ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

বাঁকখালী নদী দখল

৫ সচিব ও কক্সবাজারের ডিসিসহ ১৫ জনকে আদালত অবমাননার নোটিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২২
৫ সচিব ও কক্সবাজারের ডিসিসহ ১৫ জনকে আদালত অবমাননার নোটিশ

কক্সবাজার: পাঁচ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ ১৫ সরকারি কর্মকর্তা ও এক জনপ্রতিনিধিকে আদালত অবমাননার নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী রক্ষায় হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও প্যারাবন কেটে নদী দখল, কক্সবাজার পৌরসভার সমস্ত আবর্জনা নদীতে ফেলে দূষণ অব্যাহত রাখা এবং পূর্বের দখলদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ নোটিশ দেওয়া হয়।

সোমবার (১৩ জুন) ডাকযোগে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না স্বাক্ষরিত এ চিঠি দেওয়া হয়।

নোটিশে দ্রুত সময়ের মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশ প্রতিপালন করে বাঁকখালী নদীতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা, আদালতের সব আদেশ প্রতিপালন করে নদীটিকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে এবং নদী ও নদী সংলগ্ন প্যারাবনে নির্মিত ও নির্মিতব্য সব স্থাপনা উচ্ছেদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

একই সঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বদর মোকাম এলাকার কস্তুরাঘাট নামক স্থানে এ নদীতে বিদ্যমান প্যারাবন সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

ইতোমধ্যে উল্লেখিত প্যারাবনের যে ক্ষতি হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে প্রকৃত দোষীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় ও প্যারাবনকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্যারাবন উপযোগী বৃক্ষের দ্বারা বনায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সকাল ১০ টার মধ্যে বেলার আইনজীবীকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ অবমাননার অভিযোগে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বেলার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না ১৩ জুন ডাকযোগে ১৪ সরকারী কর্মকর্তা ও এক জনপ্রতিনিধির কাছে এ চিঠি পাঠিয়েছেন।

যাদেরকে চিঠি দিয়েছেন, তারা হলেন- ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.মোস্তাফিজুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মুফিদুল আলম ও কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশন (ভূমি) মো.জিল্লুর রহমান।

বেলার পক্ষ থেকে দেওয়া নোটিশে আরও বলা হয়েছে, কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত বাঁকখালী নদীকে সংরক্ষণ করতে ও অবৈধ দখল ও দূষণ থেকে রক্ষা করে নদীকে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বেলা ২০১৪ সালে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার এবং বিচারপতি মোহাম্মদ আতাউর রহমান খান এর সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ বাঁকখালী নদীর দখলদারদের একটি তালিকা প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশ দেন। এছাড়া চিংড়ি অথবা তামাক চাষের উদ্দেশ্যে উল্লিখিত নদীর যে কোনও অংশ বা নদীর তীর কাউকে ইজারা দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি বাঁকখালী নদীকে কেন প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে না এবং সি. এস. ম্যাপ অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখলদার ও দূষণকারীর হাত থেকে কেন নদীকে সংরক্ষণ করা হবে না- এই মর্মেও রুল জারি করেন।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি মামলার শুনানিকালে আদালত কক্সবাজার পৌরসভার মেয়রকে বাঁকখালী নদীতে বর্জ্য না ফেরতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বর্জ্য ফেলার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়, যা কোনো অবস্থাতেই পৌর এলাকা বা অন্য কোনো এলাকা, নদী বা খালের পরিবেশের ক্ষতি করবে না এবং অবিলম্বে বাঁকখালী নদীতে ফেলা বর্জ্য অপসারণ শুরু করতে এবং নিজ খরচে নদী পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতের এরকম সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও বাঁকখালী নদীতে এখনও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বর্জ্য ফেলা অব্যাহত রয়েছে, রয়েছে নদী দখলের প্রতিযোগিতা যা সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী বাঁকখালী নদী বর্তমানে দখল ও দূষণে জর্জরিত। নদীর তীরে নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে নির্মাণ চলমান রয়েছে। ক্রমশই বাড়ছে নদীর দখলদার। সম্প্রতি কক্সবাজার পৌরসভার বাঁকখালী নদী সংলগ্ন কস্তুরাঘাট এলাকায় প্যারাবন কেটে নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা।  নদী হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হয়েছে যা দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর কর্তৃপক্ষের চরম অবজ্ঞা ও উদাসীনতার পরিচয়।

প্রসঙ্গত, শনিবার ‘বাঁকখালী নদী দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে উত্তেজনা’ শিরোনামে বাংলানিউজে সংবাদ প্রচারিত হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

আরও পড়ুন: বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২২
এসবি/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।