ঠাকুরগাঁও: সয়াবিন তেলের দামে এখন আগুন।  ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে তেলের দাম।

ফোঁটা ফোঁটা তেলে পরোটা ভাজার এমন দৃশ্য দেখতে হোটেলটিতে ভিড়ও জমাচ্ছেন স্থানীয়রা।

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সয়াবিন, পাম, সূর্যমুখী, রাইস ব্র্যানসহ নানা রকমের ভোজ্যতেল পাওয়া যায়।  সহজলভ্য ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে এসব তেলের মধ্যে সয়াবিন সবচেয়ে জনপ্রিয়। সম্প্রতি সেই সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষসহ অনেক হোটেল ব্যবসায়ীরা।

আন্তর্জাতিক বাজার দর বিবেচনায় নিয়ে গত ০৬ ফেব্রুয়ারি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে ৮ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ মূল্য ১৬৮ টাকা, ৫ লিটারের বোতলের দাম ৭৯৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই দর চললেও সম্প্রতি তেলের মিলার ও ডিলাররা সয়াবিনের দাম বাড়ানোর দাবি তোলেন। কিন্তু আসন্ন পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে সে প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি সরকার। তারপর থেকেই হঠাৎ বাজারে তেলের সরবরাহ কমে যায়। আর এতেই বেড়ে যায় সয়াবিন তেলের দাম। সংকট ও বাড়তি দামের কারণে অনেকেই সয়াবিন তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছেন।

এ পরিস্থিতিতে আবার এখন বোতলের গায়ের মূল্য তুলে দিয়ে অনেক ব্যবসায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। পাম তেল বিক্রি করছেন ১৭০ টাকায়।

হোটেল ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ তার স্ত্রী ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ছোট খাবার হোটেল পরিচালনা করেন। প্রতিদিন সেখানে পরোটা, ভাতসহ নানান রকম খাবার পাওয়া যায়।  


আব্দুল হামিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছোট একটি খাবার হোটেল। হোটেলটি দিয়েই চলে আমার সংসার। কিন্তু হঠাৎ করে তেলের দাম বেড়ে প্রায় আগুন। এদিকে গ্রামের মানুষ বেশি দাম দিয়ে পরোটা-ভাজি খেতে চায় না। যে কারণে বোতলে স্যালাইনের নল লাগিয়ে ফোঁটা ফোঁটা তেলে পরোটা বানাচ্ছি। যেন তেল সাশ্রয়ের কারণে পরোটা আগের দামেই বিক্রি করা যায় আর বিক্রিও না কমে।  

তিনি বলেন, এভাবে যদি জিনিসের দাম বাড়তে থাকে, তবে হয়তো এক সময় আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ গ্রামের মানুষ চড়া দামে কোনো কিছু কিনতে চায় না।

আব্দুল হামিদের স্ত্রী মনিরা বেগম জানান, হঠাৎ করে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের হোটেলে দু’দিন পরোটা ভাজা বন্ধ ছিল। পরে কীভাবে তেল সাশ্রয় করে পরোটা ভাজা যায়, সেই ভাবনা থেকে বোতলে নল লাগিয়ে ফোঁটা ফোঁটা তেল দিয়ে পরোটা ভাজা শুরু করেন তার স্বামী আব্দুল হামিদ।

এ ব্যাপারে আবদুল হামিদ আরও বলেন, প্রতিদিন আমাদের হোটেলে প্রায় ৫০০ পরোটা ভাজা হয়। সেসব পরোটা ভাজতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লিটার তেল লাগে। তবে স্যালাইনের নল দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় তেল ব্যবহার করার কারণে ১ লিটার তেল কম যাচ্ছে। এতে তেল সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে পরোটা আগের দামেই বিক্রি করতে পারছি। বিক্রিও কমেনি।  

সকালে হোটেলটিতে নাস্তা খেতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিনই এই হোটেলটিতে নাস্তা খাই। হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ায় অনেক জায়গায় পরোটা-ভাজির দাম বেড়েছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে ফোঁটা ফোঁটা তেলে পরোটা ভাজার এই কৌশলটা বের করেন হামিদ চাচা। এতে তার হোটেলে সাশ্রয় হচ্ছে তেল।  ফলে পরোটার দাম আগের মতোই রাখতে পারছেন তিনি। তাতে আমাদেরও উপকার হয়েছে, বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে না।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শেখ সাদি বাংলানিউজকে বলেন, তেলের সংকট সাময়িক তেলের সরবরাহ কম হলেও কিছু দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত তদারকি করছি।  

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করছে। সরকারের দেওয়া নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি কেউ সয়াবিন তেল বিক্রি করলে তার নামে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তেলের অপচয় রোধে সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২২
এসআরএস