ঢাকা, রবিবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সময়মতো পৌঁছাতে ঘোড়ায় চড়ে স্কুলে যান শিক্ষক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২২
সময়মতো পৌঁছাতে ঘোড়ায় চড়ে স্কুলে যান শিক্ষক ঘোড়ায় চেপে স্কুলে যাচ্ছেন এটিএম লাল মোহাম্মদ।

রাজশাহী: এক সময় কেবল অভিজাত শ্রেণীই ঘোড়ায় চেপে যাতায়াত করতেন। এছাড়া শক্তিশালী ঘোড়ায় চড়েই যুদ্ধে যেতো সৈন্যসামন্ত।

তবে চাকা সভ্যতার দ্রুত বিকাশের পর ক্রমেই ওই রাজকীয় বাহন বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর এই প্রযুক্তির যুগে এসেও শিক্ষক এটিএম লাল মোহাম্মদ ঘোড়ার পিঠে চেপে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেছেন। তবে নিছক শখের বশে নয়, গ্রামের রাস্তার অবস্থা খুবই শোচনীয়! আর এই রাস্তা ধরেই প্রতিদিন তাকে ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় তাকে। তাই শরীরের ধকল সামলাতে ছেড়েছেন মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেল। ফিরে গেছেন সেই রাজা-প্রজার যুগে। ধরেছেন ঘোড়ায় লাগাম।
এটিএম লাল মোহাম্মদ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নের নানছোর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সহকারী শিক্ষক হিসেবে উত্তর জামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মরত আছেন।

বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। মাঝের চার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, যানবাহনে যাতায়াত করা দুষ্কর! তাই বাহন হিসেবে ঘোড়াকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। প্রায় তিন বছর ধরে তিনি এভাবেই প্রতিদিন যাওয়া ও আসা মিলিয়ে গ্রামের ২০ কিলোমিটার ভাঙাচোরা পথ পাড়ি দেন।

এটিএম লাল মোহাম্মদ বাংলানিউজকে জানান, বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। তবে হুলিখালী থেকে জামালপুর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কের একেবারেই বেহাল দশা! বর্ষায় কাদাজলে একাকার থাকে পুরো সড়ক। আর গ্রীষ্মকালে ধূলোবালুতে যাতায়াতে সমস্যায় পড়তে হয়। এক সময় বাইসাইকেলে স্কুলে যাতায়াত করতেন। পরে মোটরসাইকেল বেছে নেন। কিন্তু সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছানো যেতো না। তাই শেষমেষ বিকল্প বাহন হিসেবে ঘোড়াকে বেছে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, অন্য বাহনের চেয়ে ঘোড়ায় যাতায়াত পরিবেশের জন্য যেমন ভালো, তেমনি নিরাপদও। তিন বছর আগে উত্তর জামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির কিছুদিন পর যাতায়াতের সুবিধার জন্য পাশের জেলা নওগাঁর মহাদেবপুরে যান। সেখান থেকে এই ঘোড়াটি কিনে নিয়ে আসেন। ঘোড়াকে নিজের মতো করে পোষও মানান। এখন থেকে ঘোড়ায় চড়ে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন। এতে যাতায়াতের দুর্ভোগও কমেছে পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পারছেন।

বিষয়টি নিয়ে প্রথম দিকে অনেকে হাসাহাসি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুরুর দিকে এলাকার লোকজন ঠাট্টা করতেন। তবে এখন আর করেন না। সবাই বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। অন্য বাহনের চেয়ে ঘোড়ায় যাতায়াত সবদিক থেকেই নিরাপদ। প্রতিদিন সকালে বিদ্যালয়ে যেতে নিজে প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি ঘোড়াকেও প্রস্তুত করেন। ভোর থেকে উঠে পরিবারের সদস্যরাও তার ঘোড়াকে প্রস্তুতের কাজে সহযোগিতা করেন।

আর ঘোড়া নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার বিষয়টি বেশ উপভোগ করেন শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মাসুম বলেন, স্যার ঘোড়া নিয়ে স্কুলে আসায় তাদেরও খুব আনন্দ হয়। ঘোড়ায় চড়তে বেশ ভালো লাগে। স্যারকে বললে তিনি ঘোড়ায় চড়তে দেন। মাঝেমধ্যে ঘোড়াকে আমরা খেতেও দেই।

জানতে চাইলে রাজশাহীর বাগমারার উত্তর জামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বয়েন উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, লাল মোহাম্মদ একজন সময়নিষ্ঠ ও দায়িত্ববান শিক্ষক। স্কুলে সময়মতো আসতে তিনি ঘোড়াকে বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। শিক্ষার্থীরাও বিষয়টি দেখে আনন্দিত হয়। পেশার প্রতি একাগ্রতা দেখে তাদের কাছেও বিষয়টি খুব ভালো লাগে।

বাগমরার সোনাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজাহারুল হক বলেন, হুলিখালী-জামালপুর পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা। এই কারণে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ওই রাস্তায় দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২২
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।