ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ক্ষুরের ক্ষত না শুকাতেই এসিড সন্ত্রাসের শিকার রামুর দুই যুবক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২২
ক্ষুরের ক্ষত না শুকাতেই এসিড সন্ত্রাসের শিকার রামুর দুই যুবক হাসপাতালে ভর্তি এসিড দগ্ধ দুই যুবক

কক্সবাজার: রাতে বাড়ি ফেরার পথে প্রায় একমাস আগে দুর্বৃত্তদের ধারালো ছুরি-ক্ষুরের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত সেই শরীর এখনো ভালভাবে শুকায়নি। এর একমাসের মধ্যে এবার এসিড সন্ত্রাসের শিকার হলেন কক্সবাজারের রামুর সেই টিপু বড়ুযা (৩৪) ও দীপক বড়ুয়া (৩৩) নামে দুই  বৌদ্ধ যুবক।

 

মঙ্গলবার ( ২৫ অক্টোবর) রাত ১০ টার দিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ঘরে ফেরার পথে রামুর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী স্টেশনের ভিক্টর প্লাজার সামনে  প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে ।

তবে তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারীদের শনাক্ত করা না গেলেও পাড়া প্রতিবেশীরা বলছেন,পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আহতদের ভগ্নিপতি নিকেল বড়ুয়া নামে এক পুলিশ সদস্য পারিবারিক কলহের জের ধরে হত্যার উদ্দেশ্যে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন।

টিপু রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের দ্বীপ শ্রীকুল গ্রামের নিরধন বড়ুয়ার ছেলে, আর দীপক একই গ্রামের শুভধন বড়ুয়ার ছেলে।

উল্লেখ্য  এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়ি ফেরার পথে রামুর শ্রীকুল মৈত্রী বিহারের সামনে এই দুই যুবককে ছুরি ও ক্ষুর দিয়ে গুরুতর আঘাত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় শতভাগ সফল না হওয়ায় ভগ্নিপতি নিকেল বড়ুয়া এবার এসিড সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়েছেন এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।

দিপক বড়ুয়া জানান, রাতে রামু উপজেলা পরিষদের গেটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। এসময় রামু বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন ভিক্টরপ্লাজার সামনে পৌঁছালে চলমান একটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে কি যেন ছুঁড়ে মারে। এতে মুহূর্তেই তাদের শরীর ঝলসে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ধারনা করেছি, দুর্বৃত্তরা এসিড ছুঁড়ে মেরেছে। বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় তারা দুইজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন।

চমেক হাপসাতাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, টিটু বড়ুয়া ও দিপক বড়ুয়া নামে দুই জন ক্যামিক্যাল বার্ন নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে টিটু বড়ুয়ার ২০ শতাংশ ও দিপক বড়ুয়া ১৫ শতাংশ বার্ন রয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

যেহেতু পোড়া রোগী ৪৮ ঘণ্টার আগে শঙ্কা মুক্ত বলার সুযোগ নেই। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। বলেন, ডা রফিক।

ঘটনার তীর ভগ্নিপতি পুলিশ সদস্যর দিকে:  আহত টিপু বড়ুয়া বাংলানিউজকে জানান, তার ছোট বোন ইমু বড়ুয়াকে ২০১৬ সালে হাজারীকুল গ্রামের মৃত প্রদীপ বড়ুয়ার ছেলে পুলিশ কনেস্টেবল নিকেল বড়ুয়ার সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকে তার বোনের সঙ্গে পারিবারিক কলহ লেগে আছে। এক পর্যায়ে  নিকেল বড়ুয়া ২০১৯ সালে আরেক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় এবং  বিয়ে করে।   পরে আমরা তার নামেমামলা করলে ওই মেয়েকে আপোষ মিমাংসা করে ছেড়ে দেয়। বর্তমানে আমার বোন তার সঙ্গে আছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই।

টিপু আরও বলেন, এরপর থেকে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে  নিকেল বড়ুয়া আমাকে হত্যার জন্য একের পর এক হামলা করছে। ছুরিকাঘাতের মাসখানেক আগে তার গ্রামের রিপন ও কলঘর বাজারের বেলাল নামের দুই বখাটে আমার ঘরে এসে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। এর একমাস পর ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। সেই ক্ষত এখনো পুরোপুরি শুকায়নি। এর মাত্র ৩৮ দিনের মাথায় আবার আমদের দুই জনকে এসিড নিক্ষেপ করা হলো। আমার সঙ্গে কারো কোনো ধরনের শত্রুতা নেই, নিকেলই আমাকে হত্যার টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে।

তবে অভিযুক্ত  পুলিশ সদস্য নিকেল বড়ুয়া এ ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে যাব? আমার মা মারা গেছে, আজ সাপ্তাহিত সংঘদান ছিল। আমি এসব নিয়ে ব্যস্ত আছি।

এদিকে সেদিনের ঘটনায় রামু থানায় মামলা হলেও এখনও পর্যন্ত ঘটনায় অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি  পুলিশ।   এ বিষয়ে রামু থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে জানার জন্য আমি এখন ভিকটিমের বাড়িতে অবস্থান করছি।

এ ঘটনায় ভিকটিমদের ভগ্নিপতি পুলিশ সদস্য জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কথা আমরাও শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিকেল বড়ুয়া বর্তমানে সিআইডি চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত আছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. শাহনেওয়াজ  খালেদ বাংলানিউজকে জানান, নিকেল বড়ুয়া মায়ের মৃত্যুর কারণে বর্তমানে ছুটিতে আছেন। তবে ছেলেটি একটু অন্য রকম। তার ব্যাপারে এ রকম আরও অভিযোগ আছে, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।

এছাড়াও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকেলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬,২০২২
এসবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।