ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিদ্যুতের দাম নিয়ে ব্লু ম্যারিন এনার্জির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২
বিদ্যুতের দাম নিয়ে ব্লু ম্যারিন এনার্জির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

কক্সবাজার: দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ বিল এবং লোডশেডিং কমানোর দাবিতে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ব্লু ম্যারিন এনার্জি লিমিটেডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে ব্যবসায়ীসহ এলাকাবাসী। এসময় তারা ‘বিদ্যুৎ বিল কমাই দে,নইলে দ্বীপ ছাইড়া দে’  বলে স্লোগান দেয়।

 

এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ২০১৯ সাল থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে ব্লু ম্যারিন এনার্জি লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তখন বিদ্যুতের দাম ছিল প্রতি ইউনিটে আবাসিক ৩২ আর বাণিজ্যিকে ৪২ টাকা করে।

এরপর ২০২২ সালের জুনে একদফা ৫ টাকা করে বাড়িয়ে ৩৭ ও ৪৭ টাকা করা হয়। একই বছর আগস্টে এসে বিলের সঙ্গে শতকরা ১৫ টাকা ভ্যাট যোগ করা হয় এবং মিটার চার্জ দ্বিগুন করে দেওয়া হয়। এতে ১৫ ভাগ ভ্যাটসহ বাণিজ্যিক বিল ইউনিটের দাম পড়ছে প্রায় ৫৫ টাকা। শুধু তাই নয়, মাত্র চারমাসের মধ্যে আবার ইউনিট প্রতি ভ্যাটসহ প্রায় ১০ টাকা বাড়ানোর পায়তারা শুরু করেছে ব্লু মেরিন।

এ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ এবং চারমাসের মধ্যে বিদ্যুতের দাম ফের বাড়ানোর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে দ্বীপের বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরা বিক্ষাভ করেছে। এ সময় ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার, পোষ্টার প্রদর্শন করেন।  
প্রতিবাদী এ কর্মসুচিতে সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, রিসোর্ট মালিক, রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ, দোকান মালিকসহ ভুক্তভোগিরা অংশ নেয়।
স্থানীয় মারমেইট রিসোর্টের মালিক মো. মাহাবুব বাংলানিউজকে বলেন, ২০২২ সালেরর জুনে নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চয়তা দিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। আমরা ব্যবসায়ীরাও চিন্তা করেছি বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবিচ্ছন্ন হলে আমাদের অতিরিক্ত জেনারেটরের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না । বিশেষ করে রাতের বেলায় লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে বেশি।

তিনি বলেন, রাতের বেলায় বেশির সময় বিদ্যুৎ না থাকার কারণে এই পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের যথাযথ সেবা দিতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। এমনকি অনেক সময় পর্যটকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির ঘটনাও ঘটছে।

দ্বীপের বাসিন্দা ও একটি রিসোর্টের ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন বলেন, পুরো দ্বীপে ব্লু মেরিন বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও তাদের কোনো কন্ট্রোলরুম নেই। একশো বার ফোনকল করলেও তারা ধরে না। এভাবে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও তারা ফোন ধরবে না- তখন এর দায় কে নেবে?

২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার শর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে তারা গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আবার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এই ব্যয় বহন করার মতো দ্বীপবাসী এবং ব্যবসায়ীদের আর্থিক সক্ষমতা নেই।

দ্বীপের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা বিভিন্ন ভাবে শুনেছি ১৪ অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিক বিল ইউনিট প্রতি ৬২ টাকা করা হচ্ছে। দ্বীপের বর্তমান এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুত বিল বাড়ানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তরুণ উদ্যোক্তা ও রিসোর্ট ব্যবসায়ী হাসানুর রহমান উল্লাস বাংলানিউজকে বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ হওয়াতে আমরা এমনিতেই অতিরিক্ত খরচের চাপে আছি। যে কারণে সর্বস্তরের পর্যটক হারাচ্ছে দ্বীপবাসী। এর মধ্যে চাপিয়ে দেওয়া এই অনাকাঙ্ক্ষিত বিদুৎ বিল আমাদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এতে পর্যযটন শিল্প হুমকির মুখে পড়বে।
 
ই-ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান আহ্বায়ক ইমরানুল আলম বলেন,  সেন্ট মার্টিন মূলত মৌসুমী পর্যটন স্থান। এখানে ৩ থেকে ৪ মাস পর্যটন ব্যবসা চলে। এই চার মাসের ব্যবসার ওপর পুরো বছর চলতে হয়। এই অবস্থায় এই অসহনীয় বিদ্যুৎ বিল সবার জন্য অভিশাপ।
 
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় ব্লু মেরিন এনার্জি লিমিটেডের এই প্রকল্পের ইনচার্জ মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ঢাকায় অফিস করেন জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুৎ বিল বাড়ানোর সিদ্বান্তটি মালিক পক্ষের। তবে ১০ টাকা নয়, ইউনিট প্রতি পাঁচ টাকা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তবে কত তারিখ থেকে তা কার্যকর হবে সে বিষয়ে আমার জানা নেই।

চার মাসের মধ্যে দুইবার বিল বাড়ানোর বিষয়টি কতটুকু যৌক্তিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর মধ্যে দুই দফা তেলের দাম বেড়েছে। দিনে সোলার প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চললেও রাতে জেনারেটর চালাতে হয়। যে কারণে ব্যয় বেড়েছে অনেকগুণ।

মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রায় ৮০০ মিটার রয়েছে। আমাদের যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, তা এই ৮০০ গ্রাহকের জন্য পর্যাপ্ত। কিন্তু  দ্বীপে বর্তমানে ২৫০ থেকে ৩০০ ইজিবাইক চলছে, যা আমাদের ধারণ ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু যেকোনোভাবে এই বিদ্যুৎ থেকেই এগুলো চার্জ দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে গেছে।
 
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কেউ আমাকে অভিযোগ করেননি। বিষয়টিতে যেহেতু জনস্বার্থ জড়িত, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এক তরফাভাবে বিদ্যুত বিল চাপিয়ে দিচ্ছে কিনা তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২
এসবি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।