নওগাঁ: নওগাঁর মান্দা উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে সুমনা খাতুন (২২) নামে এক গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে।
রোববার (১০ জুলাই) ঈদুল আজহার দিন সন্ধ্যায় উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের হোসেনপুর (বটতলী) গ্রামে নিজ বাড়িতে ঘরের ভেতর আটকে রেখে ওই গৃহবধূর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় স্বামী।
সুমনা নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের নাকইল (উত্তরপাড়া) গ্রামের আফজাল হোসেন সরদারের মেয়ে।
এ ঘটনায় স্বামী ইস্পিন হোসেন বাবু (২৯) সোমবার (১১ জুলাই) স্ত্রী সুমনা খাতুনকে শ্বশুরবাড়িতে দেখতে গেলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে নিয়ামতপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় ওইদিন বিকেলে মান্দা থানায় সোপর্দ করে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় সাড়ে ৫ বছর আগে নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের হোসেনপুর (বটতলী) গ্রামের মৃত মছির উদ্দিনের ছেলে বাবুর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের নাকইল (উত্তরপাড়া) গ্রামের আফজাল হোসেন সরদারের মেয়ে সুমনার বিয়ে হয়। তাদের ইসমাইল হোসেন নামে ৩ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এর আগেও বাবু একটি বিয়ে করেছিল। কিন্তু তার নির্যাতনের শিকার হয়ে তালাক নিয়ে চলে যান ওই স্ত্রী। তারপর সুমনার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় সুমনার পরিবারের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা যৌতুকও নেন বাবু। এরপরে আরও যৌতুক দাবি করেন বাবু। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিসহ বিভিন্ন বাহানায় সুমনাকে নির্যাতন করে আসছিলেন স্বামী বাবু।
গৃহবধূর বাবা আফজাল হোসেন জানান, যৌতুকের বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে একাধিকবার সালিশ হয়েছে। এরপরেও আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন থামেনি। গত রোববার ঈদুল আজহার দিন সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনায় আমার মেয়েকে মারধর শুরু করেন মেয়ের জামাই। একপর্যায়ে সুমনাকে ঘরের ভেতর আটকে রেখে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে মেয়ের চিৎকারে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে আমাদের খবর দিলে রাতে জামাইয়ের বাড়ি থেকে মেয়েকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
নির্যাতিত গৃহবধূ সুমনা বলেন, বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় আমার স্বামী যৌতুকের টাকার জন্য আমার পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু আমার পরিবার গরিব হওয়ায় তার দাবি করা পুনরায় লক্ষাধিক যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এর ফলে অধিকাংশ সময় আমাকে বাপের বাড়িতেই থাকতে হয়েছে। ঈদের দিন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার স্বামী আমাকে মারধর করে একপর্যায়ে ঘরে আটকে রেখে গ্যাসলাইট দিয়ে পোশাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই সময় আগুন লেগে শরীরের আঠারো ভাগ (পেট) পুড়ে যায়। এরপর স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে বাবার বাড়িতে খবর দেন। এরপর বাবার বাড়ির লোকজন এসে আমাকে রাতেই নিয়ে আসেন।
পরদিন দুপুরে তার বাবার বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়ে দেন। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তিনি এ জঘন্যতম ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
অভিযুক্ত ইস্পিন হোসেন বাবু বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো আমাকে মাফ করে দিয়েন। প্লিজ, আমার জীবনটি শেষ করে দিয়েন না। আমি সুমনাকে অনেক ভালোবাসি। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। বিষয়টির জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সেদিন মদ- চোয়ানী খেয়ে মাথা ঠিক ছিল না তাই এমনটি করেছি। এ জন্য আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আগামীতে আর এরকম হবে না। এরপর কিছু হলে আপনারা আমাকে যে শাস্তি দিবেন, আমি তাই মাথা পেতে নিবো।
এ ব্যাপারে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ সুমনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরে (পেট) আগুন দিয়ে ঝলসে দেওয়ার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (খ) ধারা মোতাবেক দায়েরকৃত মামলায় ইস্পিন হোসেন বাবুকে আটকের পর মঙ্গলবার সকালে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২২
আরএ