ঢাকা, রবিবার, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

খুনের ৩১ বছর পর গ্রেফতার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২২
খুনের ৩১ বছর পর গ্রেফতার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আসামি কাওছার

ঢাকা: ৩১ বছর আগে মানিকগঞ্জ সদর এলাকার আজাহার (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন কাওছার (৬৩)। তখন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও দুই মাস না যেতেই জামিনে বের হয়ে নিজের নাম-পরিচয় বদলে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।

এরপর প্রথমে গাজীপুর, তারপর কালিয়াকৈর, পূবাইল, উত্তরা, টঙ্গীসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। গাজীপুরে থাকা অবস্থায় ইমরান মাহামুদ নামে নতুন ভোটার আইডি কার্ডও তৈরি করেন এই ঘাতক।   জীবিকা নির্বাহে একের পর এক পেশা পরিবর্তন করেন। তবে হত্যাকাণ্ডের ৩১ বছর পর রোববার (১৯ জুন) গভীর রাতে গুলশান থানার বারিধারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

সোমবার (২০ জুন) দুপুরে  রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক জানান, আত্মগোপনে থাকতে ঘাতক কাওছার নিজের নাম-পরিচয় গোপন করার পাশাপাশি ক্রমাগতভাবে পেশা পরিবর্তন করেন। প্রথমদিকে তিনি রাজমিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিক ও স্যানিটারি মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতেন। পরবর্তীতে ড্রাইভিং শিখে সিএনজি চালাতেন। এরপর  প্রাইভেটকার চালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।

এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, রোববার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজাহার হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. কাওছারকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ছিল ৩১ বছ আগের। আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে।

আজাহার হত্যা মামলার সূত্রে ও গ্রেফতার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, নিহত আজাহার ও গ্রেপ্তার কাওছার মানিকগঞ্জের চর হিজুলো গ্রামের বাসিন্দা। তারা এলাকায় একসঙ্গে ইরি ধানের ক্ষেতে পানি সেচ দিতেন। একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। ফলে একে অপরের বাড়িতে অবাধ যাতায়াতে ছিল। এরই মধ্যে ভুক্তভোগীর বিবাহিত বোন অবলার সঙ্গে কাওছারের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে আজাহার ও কাওছারের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এই ঝগড়াকে কেন্দ্র করে ১৯৯১ সালের ১৪ জুন আজাহারকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে কাওছার ও তার সহযোগীরা। একই দিনে ভুক্তভোগীর ভাই ঘাতক কাওছারসহ ৭ জনের নামে মানিকগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন র‌্যাব-৪ এর সিও  ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক

তিনি আরও বলেন, মামলা হওয়ার পর কাওছারসহ এজাহারনামীয় কয়েক জন আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২ মাস হাজাত বাসের পর ১৯৯১ সালে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান কাওছার। এরই মধ্যে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এই মামলার এজাহারনামীয় আসামি মো.কাওছার, ওমর, রুহুল আমিন, আসমান ও রফিজকে অভিযুক্ত করে  আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ১৯৯২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ এই মামলায় কাওছারকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যদণ্ড দেন। আর অপর আসামি ওমর, রুহুল আমিন, আসমান ও রফিজ প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা ৫ বছর সাজাভোগের পরে বিজ্ঞ উচ্চ আদালতে আপিল করে বর্তমানের নির্দেশে জামিনে আছে। আর মো.কাওছার মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ২ মাস হাজতে থেকে জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই গত ৩১ বছর পলাতক ছিল। ১৯৯১ সালের পর থেকে কাওছার আর কোনোদিন মানিকগঞ্জে যায়নি।

কাওছার আত্মগোপনে ছিলেন ৩১ বছর: মো. মোজাম্মেল হক বলেন, কাওছার মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে লোক চক্ষুর আড়ালে আত্মগোপন করেন। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ১৯৯১ সালের শেষের দিকে ঢাকায় চলে আসে। গত ৩১ বছর ধরে আসামি মো. কাওছার নাম পরিবর্তন করে ইমরান মাহামুদ নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে। প্রথমে গাজীপুর, কালিয়াকৈর, পুবাইল, উত্তরা, টঙ্গীসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামি নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে সে পেশা পরিবর্তন করে। প্রথমদিকে সে রাজমিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিক, স্যানিটারী মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করে। পরবর্তীতে সে ড্রাইভিং শিখে সিএনজি চালায় এবং বর্তমানে সে প্রাইভেটকারের ড্রাইভার হিসেবে আত্মগোপনে থেকে গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।

নতুন নামে এনআইডি তৈরি: কাওছার জামিনে বের হয়ে এলাকা থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। পরে নিজেকে আড়াল করার জন্য মো. ইমরান মাহামুদ নাম ধারণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা- শাহিন মাহামুদ, সাং- নান্দুয়াইন, থানা- গাজীপুর, জেলা- গাজীপুরকে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেন। এই পরিচয়পত্র ব্যবহার করেই তিনি বিভিন্ন পেশার কাজ করতেন। এছাড়াও তিনি গাজীপুরকে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২২
এসজেএ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।