ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কুশিয়ারা-হাকালুকি তীরে বন্যা, আশ্রয়ের খোঁজে লাখো মানুষ

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
কুশিয়ারা-হাকালুকি তীরে বন্যা, আশ্রয়ের খোঁজে লাখো মানুষ

সিলেট: এবার ভয় ধরাচ্ছে কুশিয়ারা নদী ও হাকালুকি হাওর। নদীর পানি প্রতিটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আর বন্যায় হাকালুকির হাওর যেনো পরিণত হয়েছে সাগরে। এরই মধ্যে ডুবে গেছে তীরবর্তী ৬ উপজেলার অসংখ্য গ্রাম।

কুশিয়ারা নদী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহমান থাকায় জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ভাটিতে থাকা ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায়ও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুশিয়ারার পানি বেশি বৃদ্ধি পেলে জুড়ি নদীর মোহনা দিয়ে উল্টো হাকালুকির হাওরে প্রবেশ করে। স্থানীয়দের ভাষায় গাঙ উজান হয়ে যায়। সেই সঙ্গে পাহাড়ি নদীগুলোর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করে মৌলভীবাজারের বড়লেখা-জুড়ির বিস্তৃর্ণ অঞ্চল প্লাবিত করে হাকালুকিতে প্রবেশ করে।  

এতে করে ৬ উপজেলা বেষ্টিত হাকালুকির তীরবর্তী অঞ্চলের লোকজন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে পড়েছেন। মানুষ বাড়ি ঘর ছাড়া হয়েছেন। রাস্তাঘাট ডুবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কুশিয়ারা নদী তীরে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরের বাজারের শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। হাসপাতাল ও উপজেলা চত্ত্বরে পানি থৈ থৈ করছে।

বিশেষ করে হাকালুকি হাওরে যুক্ত ভারত থেকে নেমে সুনাই নদী, ফানাই, আন ফানাই, কন্টিনালা, জুড়ি। এসব নদীতে উজানের ঢলে ৬ উপজেলা বেষ্টিত হাকালুকির তীরবর্তী সবগুলো উপজেলা প্লাবিত হচ্ছে। আর কুশিয়ারা সংলগ্ন হা্কালুকির পানি প্রবাহমুখে থাকা ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বিস্তৃর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বাড়িঘর ছেড়ে মানুষজন রেললাইনে, সড়কের ধারে এবং আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছেন।

এরই মধ্যে ডুবে গেছে হাকালুকির পশ্চিম তীরবর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট পর্যটন কেন্দ্র। যেখান থেকে দাঁড়িয়ে হাকালুকি হাওরের সৌন্দর্য অবলোকন করেন পর্যটকরা। সেই স্থান এখন পানিতে তলিয়েছে।    

স্থানীয়রা জানান, এবার কুশিয়ারা ও জুড়ি-বড়লেখা হয়ে এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে নেমে আসা ভারত থেকে নেমে আসা নদীগুলোর পানিতে ডুবছে সিলেটের আরো ৬ উপজেলা।

জানা গেছে, এবারের ভয়াবহ সিলেট নগরের ৮০ ভাগ এলাকা। সেই সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৯৫ ভাগের বেশি এলাকা, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট এলাকার ৮০ ভাগের উপরে এলাকা বন্যা প্লাবিত হয়। আর সুনামগঞ্জ জেলার ৯০ ভাগ এলাকাই ভয়ঙ্কর বন্যার কবলে পড়ে।  

২০০৪ কিংবা ১৯৮৮ সালের বন্যা নয়, ১২২ বছরের ইতিহাসে এমন বন্যা দেখেননি কেউ।   

ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়ার বাসিন্দা ফরিদ মিয়া বলেন, এবার নজিরবিহীন বন্যা হয়েছে। আমার ৫৬ বছর বয়সে এরকম বন্যা দেখিনি। এবার বাড়িঘর সবকিছু পানিতে তলিয়েছে।

ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট পর্যটন কেন্দ্রের আব্দুস সালাম বলেন, বন্যায় আমার দোকান ভাসিয়ে নিয়েছে। ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।

টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সিলেটজুড়ে।  
ভারি বর্ষণ আর উজানের ঢলে নগরের ৫ লাখ জনসংখ্যার অধিকাংশই দুর্গতিতে পড়েন। সিলেটনগরসহ জেলার ২০১১ সালের সুমারি অনুসারে ৩৫ লক্ষাধিক মানুষের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং সুনামগঞ্জের ২০১৪ সালের সুমারি অনুযায়ী ২৪ লক্ষাধিক জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ মানষ বানভিাসি হয়ে পড়েন।

এমন অবস্থায় সরকারি সহায়তাও যথাসময়ে না পৌঁছায় চরম দুর্ভোগে পড়েন উপদ্রুত এলাকার লোকজন। গত বন্যায় উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ সহযোগিতা নিয়ে প্রশাসন তৎপর থাকলেও এবার তা অপ্রতুল মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। তারা বলেন, আগে বন্যা কবলিত মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল।

এদিকে, সুরমা তীরবর্তী উত্তরে সিলেটের নগরে পানি কমলেও বাড়ছে দক্ষিণ সুরমায়। এরইমধ্যে দক্ষিণ সুরমার অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সামনে কয়েক দিন বৃষ্টি কম হবে। দিনে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। রাতে খানিকটা বৃষ্টি হলেও সহনীয় মাত্রায় হবে। এছাড়া উজানেও তেমন বৃষ্টি হচ্ছে না। এ অবস্থায় কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে তাদেরও।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
এনইউ/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।