ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ জুলাই ২০২৪, ২৪ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

পাবনার রায় বাহুদুর তাড়াশ ভবন জাদুঘর নির্মাণের দাবি

মোস্তাফিজুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২২
পাবনার রায় বাহুদুর তাড়াশ ভবন জাদুঘর নির্মাণের দাবি

পাবনা: দেশের প্রাচীনতম জেলা শহর হিসেবে পাবনার নাম সবার জানা। এই জেলায় বৃটিশ স্থাপনা থেকে শুরু করে রয়েছে জমিদার বাড়ী।

জেলার প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে দুইশ বছরের পুরাতন ঐতিহাসিক বনমালী রায় বাহাদুরের জমিদার বাড়ি তারাশ ভবন।  

প্রাচীন গ্রিক স্থাপনাশৈলীতে তৈরি দুর্লভ এই ভবন দেশে রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। ১৮শ শতকে জমিদার বনওয়ারী লাল রায় এই তারাশ ভবন নির্মাণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এই ভবন বর্তমানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভবনটি সংস্কার ও পরিচর্যা করা হলেও প্রকৃত অর্থে এটি ব্যবহার হচ্ছে না। আর ব্যবহার না হওয়ার কারণে বখাটে আর মাদকাসক্তদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে।  

দিনের বেলায় কেয়ারটেকার থাকলেও রাতে এই স্থানটি অরক্ষিত থাকে। তাই জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য তারাশ ভবনকে জাদুঘর নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

জেলা শহর পাবনার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত তারাশ ভবন। তৎকালীন জমিদার প্রথা প্রচলনের সময় এই তারাশ ভবন নির্মাণ করা হয়। তারাশ জমিদারী ১৭ শতকের প্রথম দিকে বাসুদেব তালুকদার তার অপর নাম নারায়ণদেব চৌধুরী বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার তারাশ উপজেলায় এ জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। বাসুদেব ঢাকার নবান ইসলাম খাঁর অতি বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিলেন। সততা ও অনুগত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ নবাব তাকে তারাশ মহাল বরাদ্দ দেন এবং তাকে রায় চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত করেন।  

বনওয়ারী লাল রায়কে ব্রিটিশ সরকার রায় বাহাদুর উপাধি দেন। ১৮৮২ সালে তার মৃত্যুর পরে দত্তক ছেলে বনমালী রায় তরাশের পরবর্তী জমিদার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৮ শতকের কোনো এক সময় এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়। পূর্বমুখী দ্বিতল এই ভবনটি প্রায় দেড় একর জায়গার ওপর নির্মিত। চারটি রোমান স্তম্ভের ওপরে আকর্ষণীয় বাড়িটি প্রাচীন কীর্তির সাক্ষ্য বহন করে। বাড়িটি চারপাশে সীমানা প্রাচীর দেওয়া রয়েছে। সম্মুখে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ শেষ প্রান্তে প্রধান প্রবেশ ফটক। বিশাল আকৃতির অর্ধবৃত্তাকার ফটক চারটি স্তম্ভ দিয়ে নির্মিত। অপরূপ কারুকাজ সমৃদ্ধ এই জমিদার বাড়িটি নিচতলা ও দ্বিতীয় তলাতে ১৬টি কক্ষ রয়েছে। পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের জন্য ভবনের মোট ৮০টি দরজা ও ৫৩টি জানালা রয়েছে। নিচতলা থেকে ওপর তলাতে ওঠার জন্য ভবনের উত্তর দিকে একটি কাঠের সিঁড়ি রয়েছে। তারাশ ভবনের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৮ সালে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে।

তাড়াশ ভবন ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মেহেদী হাসান ও শামসুর নাহার বর্ণা বলেন, ছুটির দিনগুলিতে সবার মতো আমিও ঘুরতে বের হই। তবে পাবনাতে ঘুরে বেড়ানোর তেমন জায়গা নেই। মধ্য শহরে এই তারাশ ভবন বিনোদন প্রিয় মানুষদের একটু প্রশান্তির স্থান হতে পারে।  

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শাহাজাদপুর অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত (কাস্টোডিয়ান) মো. আবু সাঈদ ইনাম তানভিরুল বলেন, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে পাবনার তারাশ ভবনে নিরাপত্তাজনিত কারণে আনসার দেওয়া হবে। দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্যের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া পরিকল্পনা হয়ে গেছে এটি হতে যাচ্ছে পাবনার জাদুঘর। শুধু এটি সময়ের ব্যাপার।

সামনে ফুলের বাগান আর প্রধান সড়ক থেকে তাকালেই চোখে পরবে দৃষ্টিনন্দন শৈল্পিক স্থাপনা। প্রায় দুইশ বছরের পুরাতন বনমালী রায় বাহাদুর ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি তারাশ ভবন। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পরে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ ভবনকে সংরক্ষিত ইমারতের আওতাভুক্ত করে। দীর্ঘ সময় অবহেলা আর অযত্নে থাকার পরে বর্তমান সরকারের নজরদারিতে ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়ির সংস্কার কাজ করা হয়। তবে সেটিও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলে পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া-পাওয়া একটি জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর নির্মাণের।  

বৃহত্তর পাবনা জেলার নানা স্থাপনা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে মন্দির, দাতব্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি বিনোদন সব স্থাপনা নির্মাণে তিনি কাজ করেন। তিনি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক রায় বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত হন। বনমালী রায়কে বৃহত্তর পাবনা জেলার শ্রেষ্ঠ জমিদার বলা হয়।  

১৯১৪ সালে তার মৃত্যু হয়। ১৯৫০ সালে জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বনমালী রায়ের দত্তক দুই ছেলে এই জমিদারী পরিচালনা করতেন। বনওয়ারী লাল ও তার পরবর্তী ৪ পুরুষের মূল বসবাস ছিল শাহাজাদপুর অবস্থিত বনওয়ারী রাজবাড়িতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।