ঢাকা: রাজধানীর রমনায় পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কর্মরত ছিলেন নির্মাণ প্রকৌশলী সুব্রত সাহা (৫২)। প্রতিদিনের মতো বুধবার (২৫ মে) সকালেও স্বাভাবিকভাবেই কর্মস্থলে আসেন তিনি।
এর কিছুক্ষণ পরেই ভবনের দ্বিতীয় তলার বর্ধিতাংশে প্রকৌশলীকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন হোটেলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দীর্ঘদিনের কর্মস্থলে এসে ঘণ্টা-দুয়েকের ব্যবধানে সুব্রত ফিরলেন লাশ হয়ে।
প্রকৌশলী সুব্রত সাহার অস্বাভাবিক এই মৃত্যু ঘিরে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। এটি দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা নাকি হত্যা- সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে পরিবারের অভিযোগের তীর সহকর্মীদের দিকে। তাদের দাবি, কর্মস্থলে দ্বন্দের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রকৌশলী সুব্রতকে হত্যার অভিযোগ এনে রমনা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগের বিষয়টি সামনে রেখেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
এদিকে পুলিশের ধারণা, ভবনের সর্বোচ্চ তলার ছাদ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইমসিন ইউনিট প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেছে। মৃতের মাথা ও মুখমণ্ডলে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
ঘটনার দিন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দ্বিতীয় তলার বর্ধিতাংশে সুব্রত সাহার লাশ উপুর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। লাশের পাশে বেশকিছু ইট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ছিল। তবে ইটগুলো ছিল অক্ষত। যেখানে প্রকৌশলীর মরদেহ পড়ে ছিলো, তার সামনের দিকে কাপড়ের অংশবিশেষ দেখা গেছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডের বাসায় স্ত্রী ও এক মেয়েসহ বসবাস করতেন প্রকৌশলী সুব্রত সাহা। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। কারো সঙ্গে তার কোনোদিন কোনো দ্বন্দ ছিল না। তবে দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের কর্মস্থলে এসে এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেননা কেউ।
পরিবার জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে তার কী হয়েছিল তা তারা বলতে পারছেন না। তবে কোনো কারণে চাকরি হারানোর শঙ্কা ছিল তার মধ্যে। বেশ কিছুদিন ধরে সুব্রত মানসিক চাপে ছিলেন বলে বুঝা যাচ্ছিল।
নিহতের স্ত্রী নুপূর সাহা বলেন, কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল তা বুঝতে পারছি না। পারিবারিকভাবে কোনো সমস্যা ছিল না। এক মেয়েকে নিয়ে আমাদের সুখের সংসার। তবে অফিসিয়াল ব্যাপারে ইদানিং খুব চিন্তিত মনে হতো তাকে।
রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূর মোহাম্মদ বলেন, মৃত ব্যক্তি নির্মাণ প্রকৌশলী হিসেবে ওই হোটেলেই কর্মরত ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরপর ঠিক কী ঘটেছে, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হোটেলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানায়, অন্যদিনের মতো বুধবার সকালে কর্মস্থলে যান সুব্রত। হোটেলে ঢোকার পরপরই তাকে ভবনের সর্বোচ্চ তলার দিকে যেতে দেখা যায়। সবগুলো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখছে পুলিশ। কারণ ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে তার মৃত্যু হয়েছে।
রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই স্বপন সাহা বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। বাদির অভিযোগ, অফিসিয়াল বিষয় নিয়ে বিবাদের জেরে সহকর্মীরা তাকে হত্যা করতে পারেন। তবে সুনির্দিষ্ট করে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেননি বাদি।
এ অবস্থায় মামলার অভিযোগের বিষয়টি সামনে রেখে তদন্ত করছে পুলিশ। ঘটনাস্থল হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণসহ নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটও ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলেও জানান ওসি মনিরুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২২
পিএম/এসএ