এইচ এম নাঈম, ঝালকাঠি: দেশে মা মাছ রক্ষায় ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে গত ৭ অক্টোবর থেকে। এর ১২ দিন পর ১৮ অক্টোবর আমাদের শুধুমাত্র ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।
একথাগুলো ক্ষোভের সঙ্গে জানান ঝালকাঠি জেলে পল্লীর মৎস্যজীবী ওধির মালো। শুধু ওধির মালো একাই না, এরকম প্রত্যেক জেলেরই রয়েছে অমানবিক কষ্ট।
মা ইলিশ রক্ষায় নিষিদ্ধ সময়ে মৎস্য বিভাগের তালিকাভুক্ত জেলেদের ভিজিএফের চাল দেওয়ার কার্যক্রম মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে শুরু হয়েছে। জেলায় নিবন্ধিত ৬ হাজার ৮৩ জন জেলের মধ্যে ভিজিএফ চাল সহায়তা পেয়েছেন অর্ধেকেরও কম, মাত্র ৩ হাজার ৮৫০ জন।
এদিন ঝালকাঠি পৌরসভা থেকে এলাকার জেলেদের ভিজিএফ সহায়তা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার। এ সময় প্যানেল মেয়র তরুন কর্মকার, তাছলিমা বেগম, কাউন্সিলর হাফিজ আল মাহমুদ, হাবিবুর রহমান হাবিল, এসএম আলআমিনসহ পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
মা ইলিশ রক্ষায় গত ৭ অক্টোবর থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২দিন এই মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে দেশজুড়ে চলছে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা। এতে অলস সময় কাটাচ্ছেন সারা দেশের মতো দক্ষিণ উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির জেলেরাও। কিন্তু বেকার এসব জেলের সংসারের ব্যয়ভার বহনের পাশাপাশি ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’হিসেবে দাঁড়িয়েছে দাদন ও এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ। জেলেদের অভিযোগ কোনো ধরনের উপার্জন না থাকলেও তাদের কিস্তি পরিশোধে চাপ দেওয়া হচ্ছে। তাই নদীতে নামতে না পারার এই সময়ে এনজিওর কিস্তি বন্ধ ও বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত গত ৭ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময় ইলিশ আহরণ, বাজারজাতকরণ, বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা মেনে জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে নামছেন না জেলেরা। যারা নামছেন তাদের ধরে আইনের আওতায় দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
৭ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে ১৮ অক্টোবর সকাল ৭টা পর্যন্ত জেলায় মোট ৯ জনকে একবছর করে কারাদণ্ড, ২৯ লাখ ৮৪০০ মিটার জাল জব্দ করে তা লোকালয়ে জনসম্মুখে পুড়িয়ে ফেলা এবং জব্দকৃত ১৫০ কেজি ইলিশ বিভিন্ন এতিম খানায় বিতরণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ।
বন্ধ হয়ে গেছে নদী কেন্দ্রিক সব মৎস্য আড়ৎ, মাছ ঘাট। থেমে গেছে মহাজন আর ইলিশ শ্রমিকদের হাঁকডাক। বেকার হয়ে পড়েছেন ইলিশের ওপর নির্ভর জেলেরা। তারা এই সময়ে পুরনো ছেঁড়া জাল আর নৌকা মেরামত করে অলস সময় পার করছেন। এ অবস্থায় কারো ভাগ্যে দুই বেলা খাবারও জুটছে না ঠিক মতো। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও তা পরিমাণে খুবই অপ্রতুল।
জেলেরা জানান, ইলিশ ধরার জালসহ অন্যান্য উপকরণ কিনতে প্রতি বছর চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। তারপর ঋণদাতা মহাজন আর বেপারির কাছেই তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করতে হয় রূপালি ইলিশ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই দেনার বোঝা টানছেন অনেকে জেলে। এর মাঝে আবার এনজিওর ঋণের চাপে হতে হয় দিশেহারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা নদীতে যেতে না পারায় পাড়, বেড়িবাঁধ, রাস্তার পাড় কিংবা বাড়ির উঠানে বসে জাল মেরামত করে অলস সময় পার করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, ১৮ অক্টোবর ২০২২
এমএমজেড