টাঙ্গাইল: পদ বঞ্চিত হয়ে সংগঠন ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা সানোয়ার হোসেন। নিজের এ সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে বুঝতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তিনি।
এর আগে সংগঠন ছাড়ার ঘোষণা ও দুধ দিয়ে গোসল করে ভাইরাল হন সানোয়ার। সোমবার (১৭ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিঃর্শত ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। এ সময় তিনি ছিলেন অশ্রুসজল।
সানোয়ার আজগানা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে যুবলীগের সম্মেলনে সভাপতির প্রার্থী ছিলেন। সোমবার ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, যে কথাগুলো ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে তার জন্য আমি ক্ষমা চাই। আমার পরিবার আজগানা ইউনিয়নে আওয়ামী পরিবার। আমার পরিবার ছাড়া এ অঞ্চলে আগে কোনো সক্রিয় আওয়ামী পরিবার ছিল না। এ দলটির জন্য আমার পরিবারের অনেক ত্যাগ রয়েছে। আমার বাবা আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতা ছিলেন।
গত ১৬ জানুয়ারি উপ-নির্বাচনে আমি দলের প্রার্থীর পক্ষে এজেন্ট ছিলাম। অনেক নেতাকর্মীরা বলেছে তুমি নেতৃত্বে আসো। তোমার দরকার আছে। সভাপতি হতে আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেকেই বলেছে তোমারটা হয়ে যাবে। যারা গত নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছের তারাই পদটা পেয়ে গেছেন। আমি রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি। আমি এ কাউন্সিলের ব্যাপারে ক্ষোভে ধৈর্য ধরতে পারিনি। আমি সবার কাছে ক্ষমা চাই। যুবলীগের ভাইদের কাছেও ক্ষমা চাই। জননেত্রী শেখ হাসিনার পা ধরে ক্ষমা চাই। মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে না। সবাই আমার ভুলকে ক্ষমা করে দিবেন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সানোয়ার বলেন, আমি নিজের বাড়িতেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ভিডিও করি। এরপর সেটি সকলের উদ্দেশ্যে ফেসবুকে আপলোড দিয়েছি।
উপজেলার আজগানা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ শিকদার বলেন, সানোয়ারের বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। তিনি যুবলীগের কোনো সক্রিয় কর্মী ছিলেন না। তিনি মানসিক বিকারগ্রস্ত একজন মানুষ। দেশের বৃহৎ একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে তিনি মিথ্যাচার করেছেন। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সানোয়ারের অভিযোগের ব্যাপারে লতিফ বলেন, যারা দলের ত্যাগী নেতা তাদেরকেই সম্মেলনের মাধ্যমে আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।
পদ বঞ্চিত হয়ে গতকাল রোববার রোববার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খাটিয়ারহাট বাজারে দুধ দিয়ে গোসল করেন সানোয়ার। পরে তার গোসলের দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।
জানা গেছে, গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) আজগানা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। এতে সভাপতি পদে তিন ও সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন প্রার্থী হন। সভাপতি প্রার্থীদের একজন ছিলেন সানোয়ার। পরে উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতারা একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। এতে আজগানা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের আহ্বায়ক হন রোমান সরকারকে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় সুরুজ আলমকে। এছাড়া কার্যকরী নির্বাহী সদস্য ১ নম্বরে রাখা হয় সানোয়ার হোসেনকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সানোয়ার স্থানীয় খাটিয়ারহাট বাজারে দুধ দিয়ে গোসল করেন।
গোসলের সময় সানোয়ার বলেছিলেন, আমি আওয়ামী লীগের এই দুর্নীতিগ্রস্ত দল থেকে অব্যাহতি নিলাম। আওয়ামী লীগের কোনো রাজনীতি বা দলের কোনো কার্যক্রমে কোনো নেতার সঙ্গে থাকবো না। আমি কানধরে উঠবস করছি আওয়ামী লীগের কোনো রাজনীতি কোনো অনুষ্ঠানে যাবো না। কারণ ওরা হলো পাপিষ্ঠ। মরার আগে আমি আওয়ামী লীগের হয়ে মরতে চাই না। আমি মুসলমান আমরা রাসুলের কালেমা পড়ে মরতে চাই। এই জালেমদের হাত থেকে বাঁচতে চাই। এসময় সানোয়ার হোসেনের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও দুধ দিয়ে ধুয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২২
এমজে