ঢাকা, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

প্রেমিকের কথায় ‘পথের কাঁটা’ সরাতে ২ ছেলেকে হত্যা করেন লিমা!

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
প্রেমিকের কথায় ‘পথের কাঁটা’ সরাতে ২ ছেলেকে হত্যা করেন লিমা!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: জ্বরের সিরাপ নয়, মায়ের দেওয়া বিষেই প্রাণ গেছে ইয়াসিন (৭) ও মুরসালিন (৫) নামে দুই শিশুর। স্থানীয় একটি চালকলে কাজ করার সুবাদে চাতাল শ্রমিক সরদার সফিউল্লাহর সঙ্গে পরিচয় মা লিমা বেগমের।

 

পরিচয়ের সূত্র ধরে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের এ অবৈধ সম্পর্কের পথের কাঁটা দুই সন্তান। এজন্য প্রেমিকের পরামর্শে পথের কাঁটা দূর করতে মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে নিজের হাতেই ছেলেদের খাওয়ান লিমা। পড়ে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সিরাপের নাটক সাজানো হয়।  

এ ঘটনায় শিশুটির স্বজন ও এলাকাবাসী মা লিমা ও তার প্রেমিকসসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

নিহত শিশু দু’টির বাবা ইসমাইল হোসেন সুজন বলেন, আমি সিলেটে কাজে যাওয়ার আগে আমার স্ত্রীকে একটি মোবাইল ফোনের সিম দিয়ে যাই। আমি যাবার পরপরই আমার সিমটি পরিবর্তন করে চাতাল সরদার সফিউল্লাহর দেওয়া সিম ব্যবহার করতে থাকে লিমা। তখন থেকেই তার আচার আচরণে আমার কিছুটা সন্দেহ হয়। তবে প্রথম দিকে সিরাপ খেয়ে মৃত্যুর বিষয়টা সত্য মনে হলেও পরে তার আচার আচরণে আমাদের সন্দেহ দানা বাধে। একপর্যায়ে নিজেই স্বীকার করে যে প্রেমিক সফিউল্লাহর দেওয়া বিষ মিশিয়ে সন্তানদের হত্যা করেছে সে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, ঘটনার পর বাড়িতে এসে শিশুটির মায়ের আচার আচরণ দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

শিশুদের চাচাতো দাদা ফজলুল করিম বলেন, আমার ভাতিজা (সুজন) এমনিতেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লিমা এক বছর ধরে চাতাল সরদারের সঙ্গে পরকীয়া করে আসছে। তার পরকীয়ার কারণে অবুঝ দুই শিশুর মৃত্যু হলো। আমরা লিমা ও সফিউল্লাহসহ এ হত্যায় জড়িত সবার ফাঁসি চাই।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, ঘটনার পর থেকেই শিশু দু’টির মায়ের আচার আচরণ সন্দেহজনক ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি মিষ্টিতে বিষ মিশিয়ে ছেলে দু’টিকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

এ ঘটনায় বুধবার দিনগত রাত ১টায় লিমা বেগমকে উপজেলার দুর্গাপুরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রাতেই শিশু দু’টির মা, সফিউল্লাহ ও অজ্ঞাত আরও দু’জনকে আসামি করে ইসমাইল হোসেন সুজন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

গ্রেফতারকৃত লিমা বেগম বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট-২য় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।  

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দুপুর থেকেই মুরসালিন ও ইয়াসিনের জ্বর ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিশুদের মা লিমা বেগম তার শাশুড়িকে বাড়ির পাশের দুর্গাপুর বাজারে মাঈন উদ্দিনের ওষুধের দোকান “মা ফার্মেসি” থেকে সিরাপ আনতে বলেন। শিশুদের দাদি সিরাপ এনে লিমার কাছে দেন। এসময় লিমা তার ছেলেদের সিরাপ সেবন করান। এর কিছুক্ষণ পরই দুই শিশুই বমি করতে শুরু করে এবং অস্বস্তি বোধ করতে থাকে। অবস্থার অবনতি হলে তাদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে শিশু দু’টিকে জেলা সদর হাসাপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। বাড়িতে নিয়ে আসার পর রাত ৯টায় ইয়াসিন খানের মৃত্যু হয়। আর রাত সাড়ে ১০টায় ছোট ভাই মুরসালিনেরও মৃত্যু হয়। এতোদিন লিমা ছেলেদের মৃত্যুর জন্য সিরাপকে দায়ী করে আসছিলেন। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও সিরাপে ক্ষতিকর কিছু মেলেনি।  

আরও পড়ুন: 
জ্বরের সিরাপ খেয়ে ২ ভাইয়ের মৃত্যুর অভিযোগ
দুই ভাইয়ের মৃত্যু: জ্বরের সিরাপ পরীক্ষার নির্দেশ
সিরাপ নয়, বিষ খাওয়ায়ে ২ সন্তান হত্যা, মা গ্রেফতার

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।