ঢাকা : কাল-পরশু, দুদিন বাদে ঈদুল আযহা। পবিত্র এ উৎসবের আমেজ সারা দেশেই।
কোরবানির ঈদের আমেজ শুরু হয় গরু-ছাগলের বিশাল হাট স্থাপনের মাধ্যমে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় হাট গাবতলিতে। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খামারি বা গেরস্তরা নিজ বাড়ির লালিত পশু নিয়ে এ হাটে আসেন। অনেক সময় বেশি অর্থ আয়ের লক্ষ্যে কম বয়সী বা স্বাস্থ্যের গরুর শরীরে মোটাতাজাকরণের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এবার এমন কোনো ঘটনা ঘটুক, চায় না আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সকাল থেকে গাবতলি পশুর হাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে র্যাব। এ হাটে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ী হাটে আনা গরুর শরীরে মোটাতাজাকরণ বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট পশু ডাক্তারসহ অভিযান পরিচালনা করছেন। তারা দেখছেন কেউ মোটাতাজাকরণ ওষুধ প্রয়োগ করেছে কিনা।
কোনো পশুকে ওষুধ খাইয়ে হাটে আনা হলেও চিকিৎসকরা তা বুঝবেন। এমন কোনো ব্যবসায়ী পাওয়া গেলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে
এ সময় হাটকেন্দ্রীক জালটাকার লেনদেন সম্পর্কেও কথা বলেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, হাটকেন্দ্রীক জালটাকার লেনদেন বৃদ্ধি পায়। আমাদের জালটাকা শনাক্তকরণ মেশিন রয়েছে। সন্দেহ হলে আমাদের কাছে এসে যে কেউ মেশিনের মাধ্যমে টাকা যাচাই করে নিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন পশু ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছি। আসার পথে কোথাও কোনো ধরনের ডাকাতি বা চাঁদাবাজি হয়নি বলে তারা জানিয়েছেন। তারপরও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। কোথাও এমন কোনো সম্ভাবনা থেকে থাকলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
কোনো ধরণের চাঁদাবাজি বরদাস্ত করা হবে না বলে এ সময় কঠোর হুঁশিয়ারি দেন র্যাবের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বলেন, অনলাইনে প্রচুর পশু কেনাবেচা হচ্ছে। তাই অনলাইনেও মনিটরিং করা হচ্ছে। গ্রাহক যেন কোনোভাবেই প্রতারিত না হয়, আমরা যেকোনো সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছি।
ঈদ যাত্রা সম্পর্কে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ঈদ কেন্দ্রিক নিরাপত্তায় সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন, সড়কে চাঁদাবাজিসহ ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তায় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাহিনীর সব ইউনিটও সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত আছে। এ নিরাপত্তা কার্যক্রম কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু করেছে র্যাব। পশুর হাট কেন্দ্রিক ও মানুষের বাড়ি ফেরা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের এ পরিচালক আরও বলেন, বাস টার্মিনাল, ট্রেন স্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে র্যাবের টিম রয়েছে। এবার ট্রেনের টিকিটের কালোবাজারির দৌরাত্ব কম ছিল। এরপরও কমলাপুর থেকে টিকিট কালোবাজারির দায়ে আমরা ১০ জনকে গ্রেফতার করেছি। রাস্তায় ছিনতাই-চাঁদাবাজি প্রতিরোধে র্যাব কাজ করছে।
যেকোনো পরিস্থিতিতেই র্যাবকে খবর দেওয়ার আহ্বান জানান কমান্ডার মইন। তিনি বলেন, আমাদের গোয়েন্দারা মাঠে আছেন। ঈদে রাজধানী শূন্য হয়ে পড়বে। এলাকাভিত্তিক জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেছি। বাসা-বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো যেন অ্যাকটিভ থাকে। যদি কেউ মনে করেন তাহলে র্যাবের সাপোর্ট নিতে পারবেন। বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি করা হচ্ছে, র্যাবের পেট্রোল টিম কাজ করছে।
গাবতলি পশুর এ হাটে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি আরও বলেন, আমরা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করছি। করনোভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা সবার মধ্যে মাস্ক বিতরণ করছি। র্যাবের সকল ইউনিট স্বর্বাত্মকভাবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছে বলেও উল্লেখ করেন খন্দকার আল মঈন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২২
পিএম/এমজে