ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বিদেশ থেকে আসা ‘ডলারের’ ফাঁদে খোয়ালেন ১০ লাখ টাকা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২২
বিদেশ থেকে আসা ‘ডলারের’ ফাঁদে খোয়ালেন ১০ লাখ টাকা

ঢাকা: বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা সেজে ইমোতে কল করে জানানো হয় বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে। পার্সেলের কাস্টমস ফি বাবদ বিকাশে ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়।

এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে বলা হয় পার্সেলে অবৈধ ডলার এসেছে। এ অবস্থায় মামলা থেকে বাঁচাতে দাবি করা হয় আরও টাকা।  

এভাবে ধাপে ধাপে ডলারের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেওয়া হয় টাকা। গত দেড় বছরে ১০ লাখেরও বেশি টাকা খুইয়েছেন কবির হোসেন (ছদ্মনাম)। ক্রমাগত টাকা দিয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে একপর্যায়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দ্বারস্থ হন তিনি। গত ২০ আগস্ট সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে করা এ অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন- জাহিদুর রহমান নিশাদ (২৮) ও অপু আহম্মেদ (২৩)।

সোমবার (২৯ আগস্ট) সাভারের ইমান্দিপুর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস বিকাশ ও নগদ নম্বারসহ প্রাতরণার কাজে ব্যবহৃত ইলেট্রনিক ডিভাইস জব্দ করা হয়।

সাইবার ইনভেস্টিগেশনস অ্যান্ড অপারেশনসের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী আবু সাঈদ জানান, গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি কবির হোসেনের ইমোতে ফোন করেন লামিয়া নামের একজন। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা ইমিগ্রেশন থেকে লামিয়া বলছি। আপনার নামে একটি বিদেশি পার্সেল এসেছে। যিনি এই পার্সেলটি পাঠিয়েছেন তিনি কাস্টমস ফি অপরিশোধিত রেখেছেন। তাই পার্সেলটি ছাড়াতে আপনাকে কাস্টমস ফি বাবদ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। ’

পার্সেলটি পেতে কবির হোসেন প্রতারক চক্রের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। এর ২-৩ দিন পর কবির হোসেনকে কাস্টমস অফিসার আরেফিন পরিচয়ে ভিন্ন একজন ইমো নম্বর থেকে কল করে বলেন, ‘আপনার নামে যে পার্সেলটি এসেছে সেটি আমরা স্ক্যান করে অবৈধ ইউএস ডলার পেয়েছি। আপনার নামে এখন মামলা হবে। ’

তখন মামলা থেকে বাঁচতে আরও দেড় লাখ টাকা দাবি করা হয় কবিরের কাছে। কবিরও ভয় পেয়ে প্রতারক চক্রের দেওয়া কয়েকটি নগদ ও বিকাশ নম্বরে দেড় লাখ টাকা পাঠান।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন পর কাস্টমস অফিসার পরিচয় দেওয়া আরেফিন ইমোতে কল করে কবির হোসেনকে জানান, ‘আপনাকে বাঁচাতে গিয়ে আমি বিপদে পড়ে গেছি। আমি বিপদে পড়লে আপনিও বিপদে পড়ে যাবেন। এখন আপনার এবং আমার বিপদ হতে রেহাই পেতে আরও টাকা লাগবে। ’

কবির তার কথায় গুরুত্ব না দিলে প্রতারক চক্রটি কৌশলে তার তথ্য হাতিয়ে নিয়ে ইমেইলের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে আরও টাকা চাইতে থাকে। একপর্যায়ে ইমেইলে জানানো হয়, ‘অবৈধ ইউএস ডলার আনায় আপনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আপনি টাকা না দিলে আপনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হবে। ’

কবির হোসেন ভয় পেয়ে আরও দেড় লাখ টাকা পাঠায় প্রতারক চক্রের দেওয়া নগদ নম্বরে। এভাবে গত দেড় বছর ধরে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে কবির হোসেনের কাছ থেকে দশ লাখেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি।

অবশেষে কবির প্রতারক চক্রের ফাঁদে পরেছেন বুঝতে পেরে গত ২০ আগস্ট সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে অভিযোগ করেন। যার প্রেক্ষিতে সাভার থেকে চক্রের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান এএসপি কাজী আবু সাঈদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২২
পিএম/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।