ঢাকা: রাজধানীর মুগদায় দাফনের ৩ দিন পর কবর থেকে তোলা হয়েছে ১০ মাসের শিশু তানজিনার মরদেহ।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে শিশুটির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
শিশুটি নরসিংদির বেলাবো উপজেলার চরকাশিরনগর গ্রামের অটোরিকশাচালক কিতাব আলীর মেয়ে।
মর্গে শারীরিক প্রতিবন্ধী কিতাব আলী জানান, তিনি ভাড়ায় অটোরিকশা চালান। ৯ বছর আগে তানিয়াকে বিয়ে করেন তিনি। পরিবার নিয়ে মুগদা পূর্ব মানিকনগর সোহাগ মিয়ার টিনশেড বাড়িতে ভাড়ায় থাকেন। তানভির নামে ৭ বছরের আরেকটি ছেলে রয়েছে তাদের। এটি তার দ্বিতীয়ে বিয়ে। তানিয়াও জন্মগত ভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী। এছাড়া মানসিক সমস্যা রয়েছে। আর তার প্রথম স্ত্রী রাজশাহীতে থাকেন।
তিনি জানান, ১২ আগস্ট শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে তিনি রিকশা চালিয়ে বাসায় ফেরেন। এরপর গোসল করে ঘুমিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর স্ত্রী তানিয়া তাকে ডাকাডাকি করে বলেন, তানজিনা কোথায়? তখন কিতাব আলী সন্তানকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। বাসার ভেতরই বালতির ভেতর মাথা নিচের দিকে দিয়ে পড়া অবস্থায় দেখতে পান। তবে বালতিতে সামান্য পানি ছিলো। এরপর প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিশুটির খালা মার্জিয়া আক্তার জানান, ওইদিন খবর পেয়ে গ্রামের বাড়ি নরসিংদি থেকে তিনি ও তার আরেক বোন রত্না ঢাকায় আসেন। বিকেলে ঢাকায় পৌঁছে দেখেন, শিশুটিকে মুগদার কুমিল্লাপট্টি কবরস্থানে নিয়ে দাফন করা হয়েছে। তবে মৃত্যুর বিষয় নিয়ে তাদের মনে সন্দেহ জাগে।
পরবর্তিতে সেখান থেকে তারা কিতাব আলীর টিনশেড বাসায় গেলে প্রতিবেশীদের মুখে মৃত্যু নিয়ে নতুন তথ্য শুনতে পান। এরপর বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসা করলে প্রতিবেশীরা জানান, শিশুটির মা তানিয়াই তাকে গলা টিপে মেরেছে। তখন তারা মুগদা থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। পরে পুলিশ এসে শিশুটির বাবা-মা দুজনকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তখন তানিয়া পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, গলা টিপে হত্যার পর মরদেহ বালতিতে ফেলে রেখেছিলেন তিনি।
মুগদা থানাধীন মুগদাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) নগেন্দ্র কুমার দাশ জানান, শিশুটির মরদেহ দাফনের পর মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ হলে শিশুটির বাবা কিতাব আলী ১৩ আগস্ট তার স্ত্রী তানিয়াকে আসামীকে করে থানায় মামলা করেন। পরে শিশুর মা তানিয়াকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বলেছেন, রাগ ও ক্ষোভে শিশু সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করেছেন। এরপর বালতির ভিতর উল্টো করে রেখে দেন। গ্রেফতারের পর সেদিনই তাকে আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাকে সেখান থেকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
তিনি আরও জানান, আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গতকাল (১৫ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লাপট্টির হাজী নাজিমউদ্দিনের পারিবারিক কবরস্থান থেকে শিশুটির মরদেহ উত্তোলন করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
এজেডএস/এসএ