ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

অনুদানের টিকার মূল্য খরচের খাতায় কেন, প্রশ্ন টিআইবির

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২২
অনুদানের টিকার মূল্য খরচের খাতায় কেন, প্রশ্ন টিআইবির

ঢাকা: বিভিন্ন দেশ থেকে বিনামূল্যে অনুদান হিসেবে পাওয়া করোনা টিকার মূল্য নির্ধারণ কীসের ভিত্তিতে হয়েছে এবং কোন যুক্তিতে তা খরচ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, প্রশ্ন তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে টিকা ক্রয় ও বিতরণ বাবদ খরচের হিসাব আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

টিআইবির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মনজুর-ই-আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) এ প্রশ্ন তোলা হয়।

গত ১২ এপ্রিল ‘করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। ওই গবেষণা প্রতিবেদনের প্রতিবাদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ২৫ এপ্রিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে গবেষণার বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেন, যার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে টিআইবির এই বিজ্ঞপ্তিতে।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, মন্ত্রী প্রেস ব্রিফিংয়ে টিকা বাবদ সরকারের ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা নয়, প্রায় ২০ হাজার কোটি ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন; যা একদিকে তার আগের ঘোষণার সংশোধন এবং অন্যদিকে বাস্তবে টিআইবির বিশ্লেষণকেই যথার্থতা প্রদান করে। টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী টিকার ক্রয়মূল্য ও টিকা কার্যক্রমের প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ১২,৯৯৩-১৬,৭২১ কোটি টাকা, যা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষিত ৪০ হাজার কোটির অর্ধেকের কম। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই খরচ পূর্বে ৪০ হাজার কোটি টাকা প্রকাশ হয়েছিল বলেও মন্ত্রী সংবাদ ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, অনুদান হিসেবে যে টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে তার মূল্য যোগ করে তিনি মোট খরচ ৪০ হাজার কোটি উল্লেখ করেছিলেন। বিনামূল্যে অনুদান হিসেবে পাওয়া টিকা বাবদ কোন যুক্তিতে ও কীসের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করা হলো এবং কোন যুক্তিতে তা খরচ হিসেবে বিবেচিত হলো তা বোধগম্য নয়। টিআইবি আশা করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টিকা ক্রয় ও বিতরণ বাবদ খরচের হিসেব আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবে।

করোনা মোকাবিলায় সরকারের অর্জন বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে টিআইবি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, টিআইবি করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারের ইতিবাচক অর্জনসমূহ এর ধারাবাহিক গবেষণাসমূহে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছে, যা ওই গবেষণায়ও উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে টিআইবির বিরুদ্ধে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা বা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা, দেশের কোনো সফলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ইত্যাদি অভিযোগ আনার কোনো সুযোগ নেই।

টিআইবির গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সংস্থাটি ব্যাখ্যা দিয়েছে, বরাবরের মতো টিআইবির এই গবেষণায় জরিপ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান বিজ্ঞানে বহুল অনুসৃত মানদণ্ড ও চর্চা অনুসরণ করা হয়েছে। গবেষণায় বৈজ্ঞানিক মান ও পদ্ধতিগত উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমত, এই গবেষণায় ৮ বিভাগের ৪৩টি জেলায় নিয়োগকৃত মাঠ তথ্য সংগ্রহকারীরা স্থানীয় জনগণের সহায়তায় গবেষণায় উল্লিখিত সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ চিকিৎসা সেবা, নমুনা পরীক্ষা ও টিকা গ্রহণ করেছে এমন সেবাগ্রহীতাদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের মধ্যে থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১৮০০ জন সেবাগ্রহীতার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে।

সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় চিকিৎসা গ্রহণকালীন সময়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ না করে তাদের টেলিফোন নম্বর সংগ্রহ করে পরবর্তী সময়ে তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। পরিসংখ্যান বিজ্ঞানে টেলিফোন সাক্ষাৎকার একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। ফলে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে সঠিক তথ্য উঠে আসে না, এই অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই।

দ্বিতীয়ত, টেলিফোন সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি ৪৩টি জেলার ১০৫টি টিকাকেন্দ্র থেকে টিকা গ্রহণ করার পর টিকাকেন্দ্র থেকে বের হওয়ার সময় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪০১৫ জন টিকাগ্রহীতার টিকার নিবন্ধন ও টিকা গ্রহণের অভিজ্ঞতা বিষয়ে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার (এক্সিট পোল) গ্রহণ করা হয়েছ।

তৃতীয়ত, জরিপের পাশাপাশি সারাদেশের ৪৮টি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৬৭১ জন মানুষের কাছ থেকে গুণগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার সেবাগ্রহীতার মতামত নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া পরোক্ষ তথ্য হিসেবে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য এবং গণমাধ্যমে (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে তথ্য সংগ্রহ, পর্যালোচনা ও যাচাই বাছাই করে ব্যবহার করা হয়েছে এবং গবেষণায় ব্যবহৃত প্রতিটি তথ্যের সূত্র দেওয়া হয়েছে। গবেষণাকালীন সময়ে সংগৃহীত প্রতিটি তথ্য একাধিক উৎস থেকে সংগ্রহ করে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে এই গবেষণার ফলাফল সঠিক নয়, এমন অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই। বরং, এই গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লিখিত প্রতিটি তথ্য ও বিশ্লেষণ বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গবেষণা প্রতিবেদন আমলে নেওয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদও দিয়েছে টিআইবি। একই সঙ্গে মন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে তিনি অন্য যেসব বিষয়ে প্রতিবেদন নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণসহ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে তার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করার উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছে টিআইবি।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২২
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।