ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

লালপুরে পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা, প্রেমিকাসহ আটক ৩ 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
লালপুরে পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা, প্রেমিকাসহ আটক ৩  আটকরা।

নাটোর: নাটোরের লালপুরে ত্রিভুজ পরকীয়া প্রেমের কারণে জুয়েল হোসেন নামে এক যুবককে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রেমিকাসহ তিনজন। এ ঘটনায় প্রেমিকাসহ অভিযুক্ত তিনজনকেই আটক করা হয়েছে।

 

একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দেশীয় অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।

শুক্রবার (১১ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার সময় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা।  

এসময় সাংবাদিকদের সামনে আটকদের হাজির করা হয়। নিহত জুয়েল লালপুর উপজেলার দিলালপুর গ্রামের সাকেম প্রামাণিকের ছেলে। আটক সেলিনা, মেহেদী হাসান লিটন ও সৎ ছেলে মেহেদী হাসান একই এলাকার বাসিন্দা।  

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ৪ মার্চ সকালে লালপুর উপজেলার দিলালপুর গ্রামের গম ক্ষেত থেকে হাত-পায়ের রগ কাটা ও কুপিয়ে জখম করা জুয়েল নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেটি আসলে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ত্রিভুজ পরকীয়া
প্রেমের কারণে জুয়েলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় প্রেমিকা সেলিনা ও অপর প্রেমিক মেহেদীসহ তিনজনকে আটকের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, জুয়েলের মরদেহ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি মোবাইল ফোন আলামত হিসেবে পাওয়া যায়। ওই মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বিকেলে নিহত জুয়েলের প্রেমিকা সেলিনা বেগমকে লালপুর এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতে অভিযান চালিয়ে মেহেদী হাসান লিটন ও মেহেদী হাসান নামে আরও দুইজনকে আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

পরে তার দেওয়া জবানবন্দিতে জানা যায়, সেলিনা বেগম সম্পর্কে জুয়েলের চাচি। সেলিনার সঙ্গে মেহেদী হাসান লিটন ও জুয়েল হোসেনের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। সেলিনার সৎ ছেলে মেহেদী হাসান ঘটনা জানতে পেরে জুয়েলকে তাদের বাড়িতে যাতায়াত করতে নিষেধ করেন। কিন্তু জুয়েল তাদের কথা মানতে নারাজ। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সেলিনা, মেহেদী হাসান লিটন ও সৎ ছেলে মেহেদী হাসান হত্যার পরিকল্পনা করেন জুয়েলকে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩ মার্চ (বৃহস্পতিবার) দিনগত রাতে সেলিনার আরেক প্রেমিক মেহেদী হাসান লিটন ও সৎ ছেলে মেহেদী হাসান মোবাইল ফোনে জুয়েলকে ডেকে নেয়। পরে তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে।  

একপর্যায়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার হাত-পায়ের রগ কেটে ফেলে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে বিষয়টি ধামা চাপা দিতে রাতেই পার্শ্ববর্তী মাঠে একটি গম ক্ষেতে তাকে ফেলে রেখে আসে।  

৪ মার্চ (শুক্রবার) সকালে ওই গম ক্ষেত থেকে রক্তাক্ত জখম ও অচেতন অবস্থায় জুয়েলকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে লারপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা সাকেম প্রামাণিক বাদী হয়ে লালপুর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারে মাঠে নামেন।  

পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার (০৩ মার্চ) দিনগত রাত ১০টা পর্যন্ত জুয়েল দিলালপুর বাজারে ক্যারাম বোর্ড খেলে। খেলা শেষে চা খেয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পথে প্রেমিকার ফোন পেয়ে দেখা করতে গিয়েছিলেন জুয়েল। সেখানে প্রেমিকা ও তার অপর প্রেমিকের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন তিনি।  
 
পুলিশ সুপার আরও বলেন, নিহত জুয়েলের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। একই সঙ্গে মোবাইল ট্র্যাকিং করে প্রথমে সেলিনা, পরে আরও দুইজনকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল হত্যাকাণ্ডের আসল কারণ জানা যায়। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রক্রিয়া শেষে তাদের আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে। সেখানকার কার্যক্রম শেষ করে তাদের জেলা কারাগারে পাঠানো হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।