ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আমাগোরে আবার দিবস কিসের?

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মে ১, ২০২২
আমাগোরে আবার দিবস কিসের? কথা বলছেন রিকশাচালক নূর মোহাম্মদ।

সিরাজগঞ্জ: এক দিন বাদেই ঈদুল ফিতর। অথচ নির্মাণ শ্রমিক আলাউদ্দিন এখনও তার তিন মেয়ের জন্য কিনতে পারেননি পোশাক।

সবার জন্যই কেনাকাটা করতে হবে। তাই মে দিবসেও কাজে এসেছেন তিনি।  

রোববার (১ মে) দুপুরে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার গোশালা মহল্লার একটি বাসায় কাজ করছিলেন তিনি। শহরের মালশাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা আলাউদ্দিনের বলেন, মে দিবস বুঝি-কিন্তু আমাগোরে আবার দিবস কিসের। কাম-কাজ না করলে কেউ খাইব্যার দিব্যো না। ঈদের মাত্র একদিন বাহি, এহনো মেয়েগোরে জন্য দুই পয়সারও মার্কেট কইরব্যার পারি নাই। আইজক্যা কাম করমু, মালিকের কাছ থিক্যা ট্যাহা নিয়্যা মার্কেট করমু।  শহরের সিরাজী সড়কের একটি ভবনের নির্মাণ কাজ করছিলেন শ্রমিক মোহাম্মদ। মে দিবস বোঝেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ৩০ বছর বয়সী মোহাম্মদ বলেন, হেড্যো আবার ক্যি? একই স্থানে কর্মরত আল-আমিন, সুমন ও মনির নামে অপর শ্রমিকদের জিজ্ঞেস করলে অভিন্ন উত্তর দেন।  

তারা বলেন, কোন দিবস-টিবস বুঝি না-আইজ কাম করত্যাছি, কাইলও করমু। তারপর ট্যাহা নিয়্যা ঈদ করমু।

ওই ভবনের দায়িত্বে থাকা ইমারত শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মে দিবস বুঝলেও কিছু করার নাই। কাল দিন পরে ঈদ-টাকার দরকার সবারই। ঈদের আগের দিনও কাজ করবেন শ্রমিকরা।  

গরমে ঘেমে আর তপ্ত রোদে পুড়েও রিকশা চালাচ্ছিলেন ষাট বছরের বৃদ্ধ নূর মোহাম্মদ। মুখে তার ক্লান্তির স্পষ্ট ছাপ। তারপরও তিন রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়েই চলছেন।  একডালা পুর্নবাসন এলাকার বয়োবৃদ্ধ রিকশাচালক নূর মোহাম্মদের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ৪০ বছর ধরে রিকশা চালাই। মে দিবস ঠিকই বুঝি-কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে। ঘরে স্ত্রী আর স্কুলপড়ুয়া একটি ছেলে রয়েছে। তাদের জন্য ঈদের কাপড়-চোপড় কিনতে হবে। অন্য ছেলেরা তো বিয়ের পর আলাদা হয়েছে। একই কথা বলেন বনবাড়িয়া এলাকার অপর রিকশাচালক শুকুর আলীও।  

খোর্দ শিয়ালকোল গ্রামের সাত্তার আলী ও আড়িয়া মোহনের ইয়ার আলী। দুইজনেই শহরের একটি ভবনে মাটিকাটার কাজ করছিলেন। দুইজন ষাটোর্ধ্ব হলেও মে দিবসের মর্মকথা বোঝে না। প্রতিদিন ৪শ টাকা মজুরিতে তারা কাজ করেন। মজুরি পাওয়ার পরেই তারা দৈনন্দিন বাজার করতে পারেন।  

বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত নির্মাণ শ্রমিক, রিকশা শ্রমিক, মুটে মজুরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের অধিকাংশই মে দিবসের মর্মার্থ বোঝেন না। ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে যে আন্দোলন করতে যেয়ে শ্রমিকদের আত্মহুতির কথাও তারা জানে না। এদের অনেকেই আবার ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে থাকেন। ঈদের আগে এদের অধিকাংশ শ্রমিকদের প্রায় ১৮-২০ ঘণ্টাই কাজ করতে হয়। এভাবেই চলছে এই শ্রমিকদের জীবন।  এসব বিষয়ে শ্রমিক আন্দোলনের নেতা জেলা বাসদের আহ্বায়ক নব কুমার কর্মকার বলেন, আসলে আমাদের দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলো সুবিধাবাদী ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। তারা শ্রমিকদের কাছে চাঁদা নেয় এবং সেগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে খায়। মে দিবস কেন এসেছে, শ্রমিকের অধিকার কি সেটা নিয়ে তাদের কোন কর্মসূচি নেই। এ কারণেই সাধারণ শ্রমিকরা মে দিবস সম্পর্কে জানে না।  

তিনি বলেন, ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হেয় মার্কেটের শ্রমিকরা দিনের ২৪ ঘণ্টাকে তিনভাগে ভাগ করে ৮ ঘণ্টা কাজ নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। এ কথাটি এখন আর শ্রমিকার জানেন না।  

আমাদের দেশে মে দিবসে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। মালিকদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে। আইএলও কনভেনশনে বাংলাদেশ সই করলেও সেটা কোনোভাবেই মানা হচ্ছে না। তিনি সরকারকে শ্রমিকবান্ধব হয়ে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।