ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ জুলাই ২০২৪, ২৪ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ট্রেনও আসে ক্রসিং ব্যারিকেডও লাগে, কেবল থামে না মানুষ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২২
ট্রেনও আসে ক্রসিং ব্যারিকেডও লাগে, কেবল থামে না মানুষ গতি বিচারে মাত্র ৩০ সেকেন্ডে মগবাজার ক্রসিং ওভার পার হয়ে যাওয়ার কথা একটি ট্রেনের। এমন অবস্থায় বাই সাইকেলে লাইন পার হচ্ছেন এক যুবক। ছবি : নিশাত বিজয়

ঢাকা : রাজধানীর মগবাজার বাস স্টপেজ ধরে তেজগাঁওয়ের দিকে যেতে ধরলে মাঝে রেলের একটি ক্রসিং ওভার দেখা যায়। ট্রেন আসার হুঁইসেল বাজতে শুরু করলে সেখানকার ক্রসিং ব্যারিকেডগুলো নেমে যায়।

বন্ধ হয় রাস্তার যানবাহন চলাচল। কিন্তু মানুষের চলাচল থামে না। দীর্ঘদিন ধরে এমন অব্যবস্থাপনায় জনগণ এখন অভ্যস্ত।

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা মগবাজার-মালিবাগ। যানজট শুরু হলে মগবাজারের সড়কে মানুষের চলাচলও কষ্টকর হয়ে পড়ে। ফুটপাতগুলো থাকে বিভিন্ন শো-রুম, স্টিলের কারখানার কারণে। রাস্তার দুই ধারেই একই চিত্র। তারমধ্যে আবার রেল লাইন। যে জায়গাটি সুরক্ষিত থাকার কথা, সেটি অরক্ষিত।

সরেজমিনে গিয়ে রোববার (৩১ জুলাই) দুপুরের দিকে দেখা গেল একটি ট্রেন আসছে। গন্তব্য কমলাপুর রেলস্টেশন। ট্রেনের হুঁইসেল বাজিয়ে যাচ্ছেন চালক। রাস্তার দুই ধারে ক্রসিং ব্যারিকেডগুলোও নেমে যাচ্ছে। কিন্তু পথচারীরা নির্বিকার। হেঁটে রাস্তা পার হয়েই যাচ্ছেন। মৃত্যু ভয়ও যেন কাজ করছে না তাদের অন্তরে। ট্রেন একদম কাছে চলে আসা অবদি তাদের রাস্তা পারাপার চলছিল।

পথচারীরাই শুরু নয়, মোটর ও বাই সাইকেল চালকদেরও দুর্ঘটনার কথা মাথায় না রেখে অবাধে ক্রসিং বারের নিচ দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ ক্রসিং বারের সামনে গিয়ে সাইকেল শুইয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ ক্রসিং বার মাথার ওপর তুলে বাইক বের করে নিয়ে গেলেন।

মগবাজার ও এফডিসি রেলক্রসিংয়ে এটি নিত্যদিনের ঘটনা। সাধারণ মানুষকে রেললাইনের আশপাশে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে সরকারি নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কাই করেন না কেউ।

সকালের দিকে বেশিরভাগ সময় রেলের এ লাইন দুটিতে মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর রেল স্টেশন ছাড়ার প্রধান রুটও এ দুই লাইন। ব্যস্ততম এলাকায় রেলের লাইন সুরক্ষিত থাকার কথা। কিন্তু কারওয়ান বাজার, এফডিসি, মগবাজার অংশে এমন কোনো সুরক্ষা চোখে পড়ে না।

রোববার সকালে দেখা গেল, একটি ট্রেন মগবাজারের লাইন ধরে কমলাপুরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সংকেত পেয়ে গেট-কিপার ক্রস বার নামিয়ে দেন। কিন্তু মানুষের চলাচল থামেনি। ট্রেন কাছে চলে আসার ৩০ সেকেন্ড পর্যন্তও লাইনের ওপর দিয়ে পথচারীদের যাতায়াত দেখা গেছে। একটি বাইসাইকেল চালকও এ সময় রেললাইন পার হন।

ট্রেনটি চলে যাওয়া পর মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পারাপারের কারণ জিজ্ঞেস করা হয়। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ট্রেনের দূরত্ব দেখে মনে হয়েছে পার হতে পারবো। তাই পার হয়ে গেছি।

মগবাজার রেলক্রসিংয়ের গেট-কিপার নাজমুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন কর। সময় মতো ক্রসিং ব্যারিকেড নামিয়ে দিই। কিন্তু মানুষের চলাচল থামাতে পারি না। সুযোগ পেলেই ক্রসবার উঠিয়ে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ঠেলে নিয়ে বেরিয়ে যায়। পথচারীরা যেন জীবনের মায়াই করেন না।

এ অবস্থায় কোনে দুর্ঘটনা ঘটলে দায় কার প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ট্রেন আসার সংকেত পাওয়ার সাথে সাথেই আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করি। এ সময় কেউ যদি নিয়ম না মানেন, তাহলে দায় কার হবে? যারা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন- তারাই হবেন।

মগবাজার রেলক্রসিংয়ের অপর গেট-কিপার আমিরুল ইসলাম বলেন, সরকার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু সাধারণ জনগণ তা পাত্তা দেয় না। তাদের এত তাড়া কিসের সেটাও বোধগম্য নয়। একটা ট্রেন পার হতে বড়জোর তিন মিনিট সময় নেয়। ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটনার কথা নয়। কিন্তু তারা মানেন না। দোষ হয় আমাদের।

এফডিসি রেলক্রসিং গেটের দায়িত্বে থাকা গেট-কিপার সোহান রহমানের সঙ্গে কথা হলে দুই বছর আগের একটি ঘটনা বাংলানিউজকে জানান তিনি। বলেন, এর আগে মগবাজার রেলক্রসিংয়ের দায়িত্বে ছিলাম। একদিন দেখি দুই ভাই রেললাইন পার হচ্ছেন। বার বার তাদের মানা করি। কিন্তু কথা শোনেননি তারা। পরে ট্রেনের নিচে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়।

আইন ঘাঁটলে দেখা যায়, রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুটের মধ্য দিয়ে মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ। ১৮৯০ সালে গঠিত এ রেল আইন মানেন না, এমন লোকের সংখ্যা বাংলাদেশে অনেক। বরং, আইন মানেন- এমন লোকসংখ্যা হাতে গোনা। রেল লাইনের মধ্যে গরু-ছাগল ঢুকে পড়লে নিলাম করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

আইন আরও শক্ত রেলে কাটা পড়ে আহত ব্যক্তির জন্য। এমন ঘটনা ঘটলে তার বিরুদ্ধেই মামলা করতে পারে রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মানা হয় না সে আইনও।

রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য সচিব শরিফুল আলম বলেন, রেললাইন এলাকায় ১৪৪ ধারা সবসময় জারি থাকে। কেউ যদি আইন অমান্য করে তবে দায় তাদের, রেলওয়ের নয়।

মানুষ আইন না মানলে তার জন্যে শাস্তির ব্যবস্থা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৪৪ ধারা না মানলে আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধান আছে। তবে কোনো প্রয়োগ এ পর্যন্ত হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

বাংলাদেশ সময় : ১৬৫৮ ঘণ্টা, ৩১ জুলাই, ২০২২
এনবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।