণ বাড়েনি এসব পণ্যের দাম। চাহিদা অনুযায়ী বাঁশের উৎপাদন কম থাকার কারণে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ ঘর বাড়ি নির্মাণে প্রয়োজনমতো বাঁশের ঝাড় বৃদ্ধি হচ্ছে না।  

খাজুরতলা গ্রামের বড়বাবু ও অপেন দাস জানায়, তাদের গ্রামে প্রায় ১৩টি পরিবার এ কাজে নিয়োজিত আছে। অতি কষ্টে বাঁশ শিল্প টিকিয়ে রাখতে ধার দেনা ও বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে কোনো রকম বাপ দাদার পেশা ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি।

প্রবীণরা বলছেন, জনপদে চাষ হতো বাঁশ, যা দিয়ে তৈরি হতো নিত্যদিনের গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত আসবাব পত্র। তবে এখনো মাঝে মধ্যে গ্রামীণ উৎসব ও মেলাগুলোতে বাঁশ ও বেতজাত শিল্পীদের তৈরি খোল, চাটাই, খলুই, ধামা, টোনা, পাল্লা, মোড়া, বুক সেল্ফ চোখে পড়ে।

পৌরসভাসহ এ উপজেলা ১০ টি ইউনিয়নে ৫০০-এর ওপরে পরিবার এ পেশায় সম্পৃক্ত ছিল। বাঁশ-বেত দিয়ে তারা তৈরি করতো গৃহস্থালী ও সৌখিন নানা পণ্যসামগ্রী। এসব বিক্রি করেই চলতো তাদের জীবনযাপন। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্ষুদ্র এ পেশাজীবীদের অধিকাংশ এখন আদি পেশা বদল করে কৃষিসহ নানা পেশায় যুক্ত হয়েছেন।  

দেবাশীষ রায় কারিগর বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন সমিতি থেকে বেশি সুদ দিয়ে টাকা নিয়ে কোনো রকমে টিকে আছি। আমাদের এই শিল্পটির উন্নতির জন্য সরকারিভাবে যদি অল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয় তাহলে এই শিল্পটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামিয়া শারমিন বাংলানিউজকে বলেন, ঐতিহ্য ও এসব ক্ষুদ্র পেশাজীবীদের পুর্নবহালের জন্য আপাতত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকল্প বা সহযোগিতা নেই। তবে, এসব বিষয়ে যথাযথ সহায়তা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২২
এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।