ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বাকিতে চামড়া নিচ্ছেন আড়তদাররা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২২
বাকিতে চামড়া নিচ্ছেন আড়তদাররা

বরিশাল : ঈদুল আযহার জামাত শেষ হওয়ার পর বরিশালের শহরাঞ্চলে শুরু হয়ে কোরবানি। আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জনগণ দিনটি পালন করলেও খুশি নেই মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মন।

আড়তদাররা বাকিতে চামড়া নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।

রোববার (১০ জুলাই) সকালের পর থেকেই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে কোরবানিকৃত পশুর চামড়া সংগ্রহ করতে নামেন। তাদের কাছ থেকে দুপুরের পর থেকে চামড়া নিতে শুরু করেন স্থানীয় আড়তদাররা।

তাদের মধ্যে কেউ কেউ নগদ টাকায় চামড়া সংগ্রহ করলেও অনেকে নিচ্ছেন বাকিতে। যারা আবার নগদে চামড়া নিচ্ছেন, তাদের দেয় মূল্যে খুশি হতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, পচার ভয়ে ব্যবসায়ীরা কাঙ্ক্ষিত মূল্যের চেয়েও কম দামে চামড়া বিক্রি করে দিচ্ছেন।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম। এবার তিনি স্থানীয়ভাবে ৪০টি চামড়া সংগ্রহ করেছেন। গাড়ি ভাড়া করে এসব চামড়া তিনি নিয়ে আসেন নগরের পদ্মাবতী এলাকার আড়তদারদের কাছে। কিন্তু সেখানে চামড়ার যে দর ধার্য করা হয়েছে, তা শুনে হতাশ হয়ে পড়েন তিনি।

তরিকুল জানান, পদ্মাবতী এলাকার চামড়ার আড়তদাররা মাঝারি গড়নের গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছেন ৩৮০ টাকা। গাড়ি ভাড়া দিয়ে স্থানীয়ভাবে কেনা এসব চামড়া এ দামে বিক্রি করলে ক্ষতি ছাড়া বিকল্প নেই। অন্তত ৪৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারলেও পুঁজি উঠে আসত।

পদ্মাবতী এলাকার স্থানীয় আড়তদার মিজানুর রহমান বলেন, নগরে যে কজন ব্যবসায়ী চামড়া কিনছেন, তাদের মধ্যে আমিই নগদ পুঁজি খাটিয়েছি। সাইজ অনুযায়ী ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় চামড়া কেনার চেষ্টা করছি। এর চেয়ে বেশি মূল্য দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না।

মিজানুর রহমানের বাবা ষাটোর্ধ মজিদ মিয়া বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে এখনও তাদের ৫০ লাখ টাকা আটকে আছে। সে অর্থ আদায় না করা পর্যন্ত নতুন করে বিনিয়োগ করাটা বড় ঝুঁকি। যে টাকায় চামড়া কিনছি, তা স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করে ঢাকায় পাঠালে আদৌ খরচ উঠবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

বাকিতে চামড়া নেওয়ার ব্যাপারে ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, ৪০০ টাকা দিয়ে কেনা একটি চামড়া লবণ ও শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে সংরক্ষণেই আরও আড়াইশ টাকা খরচ হয়। ট্যানারি মালিকদের কাছে পাঠানোর আগেই খরচ হয়ে যায় ৬৫০ টাকা। এ ছাড়া পরিবহন খরচ দিয়ে চামড়ার দাম ৭০০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। ট্যানারি মালিকদের কাছে পাঠিয়ে এ মূল্য পাব কিনা, তাতেও সন্দেহ আছে। যে কারণেই কিছু নগদ, কিছু বাকিতে  চামড়া সংগ্রহ করছি।

এর কারণে হিসেবে তিনি জানান, টাকা আটকে থাকার কারণে অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। আমরা মাত্র চার-পাঁচজন এই পেশায় আছি। তাই বাকিতে চামড়া নিতে হচ্ছে।

পুরো বাকিতে চামড়া নিচ্ছেন পোর্ট রোডের মরিচ পট্টির চামড়ার আড়তদার আলহাজ্ব মো. বাচ্চু মিয়া। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের দেশের চামড়ার মান খুবই ভালো। কিন্তু তারপরও ট্যানারি মালিকরা চামড়ার ন্যায্য মূল্য দিতে চায় না। আমি আড়াইশ থেকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকায় চামড়া কিনছি। কিন্তু গোটা টাকাই বাকি রাখছি। কারণ, বকেয়া টাকা তো পেলাম না। তার ওপর নতুন করে লবণ ও শ্রমিক খরচ দিয়ে নগদ টাকায় চামড়া কেনা সম্ভব না। যারা বাকিতে রাজি আছেন তাদের চামড়া রাখছি, যারা রাজি নন তাদেরটা নিয়ে কথা বলছি না।

দিন দিন ব্যবসায়ীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিলুপ্তির পথে রয়েছে বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি। সমিতির অধিকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলেও সম্ভব হয়নি। তবে কমিটির ‘সাধারণ সম্পাদক’ শাহিদুর রহমান শাহিনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি এ বছর চামড়া সংগ্রহ করিনি। এ ব্যাপারে জানিও না।

বাংলাদেশ সময় : ২০১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২২
এমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।