ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

দূরত্ব হার মানলো প্রেমের কাছে, ইন্দো তরুণী এখন বাংলাদেশি বধূ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২২
দূরত্ব হার মানলো প্রেমের কাছে, ইন্দো তরুণী এখন বাংলাদেশি বধূ

লক্ষ্মীপুর: ইন্দোনেশিয়ার দিপক শহরের মেয়ে ফানিয়া আয়ু এপ্রিলিয়া (২৭)। চাকরি করতেন একটি কল সেন্টারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয়েছে বাংলাদেশের ছেলে মো. মিজানুর রহমান রাসেলের (২৯)। ফেসবুক মেসেঞ্জারে শুরু তাদের কথোপকথন। সেখান থেকেই পরিচয়, প্রণয় এবং প্রেম।  

ভৌগলিকভাবে দুইজনের দূরত্ব ৭ হাজার কিলোমিটার হলেও মনের দূরত্ব ছিল না বিন্দু পরিমাণও। দুই বছরের প্রচেষ্টায় ভৌগোলিক দূরত্ব জয় করে এখন মিজানুরের ঘরে পা রেখেছেন ইন্দো মেয়ে এপ্রিলিয়া। আর এসেই দুদিন পর বসে পড়েন বিয়ের পিঁড়িতে।  

বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে বাংলাদেশি রীতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয় তাদের। এর আগে, আদালতের মাধ্যমে এভিডেভিড করে নিয়েছেন তারা।  

মিজানুর রহমানের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাখালিয়া গ্রামে। তিনি ব্যবসায়ী মনির হোসেনের বড় ছেলে। মিজানুর থাকেন গাজীপুরে, সেখানে পোশাক তৈরি শিল্পে বায়িং সেকশনে কর্মরত আছেন।  

মিজানুরের পরিবার বিদেশি মেয়েকে বৌ হিসেবে পেয়ে উচ্ছ্বসিত। আত্মীয় স্বজনেরাও ছুটে আসে তাকে দেখার জন্য। আর পুরো বিষয়টি নিয়ে আনন্দিত বিদেশিনী এপ্রিলিয়া ও তার পরিবার।  

বুধবার (৯ মার্চ) বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, নববধূর সাজে সজ্জিত এপ্রিলিয়াকে দেখতে এসে ভিড় জমাচ্ছে এলাকার লোকজন। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে অনেকে তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। এপ্রিলিয়া বাংলা ভাষা বুঝা বা অনর্গল কথা বলতে না পারলেও কয়েকটি বাংলা শব্দ এরই মধ্যে আয়ত্ব করে নিয়েছেন। আর বিষয়টি খুব আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেছেন তিনি। ভিডিও কলের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়াতে থাকা তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলো।

মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রায় ৪ বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেজবুকে এপ্রিলিয়াকে দেখে বন্ধু হতে রিকোয়েস্ট পাঠান তিনি। তিনদিনের মাথায় সেটি গ্রহণ করে ইন্দোনেশি মেয়েটি। এরপর ম্যাসেঞ্জারে ‘হাই-হ্যালো’ দিয়ে যোগাযোগ শুরু হয় তাদের। আস্তে আস্তে সম্পর্ক খুব গভীরে গিয়ে পৌঁছায়। ভিডিও কলে দেখা দেখিসহ দুইজনের পারিবারিক সকল বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা হতো তাদের। এভাবে দুই বছর পার হওয়ার পর একজন আরেকজনকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। নিজেদের মধ্যে কোনো শঙ্কা না থাকলেও দুই পরিবারের মধ্যে প্রথমে কিছুটা আপত্তি ছিল। তবে সেটিও দূর করা সম্ভব হয়েছে। তাদের সম্পর্ক দুই পরিবার মেনে নেওয়ায় বিয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন তারা। তবে বিয়েতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দু'দেশের ভৌগোলিক দূরত্ব।

মিজানুর আরও বলেন, আমি একটি গার্মেন্সের বায়িং সেকশনে চাকরি করি। পর্যাপ্ত ছুটি না থাকায় আমি ইন্দোনেশিয়াতে যেতে পারিনি। তাই আমি এপ্রিলিয়াকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানাই। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে সে বাংলাদেশে চলে আসে। তবে এক্ষেত্রে তার চাকরিটি ছেড়ে দিতে হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, ৬ মার্চ রাত ১০টার দিকে এপ্রিলিয়া বাংলাদেশে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমবারের মতো আমার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ হয়। পরদিন (৭ মার্চ) ভোরে লক্ষ্মীপুরের গ্রামের বাড়ি আসি। দুই পরিবারের সম্মতিতে এভিডেভিড এর মাধ্যমে বিয়ের কাগজপত্র ঠিকঠাক করে নিই। বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতিতে ঘরোয়া পরিবেশ বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।  

মিজানুরের বাবা মো. মনির হোসেন হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দুই লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে তাদের বিয়ে হয়েছে। বিদেশি মেয়েকে বৌ হিসেবে পেয়ে আমরা আনন্দিত। আশাকরি আমার ছেলে তাকে নিয়ে সুখী হবে।  

মিজানুরের মামা মাসুদ মিয়া ও আলম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ভাগিনা মিজানুর একজন বিদেশি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে। তাকে বিয়ে করার বিষয়ে পারিবারিকভাবে আলোচনা করলে আমরা সমর্থন দিই। অবশেষে তারা দুইজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা সকলে আনন্দিত।  

জানতে চাইলে এপ্রিলিয়া ইংরেজিতে বাংলানিউজকে বলেন, আমি খুব আনন্দিত। এ দেশের মানুষ এবং তাদের ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ের মধ্যেই সবাই আমাকে খুব আপন করে নিয়েছে। আর আমি স্বামী হিসেবে যাকে পেয়েছি, সেও খুব ভালো মনের মানুষ। তার পরিবারে সকল সদস্যকে আমার ভালো লেগেছে।

বাংলাদেশে নাগরিকত্ব নিয়ে থেকে যাওয়ার বিষয়ে এপ্রিলিয়া বলেন, আমি আমার দেশ এবং পরিবারকে খুব ভালোবাসি। তবে বাংলাদেশেও থাকার ইচ্ছে আছে। দীর্ঘদিনের জন্য না থাকলেও মাঝে মধ্যে এসে থাকবো।

এপ্রিলিয়ার স্বামী মিজানুর রহমান বলেন, এপ্রিলিয়া তিন মাসের ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসেছে। আপাতত দেড় মাসের মতো এদেশে থাকবে। এরপর আবার ইন্দোনেশিয়াতে ফিরে যাবে। আমাদের বিয়ের কাগজপত্র এবং সকল ডকুমেন্টস দুই দেশের হাইকমিশনে জমা দেব। সে যেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেতে পারে। আশাকরি ভবিষ্যতে এপ্রিলিয়া এ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে। সে যেন সহজে নাগরিকত্ব পায় এবং আমরা যেন দাম্পত্য জীবনে সুখী হই, সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রত্যাশী।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।