ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মুক্ত আকাশে রবিউলের চালকবিহীন প্লেন

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২২
মুক্ত আকাশে রবিউলের চালকবিহীন প্লেন আকাশে উড়ছে রবিউলের তৈরি প্লেন। ছবি: বাংলানিউজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ছোটবেলা থেকেই প্লেন তৈরির শখ জাগে কিশোর মো. রবিউলের (১৫)। অবশেষে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তৈরি করে চালকবিহীন দুটি প্লেন।

দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ায় খোলা আকাশে এখন উড়ছে প্লেন দুটি। এ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই তার বাড়িতে ভিড় করছে গ্রামবাসীসহ দূর-দূরান্তের লোকজন।  

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বিরামপুর গ্রামের রাজমিস্ত্রি নাজু মিয়ার দ্বিতীয় ছেলে রবিউল। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় তার পড়াশোনা। এরপর বাবার কাজের সহায়তার পাশাপাশি রবিউল ইউটিউব থেকে নেয় প্লেন তৈরির ধারণা।  
 

এ বিষয়ে কথা হয় কিশোর রবিউলের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল প্লেন তৈরি করার। বাবার নিম্ন আয়ের সংসারে বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারি নাই। এরপর বাবার কাজে সহায়তা করতে থাকি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ইউটিউব থেকে প্লেন তৈরির বিভিন্ন ধরনের ধারণা নিতে থাকি। প্রতিদিন অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে প্লেন তৈরির যন্ত্রাংশ অনলাইনে অর্ডার করে সংগ্রহ করি। তারপর ঘরে বসে দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়ে ককশিটের মাধ্যমে যন্ত্রাংশগুলো ফিটিং করে প্লেন দুটি তৈরি করি। একবার চার্জ দিলে প্রায় এক ঘণ্টা আকাশে উড়ানো যায় প্লেনটি। প্লেনটির অবকাঠামো ককশিটের তৈরি হলেও রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারছি না। টেকনিক্যাল কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারলে আরও অনেক কিছু শিখতে পারতাম। তবে ভবিষ্যতে আমার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে।

রবিউলের বাবা নাজু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, সংসারে অভাবের কারণে আমার মেধাবী ছেলেটাকে লেখাপড়া করাতে পারি নাই। পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমার কাজে প্রায় সময় সহায়তা করে সে। প্লেন তৈরির বিষয়ে অনেকদিন ধরে গবেষণা করে আসছে। প্লেন তৈরি করতে যে টাকা খরচ হয়েছে তা তার জমানো টাকা দিয়ে করেছে। ছেলের তৈরি করা প্লেন দেখার জন্য যখন বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতিদিন মানুষ আসে তখন আনন্দ পাই, ভালো লাগে। এখন সরকার যদি আর্থিকভাবে সহায়তা করে তাহলে লেখাপড়া করে ও আরও নতুন কিছু তৈরি করতে পারবে।

স্থানীয় লোকজন জানান, তার বাবা একজন দিনমজুর। রবিউল খুবই মেধাবী। অর্থের অভাবে তার লেখাপড়া বন্ধ। মেধা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সে প্লেন তৈরি করেছে। তবে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে সে আরও ভালো কিছু তৈরি করতে পারবে, তাতে উপকৃত হবে দেশ ও জাতি।  

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়ামিন হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি জানার পর তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তার সৃষ্টিশীল চেষ্টাকে সফল করার জন্য সব রকম সহায়তা করা হবে। উপজেলা পর্যায়ে উদ্ভাবনী মেলায় তার নির্মিত প্লেন দুটিকে স্থান করে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ