ঢাকা: এক নারীর সঙ্গে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের কারণে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইমতিয়াজকে লঘুদণ্ড হিসেবে বেতন এক ধাপ নিচে নামিয়ে দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ময়মনসিংহের ফুলপুরের লায়লা শারমিনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, চট্টগ্রামে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক শাখায় তার নামে হিসাব খোলা এবং ওই হিসাব পরিচালনার বিষয়ে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে তার নামে ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় মামলা রুজু করে কৈফিয়ত তলব করা হয়। একই সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত শুনানি চান কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়।
এরপর তিনি নির্ধারিত ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দাখিল না করে আরও ১০ কার্যদিবস সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। পরে ৫ নভেম্বর ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয় এবং বিভাগীয় মামলার অভিযোগ, উভয় পক্ষের বক্তব্য ও সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে অভিযোগ প্রমাণ হলে গুরুদণ্ড হতে পারে বিধায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৭ (২) (ঘ) বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করার জন্য একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তার দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, অভিযুক্ত আসিফ ইমতিয়াজ চট্টগ্রামে থাকাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগকারী লায়লা শারমিনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সাক্ষী তমার বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সাবলেট ভাড়াটিয়া হিসেবে নিয়মিত যাতায়াত এবং অবস্থানের মাধ্যমে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সেই সঙ্গে অভিযোগকারীর নামে ব্যাংক হিসাব খোলা ও লেনদেনের ক্ষেত্রে আসিফ ইমতিয়াজের সম্পৃক্ততা রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয় এবং তার বিরুদ্ধে আনীত সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ' - এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে।
অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় কেন তাকে একই বিধিমালার ৪ (৩) বিধি অনুযায়ী চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অন্য কোন যথোপযুক্ত গুরুদণ্ড দেওয়া হবে না সে বিষয়ে দ্বিতীয় কারণ দর্শানো হলে তিনি গত ১০ অক্টোবর কারণ দর্শানোর জবাব দাখিল করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন, দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর জবাব, নথি পর্যালোচনা ও সব বিষয় বিবেচনা করে আসিফ ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ হলেও নবীন কর্মকর্তা বিধায় তাকে গুরুদণ্ডের পরিবর্তে লঘুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আদেশে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় একই বিধিমালার ৪ (২) (ঘ) বিধি অনুযায়ী তাকে আগামী তিন বছরের জন্য ‘বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ অর্থাৎ ৬ষ্ঠ গ্রেডে ৩৫৫০০-৬৭০১০- টাকা বেতন স্কেলে নিম্নধাপ ৩৫৫০০- টাকা মূল বেতনে অবনমিতকরণ সূচক লঘুদণ্ড দেওয়া হলো। তবে দণ্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৩৫৫০০-৬৭০১০ টাকার স্কেলে (৬ষ্ঠ গ্রেড) বর্তমানে প্রাপ্ত বেতন ধাপে প্রত্যাবর্তন করবেন। তিনি কোনো বকেয়া প্রাপ্য হবেন না।
বাংলাদেশ সময়: বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২২
এমআইএইচ/এমএমজেড