ফেনী: বর্ষা এলেই আতঙ্কে দিন কাটে ফেনীর উত্তরের মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয় নদী পাড়ের মানুষদের। ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল প্রতি বছরেই নিঃস্ব করে দিয়ে যায় তাদের।
অথচ কেবলমাত্র ২০২১ সালে ভাঙন কবলিত স্থান মেরামতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এভাবে প্রতিবছর ভাঙছে আর মেরামত হচ্ছে ১২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বা মুহুরী বাঁধ। চিহ্নিত হয়েছে বাঁধের ২১ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। এমন তথ্য বিভিন্ন সময় জানান উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন।
অপরদিকে বানভাসী মানুষের হাহাকার চলছে বহুকাল ধরে। বাঁধভাঙা মানুষের স্বপ্নগুলোও একইভাবে ভাঙে। ভেসে যায় উজান হতে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আবাদ, মাছের ঘের, নষ্ট হয় গৃহস্থালি পণ্য।
বর্ষায় ভারত হতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মানুষের ক্ষতিরোধে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে নির্মাণ কাজ শুরু হয় মুহুরী বাঁধের। উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন জানান, ১৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয় ২০১১ সালে। পরশুরামের নিজকালিকাপুর হতে বাঁধটি শুরু হয়। মুরুরী নদীর পশ্চিম পাড়ে বাঁধটি রেজুমিয়া ব্রিজ পর্যন্ত তৈরি হয়। কহুয়া নদীর দুইপাড়ে ৩৪ কিলোমিটার, সিলোনিয়া নদীর পূর্বপাড়ে প্রায় ৩০ কি.মি. বাঁধ নির্মিত হয় ফুলগাজী উপজেলার বন্দুয়া ব্রিজ পর্যন্ত।
স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ (পাউবো) ও ঠিকাদারদের ব্যাপারে। একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি জানান, বাঁধ নির্মাণ সঠিক হয়নি। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে ঠিকাদারের যথাযথ তদারকি করেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে ইতোপূর্বে আকতার হোসেন জানান, বাঁধ নির্মাণের পর তা পরিচর্যার জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায় না। বেড়িবাঁধ নিয়মিত সংস্কার করা যায়নি বরাদ্দের অভাবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে অনুন্নয়ন খাতে ১২২ কি.মি. বাঁধ সংস্কারে কোনো অর্থ বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ এসেছে শুধু ভেঙে পড়া বাঁধ মেরামতে।
মুহুরী বাঁধ যথাযথ নকশা অনুযায়ী তৈরি হয়নি বলে বিশ্লেষকদের অভিযোগ রয়েছে। নদীর গভীরতা, প্রয়োজনীয় সেট ব্যাক না রেখেই তৈরি হয়েছে এটি। ফলে বারবার ভাঙনের কবলে পড়ছে উপচে পড়া পানির স্রোতে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, ২০০৪-০৫ অর্থবছরের শেষের দিকে এসে ফুলগাজী-পরশুরামে অস্বাভাবিকভাবে জমির দাম বাড়তে থাকে। প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্ধেক পরিমাণ জমিও অধিগ্রহণ করা যায়নি। ৯০ দশকের শেষাংশে মৌজা দর বিবেচনায় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণের সময় দাম হয়েছে আকাশচুম্বী। ফলে জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এতে করে নদী যতটা গভীর ড্রেজিং করার কথা ছিল তা সম্ভব হয়নি।
প্রয়োজনমত ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় ফ্লাড ফ্রি জোন তৈরি করা যায়নি। অর্থাৎ, নকশা অনুযায়ী নদীর নির্দিষ্ট স্থানগুলোয় ৩০ মিটার করে বাড়তি ভূমি বা সেট ব্যাক নিশ্চিত করা যায়নি। এতে করে নদীতে পাহাড়ি ঢলের বাড়তি পানি ধরে রাখার জায়গা সংকুলান হয় না। ২০২০ সালে ৭৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে মুহুরী বাঁধ পুনর্নির্মাণে একটি প্রকল্প নেওয়ার কথা গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ২১ জুন, ২০২১
এসএইচডি/এমজে