ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভুল ইনজেকশনে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২২
কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভুল ইনজেকশনে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ  মৃত শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন শুভ

সাভার (ঢাকা): রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভুল ইনজেকশন পুশ করায় সাভারের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু অভিযোগে উঠেছে। এমনকি মৃতদেহ ১১দিন লাইফ সাপোর্টে রেখে মৃত্যু সনদ ছাড়াই বুঝিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন মৃত শিক্ষার্থীর স্বজনরা।

 

ভুক্তভোগীর নাম সাজ্জাদ হোসেন শুভ (১৬)। শুক্রবার (২৬ আগস্ট) তার মরদেহ মানিকগঞ্জ জেলায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়েছে।  

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে এসব অভিযোগ করেন সাজ্জাদের চাচা মোনাজাত হোসেন।

মৃত সাজ্জাদ হোসেন শুভ মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার মধ্য চারিগ্রামের শাহজাহানের ছেলে। সাভার ব্যাংক কলোনি এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থেকে সে সাভার রেডিও কলোনি মডেল স্কুলে পড়াশোনা করছিল।

মোনাজাত হোসেন বলেন, জ্বর ও মাথা ব্যথার কারণে গত ১৫ আগস্ট আমার ভাতিজা শুভকে সাভারের পপুলার হাসপাতালে দেখাই। সেখানে ডাক্তার জাকিরুল ইসলাম শুভকে দেখে কিছু টেষ্ট দিয়ে কু্র্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। আমরা সেদিনই রাত ৯টার দিকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালটির ৫ম তলার পুরুষ ওয়ার্ডের ৩৮ নম্বর বেডে শুভর চিকিৎসা চলছিলো। সেখানে একদিন পর শুভ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিলো। সেদিন একজন ডাক্তার ও নার্স এসে শুভকে ‘ভেকুরোনিয়াম ব্রোমাইড’ নামের একটি ইনজেকশন পুশ করেন। এরপর রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। পরে শুভর বাবা বিষয়টি বুঝতে পেরে ইনজেকশনটির মোড়কসহ ফাইলগুলো নিজের কাছে রাখলে ডাক্তার, নার্স ও সিকিউরিটি গার্ড তার কাছ থেকে ধস্তাধস্তি করে সব কিছু ছিনিয়ে নেয়। এসময় আমি গিয়ে আমার ভাতিজাকে দেখতে চাইলে তাকে আর দেখতে দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, পরে জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করলে পুলিশ আসে। পুলিশ আসার পর ডাক্তাররা আমাকে আইসিইউতে ডাকে। আইসিইউতে যাওয়ার পর সেখানকার ইনচার্জ আমাকে বলেন, একটি ভুল ইনজেকশন দেওয়ার ফলে শুভর হার্ট ব্রেক করে ও লাং অচল হয়ে যায়। এরপর ক্রমান্বয়ে আমাদের অপেক্ষা করতে বলে লাইফ সার্পোট দিয়ে শুভকে জীবিত দেখানো হয়েছে। শেষমেশ ডাক্তাররা বলেন, শুভর অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে তাকে আর বাঁচানো সম্ভব নয়।  

মোনাজাত হোসেন অভিযোগ করে বলেন, শুভকে দিয়ে দিতে বললে ডাক্তাররা লাইফ সার্পোট খুলতে আমাদের অনুমতি চাইছিলো৷ কিন্তু তারা ডেথ সার্টিফিকেট (মৃত্যু সনদ) দেবে না বলে জানায়। পরে বাধ্য হয়ে শুক্রবার মরদেহ নিয়ে আসি হাসপাতাল থেকে।

মোনাজাত আরও অভিযোগ করেন, ইনজেকশনটি পুশ করার পর ডাক্তাররা শুভকে দেখতে দেয়নি। তবে আশেপাশের রোগীরা জানিয়েছে ১৬ তারিখেই রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। ঘটনা ধামাচাপা দিতে এতদিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিলো।  

হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে লাইফ সাপোর্টের কোনো বিল নেয়নি বলেও জানান মৃত শিক্ষার্থী শুভর চাচা মোনাজাত হোসেন।  

সাভারের পপুলার হাসপাতালে ম্যানেজার আব্দুল খালেক বলেন, ছেলেটির পরিবার এসেছিল আমাদের কাছে। যতটুকু শুনেছি ডাক্তার জাকিরুল (পপুলার হাসপাতালের চিকিৎসক) স্যার ইনজেকশন লিখেছিলেন একটা, আর সেখানকার (কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল) ডাক্তার বা নার্স ইনজেকশন দিয়েছে আরেকটা। বিষয়টি আমাকে জাকিরুল স্যারই বলেছেন।

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার পরিদর্শক (ওসি) কাজী হাসান হক বলেন, এমন কোনো ঘটনার কথা এখনো শুনিনি। কেউ এখনো অভিযোগ দিয়েছে কিনা আমরা জানা নেই। তবে হাসপাতালটি আমাদের থানা এলাকায়। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২২
এসএফ/এসএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।