ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা করার দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, মে ১, ২০২২
শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা করার দাবি

ঢাকা: বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে মিল রেখে শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২০ হাজার টাকাসহ ৪ দফা দাবি জানিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।

রোববার (১ মে) সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়।



এর আগে মে দিবস উপলক্ষে পল্টন মোড় থেকে বিভিন্ন সংগঠনের র‍্যালি প্রেসক্লাবের সামনে এসে সমবেত হয়। সভা-সমাবেশ শেষ করে তারা আবার র‍্যালিগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে থেকে ঘুরে পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

এদিন মে দিবস উপলক্ষে প্রেসক্লাবের সামনে র‍্যালি নিয়ে আসেঃ জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন ও ন্যাশনাল ওয়াকার্স ইউনিটি সেন্টারসহ আরো অনেক সংগঠন।

তাদের দাবিগুলো: কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্মক্ষের নিশ্চিত করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু হলে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে হবে। আহতদের চিকিৎসা, ক্ষতিপুরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। পাটকল, চিনিকলসহ বন্ধ সব কলকারখানা চালু করতে হবে। ঠিকাদার ও আউট সোর্সিং ব্যবস্থা বাতিল করে স্থায়ী পদে অস্থায়ী নিয়ে বন্ধ করতে হবে। আই এল ও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুযায়ী অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ ধারাবাহিক।

লিখিত বক্তব্যে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আশিক আলম বলেন, লকডাউনে শ্রমিক কাজ ও আয় হারালেও মালিকরা পেয়েছে বিপুল সহায়তা। গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের হাজার হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শ্রমিক-জনগণের প্রতি যে দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল তা কার্যকরভাবে পালিত না হওয়ায় করোনা শ্রমজীবীদেরকে মহাদুর্ভোগে পতিত করেছে। একদিকে উৎপাদন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনের কথা বলে শ্রমিকদের কাজ করিয়েছে অন্যদিকে কারখানা বন্ধ, ছাঁটাই, লে-অফ, চাকরিচ্যুতির ঘটনাও ঘটেছে। অধিকার বঞ্চিত শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমে নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছে, জীবন ও রক্ত ঝরেছে। করোনাকালে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য কিছু প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনসমূহকে যুক্ত না করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের কর্মসূচির ফলে এসব প্রণোদনা করোনার আঘাত সামলে উঠতে শ্রমিক শ্রেণীকে তেমন সহায়তা করেনি।

তিনি আরও বলেন, এই করোনা দুর্যোগে গরির আরও গরিব হয়েছে আর ধনীর বেড়েছে ধনসম্পদ। বেকার কর্মহীনতা বেড়ে যাচ্ছে, খেটেখাওয়া মানুষের জীবন ও জীবিকার অনিশ্চয়তা বাড়ছে। বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণীর সামনেও আজ এক বিরাট চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হয়েছে। মজুরি কমছে, কর্ম সময় বাড়ছে আধুনিকায়নের নামে বেকারত্ব বাড়ার আশংকা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য শ্রমিক শ্রেণীকে এক কাতারে এসে দাঁড়িয়ে নিজের অধিকার সংরক্ষণ ও ভবিষ্যতের জন্য লাগাতার সংগ্রাম অগ্রসর করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে অধিকার অর্জনের সমান শক্তিশালী করা আজ সময়ের দাবি।

১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে সমাবেশের মাধ্যমে আন্দোলনের সূচনা ঘটে। কিন্তু বুর্জোয়া শ্রেণীর সরকারের পুলিশ ও গুণ্ডা বাহিনীর নির্মম দমন পীড়নের প্রতিবাদে ১ মে শ্রমিক ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘট চলাকালে পুলিশ ও বুর্জোয়াশ্রেণীর দালালদের অতর্কিত হামলায় নিহত হয় ছয় শ্রমিক এবং শত শত শ্রমিক আহত হয়।
এর প্রতিবাদে ৪ মে হে মার্কেটের সামনে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সভা চলাকালীন সময়ে পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত হন ৭ জন শ্রমিক এবং আহত হন অনেকে। ৮ ঘণ্টা শ্রম দিবসের ঐতিহাসিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে পুলিশ গ্রেফতার করে আগস্ট স্পাইজ, সীমফেল্ডেন, মাইকেল, জর্জ এঞ্জেল, এডলফ ফিশার, লুই নিংগ এবং অস্কার নেবে- এই ৭ শ্রমিক নেতাকে। প্রহসনমূলক বিচারে বুর্জোয়াশ্রেণী ও তাদের স্বার্থরক্ষাকারী সরকার ফাঁসির আদেশ দেয় শ্রমিক শ্রেণীর নির্ভীক, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বীর নেতা আগস্ট স্পাইজ, পারসন, ফিশার, জর্জ এঞ্জেলকে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২২
এমএমআই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।