ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সড়কের কাজে ধীরগতি, দুর্ভোগে যাত্রীরা

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
সড়কের কাজে ধীরগতি, দুর্ভোগে যাত্রীরা

বরগুনা: বরগুনার আমতলী-তালতলী আঞ্চলিক সড়ক পুনঃনির্মাণে সড়কটি খুঁড়ে ফেলে রাখার কারণে ধুলাবালুতে ভোগান্তিতে রয়েছেন দুইপাশে বসবাসরত স্থানীয় এলাকাবাসী ও পথচারী।

সোমবার( ২৮ মার্চ) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সড়কের ইটের সুরকি ও বালু বাতাসে উড়ে দোকানপাট ও বসত বাড়িতে গিয়ে পড়ছে।

অন্যদিকে রাস্তার ধুলার কারণে এলাকাবাসীর দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায় তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, আমতলী-তালতলী-ফকিরহাট পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওই আঞ্চলিক সড়কটি দিয়ে সোনাকাটা ইকোপার্ক ও শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে মানুষ যাওয়াত করে। ওই সড়কটিতে আমতলীর মানিকঝুড়ি বাজার থেকে কচুপাত্রা বাজার পর্যন্ত ও কচুপাত্রা বাজার থেকে তালতলী তিন রাস্তা বটতলা পর্যন্ত মিনি পুকুর এবং ১৫ থেকে ২০ গজ দূরত্বে বড় বড় খানাখন্দ থাকায় ওই দুটি ট্যুরিস্ট স্পটে পর্যটকদের ভ্রমণ প্রায় চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

উন্নয়ন কার্যক্রমের নামে সড়কটি খুঁড়ে কাজ না করায় সড়কে ধুলাবালুতে বিষিয়ে উঠেছে পরিবেশ। এ ছাড়াও ওই সড়ক দিয়ে দু’উপজেলার সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শত শত শিক্ষার্থী চলাচল করে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সড়ক নির্মাণ কাজে ধীরগতির কারণে শুষ্ক আবহাওয়ায় বাতাসে ধুলাবালুতে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পথচারীরা শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।  

অপরদিকে ওই সড়কটির আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর ওপর ১৯৮৫ সালে স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ একটি স্টিলের বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে। দীর্ঘদিন ওই ব্রিজটি সংস্কার না করায় নড়বড়ে হয়ে যায়। কয়েকবার ব্রিজের পাটাতন ভেঙে তালতলী উপজেলার সঙ্গে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে খানাখন্দ ও নড়বড়ে ব্রিজের কারণে গত চার বছর ধরে এখানে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই খানাখন্দ সড়ক ও ব্রিজ পার হয়ে ছোট ও মাঝারি যানবাহনে দু’উপজেলার অন্তত আড়াই লাখ মানুষ যাতায়াত করে।  

দু’উপজেলাবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘবে ২০- ২১ অর্থ বছরের অক্টোবর মাসে বার্ষিক জিওবি মেইনটেনেন্স প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩টি প্যাকেজে আমতলী উপজেলার মানিকঝুড়ি বাজার থেকে তালতলী উপজেলার কচুপাত্রা বাজার পর্যন্ত ৮ হাজার ৪০০ মিটার সড়ক পুনঃনির্মাণ এবং ওই সড়কের আমতলীর আড়পাঙ্গাশিয়া নদীতে আইবিআরপি প্রকল্পের আওতায় ৫ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭.৩ মিটার প্রস্থ্যের একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই সড়ক পুনঃনির্মাণের কার্যাদেশ পায় ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ এবং গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের কার্যাদেশ পায় টিএন অ্যান্ড এএসআই (জেভি) নামের ২টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বরগুনা বাস ও মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. ছগির মিয়া সড়ক ও ব্রিজটির নির্মাণ কাজ করছেন।

চলতি বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদার সড়ক পুনঃনির্মাণ ও ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। আমতলীর মানিকঝুড়ি বাজার থেকে কচুপাত্রা বাজার পর্যন্ত সড়কটিতে লাঙল দিয়ে খুঁড়ে ফেলে রেখেছে। এতে মানিকঝুড়ি বাজারের একাংশ, আড়পাঙ্গাশিয়া বাজার ও তারিকাটা এমপির বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ধুলা-বালুতে একাকার হয়ে যাচ্ছে।  
নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় দু’উপজেলার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এলেও দরপত্রানুসারে যথা সময়ে নির্মাণ কাজ শেষে হওয়া নিয়ে এখন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন ওই সড়ক দিয়ে চলাচলরত ভুক্তভোগীরা। সামনে বর্ষা মৌসুমে আমতলী- তালতলী সড়কপথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক মো. ইউসুফ আলী বলেন, প্রতিদিন ওই সড়কে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই দ্রুত সড়কের কাজ শেষ করার জোর দাবি জানাই।

বায়ু দূষণের বিষয় জানতে চাইলে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা. আব্দুল মুনয়েম সাদ বলেন, ক্ষতিকর উপাদান ও রোগজীবাণু মিশ্রিত ধুলাবালু মানবদেহে প্রবেশ করলে অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ হতে পারে।  
তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রেজবী উল কবির জোমাদ্দার বলেন, ঠিকাদারকে সড়কটির কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য আমি বরগুনা এজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।

আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন আমতলী-তালতলী আঞ্চলিক সড়কটি পুনঃনির্মাণের জন্য লাঙল দিয়ে খুঁড়ে ফেলে রাখা ও ব্রিজটির নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, সড়ক ও গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ দরপত্রানুসারে শুরু করে অজ্ঞাত কারণে ঠিকাদার ওই কাজ বন্ধ করে রেখেছেন। আশা করি যথা সময়েই ওই কাজ শেষ হবে এবং কাজ শেষ হলে দু’উপজেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে।  

সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণের ঠিকাদার মো. সগির হোসেন মুঠোফোনে সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণ কাজ ফেলে রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী সময়সীমার মধ্যে সড়ক ও ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।

বরগুনা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি মুঠোফোনে বলেন, আমি সম্প্রতি বরগুনায় যোগদান করেছি। আমি ওই সড়ক ও ব্রিজটির বিষয় যেন দ্রুত ঠিকাদারকে কাজ শুরু করার জন্য তাগিদ দেব এবং কার্যকরী ব্যবস্থা নেব।  

এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ মুঠোফোনে বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে সড়ক ও ব্রিজের কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২ 
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।