ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

তেরখাদায় টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির অভিযোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২২
তেরখাদায় টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল জালিল শেখ

খুলনা: খুলনার তেরখাদা উপজেলায় লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিতর্কিত ব্যক্তিরা স্থান পাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়। যাচাই-বাছাই কমিটির বিরুদ্ধেই উঠেছে এ আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ।

 

দ্বিতীয় দফায় বুধবার (২ নভেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন উপজেলার বারাসাত এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট লেফট্যান্ট মো. আব্দুল জালিল শেখ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তেরখাদা উপজেলায় আমার অধীনে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন মাত্র ৯১ জন। এছাড়াও উপজেলার বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা অন্য এলাকায় যুদ্ধে অংশ নিলেও তাদের সঠিক নাম-ঠিকানা জানা নেই। যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল এমএজি ওসমানীর সাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত হন অনেকে। পরবর্ততীতে ধাপে ধাপে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরমধ্যে তেরখাদার বাসিন্দা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার খান মোহাম্মাদ আলী ও তেরখাদা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার চৌধুরী আবুল খায়ের রয়েছেন। বর্তমানে তেরখাদা উপজেলায় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা অর্ন্তভুক্তির লক্ষ্যে যাচাই-বাছাই চলছে। এই যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি খান মোহাম্মাদ আলী ও সদস্য রয়েছেন চৌধুরী আবুল খায়ের। ২০১৭ সালে এই যাচাই-বাছাই হওয়ার কথা ছিল।

অনলাইন ও সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের কমিটির দুজন সদস্য খান মোহাম্মদ আলী ও চৌধুরী আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কারণে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের এবং হাইকোর্ট ডিভিশনে আমি রিট করি। পরবর্তীতে মহামান্য হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ১ মার্চ আদেশে অনলাইন ও সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই স্থগিত করে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই নির্দেশিকা-২০১৬ এর আলোকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের কথা বলে এবং মামলা চলমান থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম করা যাবে এমন নির্দেশনা দেয়। গত ১৫ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পুনরায় খান মোহাম্মাদ আলীকে সভাপতি ও চৌধুরী আবুল খায়েরকে সদস্য মনোনয়ন দিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফলে তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার উল্লিখিত কমিটি নিয়ে পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চালু করেন।

তিনি আরও বলেন, তেরখাদা উপজেলায় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভুক্তির লক্ষ্যে ৬০০ জন আবেদন করে। যাচাই-বাছাই কাজে নিয়োজিত কমিটির সভাপতি খান মোহাম্মাদ আলী ও সদস্য চৌধুরী আবুল খায়ের অমুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় অর্ন্তভুক্তির জন্য অর্থ বাণিজ্যে লিপ্ত রয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা আবেদনকারীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ পনের লাখ টাকার চুক্তি করা হচ্ছে। এছাড়া নতুন আবেদনকারীদের সাক্ষী যারা দিচ্ছেন তারা সমান তালে অর্থ বাণিজ্য করছে। এ নিয়ে বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা নানা প্রকার মন্তব্য করে লেখালেখি করছে। এভাবে টাকার বিনিময় যদি অমুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধঅপরাধী পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায় তাহলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের আর সম্মান বলতে কিছু থাকে না। এসব অনিয়ম নিয়ে আমি ইতোপূর্বে বহু অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছি না।

‘অনিয়মতান্ত্রিকভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধাদের অর্ন্তভুক্তির বিষয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা জেলা প্রশাসক ও তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করি। পরে ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ করি। এছাড়া গত ৪ অক্টোবর খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছি। তাতেও কোনো ফল না পাওয়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষার্থে পুনরায় জাতির সামনে সত্য তুলে ধরছি। ’ যোগ করেন মো. আব্দুল জালিল শেখ।  

এ বিষয়ে তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৭ সালে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। যারা আবেদন করেছেন মন্ত্রণালয় থেকে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা এখন যাচাই-বাচাই করছেন। মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া ছিল সেভাবে করেছি। টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তকরণের বিষয়টি আমি জানি না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২২
এমআরএম/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।