ঢাকা, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২৩ লাখটাকাসহ সার্ভেয়ার আতিকুর আটক

ফের কক্সবাজারে এল এ শাখার সব সার্ভেয়ারকে বদলি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৯ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২২
ফের কক্সবাজারে এল এ শাখার সব সার্ভেয়ারকে বদলি

কক্সবাজার: কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এল এ) শাখার ৩৪ জন সার্ভেয়ারকে দুই বছর আগে একযোগে বদলির পর এবার একসঙ্গে সব (৯ জন)  সার্ভেয়ারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক  বিমানবন্দর থেকে সার্ভেয়ার আতিকুরকে ২৩ লাখের বেশি নগদ টাকাসহ আটকের ঘটনার জের ধরে ভূমি মন্ত্রণালয় এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, এ সংক্রান্ত একটি আদেশ সোমবার (১৮ জুলাই) জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে।

উল্লেখ্য গত ১ জুলাই  ঢাকা হযরত শাহজালাল আর্জাতিক বিমানবন্দরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এল এ শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান নগদ ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকাসহ নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে আটক হন।

বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে একই দিন অন্য একটি ফ্লাইটে তাকে কক্সবাজারে ফেরত পাঠানো হয়। কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আতিকুরকে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় আতিকুরের কাছে যে টাকা পাওয়া গেছে সেগুলোর বৈধ কোনো উৎস দেখাতে না পারায় জেলা প্রশাসন তাকে সদর থানায় সোপর্দ করে।

উল্লেখ্য দুই বছর আগে কক্সবাজারের একই শাখার ৩ সার্ভেয়ারের এমন দুর্নীতির ঘটনায় একযোগে ৩৪ জন সার্ভেয়ারকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার প্রত্যাহার হওয়া ৯ সার্ভেয়ার দুই বছর আগে তাদের স্থলে যোগ দিয়েছিলেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘অধিগ্রহণ করা জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের চেক পেতে যেন হয়রানি বা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন না হন,  সেজন্য জেলা প্রশাসন  সজাগ রয়েছে।

এমনকি এ ধরনের কোনো বিষয় নজরে আসলে তাকে জানানোর অনুরোধও করেছেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।

এদিকে  আইনি প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কক্সবাজার সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন সার্ভেয়ার আতিকুরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের পূর্বক নিজেই মামলা তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছেন। আদালত ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য  গত সোমবার (১৮ জুলাই) সার্ভেয়ার আতিকুরের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান মহেশখালী দ্বীপের ধলঘাটা ও মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্র বন্দর ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন  কর্তৃপক্ষের (বেজা) জন্য এক হাজার ৫০০ একর অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের দায়িত্ব পালন করছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সেই দায়িত্ব পালনকালে মাতারবাড়ি ও ধলঘাটার স্থানীয় কয়েক ব্যক্তির যোগসাজশে ক্ষতিগ্রস্ত জমিমালিকদের কাছ থেকে কমিশন বাণিজ্যের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

এ ঘটনা নতুন নয়: এর আগে ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখায় কর্মরত সার্ভেয়ার ওয়াসিম খানের বাসায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাবের একটি দল নগদ ৫ লাখ টাকা, আর ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির আবেদনসহ  তাকে আটক করে। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী  আরও দুই সার্ভেয়ার ফরিদ উদ্দিন ও ওয়াসীম হোসেনের বাড়ি থেকে যথাক্রমে ৬৩ লাখ এবং ২৫ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৯৩ লাখ টাকা এবং দাপ্তরিক কাগজপত্র উদ্ধার করে। এ বিষয়ে দুদকের একটি মামলা চলমান রয়েছে।

সেই মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) শরিফ উদ্দিন কয়েকশ’ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু সেই  প্রতিবেদনের সঙ্গে তার তদারক কর্মকর্তা  একমত পোষণ না করায় অভিযোগ  ফের তদন্তন্তের জন্য ভিন্ন একজন আইও নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যেই দুদক কোন কারণ না দর্শিয়ে শরিফ উদ্দিনকে চাকুরিচ্যুত করে। আর তা নিয়ে দেশব্যাপী নানা আলোচনা হয়েছে।

এদিকে চাকুরিচ্যুত করার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন শরিফ উদ্দিন। সেটি এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের পর থেকে কক্সবাজারে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে শুরু করে। এমনকি এ পর্যন্ত চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১৩ হাজার একরের বেশি ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যার প্রাক্কলিত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। হাজার হাজার ক্ষতিপূরণ প্রার্থীর আবেদন নিষ্পত্তির জন্য বর্তমানে একজন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার সঙ্গে মাত্র দুই জন কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তারা দু’জনই বিসিএস ৩৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২২
এসবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।