বরিশাল: টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ বাজারগুলোয় ব্যাপক ইলিশের দেখা মিলেছে। জেলেরা মাছ ধরতে যাওয়ার ৬/৭ ঘণ্টার মধ্যে এত পরিমাণ ইলিশ বাজারে উঠেছে- ক্রেতাদের পাশাপাশি বিক্রেতারাও অবাক।
বরিশালের পোর্টরোডের বেসরকারি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে গিয়ে টুকরিতে, বস্তায়, বরফে ব্যাপক ইলিশ সংরক্ষণ করে রাখতে দেখা গেছে। সেখান থেকে মাছ কিনছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা, আছেন ক্রেতাও।
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর এত ইলিশ ধরা পড়বে জেলেরা যেমন বুঝতে পারেননি, ক্রেতারাও বোঝেননি। প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় নিষেধাজ্ঞার আগের চেয়ে দাম কমেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
অবতরণ কেন্দ্রের শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই ছোট-বড় নৌকায় পোর্টরোডের মোকামে প্রচুর ইলিশ আসছে। আজ সারাদিনব্যাপী তাদের কর্মব্যস্ততা থাকবে। সাগরে যাওয়া ফিশিং বোটগুলো এখনও ঘাটে আসেনি। সেগুলো ফিরে আসলে ইলিশের আমদানি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলেও জানান তারা।
জাল ভর্তি হওয়ায় খুশি জেলেরাও। তারা বলছেন, প্রতিবছরই নিষেধাজ্ঞা শেষের পর নদীতে ব্যাপক ইলিশের আগমন হয়। নদীতে এখনও প্রচুর ইলিশ আছে। সামনের দিনগুলোয় ইলিশের আহরণ বাড়তেও পারে আবার কমতেও পারে।
বাজারে পুরনো ইলিশ বিক্রির অভিযোগ করেছেন অনেক ক্রেতা। তারা বলছেন, কিছু মাছের চোখ ও শরীর বেশ লাল দেখা যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে এগুলো পুরনো মাছ। অনেক সময় আবার বোঝাও যাচ্ছে না।
কার্ডধারী জেলে মালেক বলেন, নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন কিছু অসাধু জেলে ইলিশ শিকার করেছে। আজ তারা সুযোগ বুঝে সেই মাছ কৌশলে পাইকার বাজারে দিয়ে দিচ্ছে। যে কারণে বাজারে প্রচুর ইলিশের দেখা মিলছে। বরফ দিয়ে সংরক্ষণে রাখা মাছের স্বাদ থাকে না।
একদিনে যে পরিমাণে বাজারে ইলিশ এসেছে, তাতে ভবিষ্যতে অবস্থায় আরও ভালো হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য আড়ৎদাররা। মাছ ব্যবসায়ী মাসুম জানান, সকালের বাজারে ৩০০ মণের মতো ইলিশ এসেছে। বিকেল পর্যন্ত ইলিশ আসবে এ ধারা অব্যাহত থাকলে এবারে মাছের বাজার ভালো যাবে। দক্ষিণাঞ্চলের বাজারগুলোয় সাগর থেকে পাওয়া ইলিশ না পৌঁছানো পর্যন্ত দাম পড়ার সম্ভাবনা থাকছে না।
বরিশালের পাইকার বাজারে এক কেজির নিচে এলসি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে মনপ্রতি ৩৬ হাজার টাকা; এক কেজির ইলিশ মন প্রতি ৪০ হাজার; ১২০০ গ্রামের ইলিশ ৪৪ হাজার; দেড়কেজি ওজনের ইলিশ ৫০ হাজার টাকা মনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে।
অবৈধ হলেও ধরা পড়া জাটকা বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার টাকা মনপ্রতি। ভেলকার মণ ২৮-৩০ হাজার; গোটলা বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ হাজার টাকায়।
তবে, বাজারে ১২০০ গ্রাম বা তার বেশি ওজনের প্রতি মণ ইলিশ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে এক লাখ ১০ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এক কেজি ওজনের ইলিশের মণ বিক্রি হয় এক লাখ টাকার উপরে। আর ৬০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায়।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, যে পরিমাণ ইলিশ আসছে বাজারে, পর্যায়ক্রমে কিছুটা কমবে। ৫-৭ দিনের মধ্যে ইলিশের পরিমাণ আবারও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, ডিম দেওয়ার পর মা ইলিশগুলো কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে তাদের মুভমেন্ট তেমন একটা হয় না। ফলে জালেও তেমনভাবে ধরা পড়ে না। মুভমেন্ট বাড়লে ইলিশ আরও আহরণ হবে, বাজারে আমদানি বাড়বে। সাগরের দিক থেকে নদীতে ইলিশ আসার যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতেও প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে।
এ মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ইলিশ মাছ সারা বছর ধরেই কিছু না কিছু ডিম ছাড়ে। তাই ডিমওয়ালা ইলিশ বাজারে ভবিষ্যতে দেখা যাবে। চলতি সময়ে ৩০ শতাংশের বেশি ইলিশ ডিম পাড়ে। আর ফেব্রুয়ারির দিকে অর্থাৎ শীত থেকে গরম আসার সময়ে আরেকবার বৃহৎ সংখ্যক ইলিশ ডিম ছাড়বে। যদিও বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ইলিশ ডিম পাড়ে যা আমাদের নদী ও সাগরের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী যথেষ্ট। আর এতে যে পোনা আসবে তাতে যে ইলিশ উৎপাদন হবে তাতেই অর্জন ছাপিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
এমএস/এমজে