ঢাকা, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ জুন ২০২৪, ০৯ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

পরিবহন খাতে বছরে ৪ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২২
পরিবহন খাতে বছরে ৪ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ

ঢাকা: বছরে সড়ক পরিবহন খাতে দিনে ১১ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ।

সংগঠনটি বলছে,‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন মালিকদের সঙ্গে আতাত করে দিনে ১১ লাখ গাড়ি এই ১১ কোটি চাঁদা আদায় করে।

সেই হিসাবে বছরে সড়কে প্রায় ৪ হাজার ১৫ কোটি চাঁদা আদায় হয়। ’  

শনিবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শ্রমিক লীগ সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন নামে শ্রমিকদের ফেডারেশন হলেও তা মূলত মালিকদের সমিতি। ওই ফেডারেশন ১০টি দাবি করলে ৮টি দাবিই থাকে মালিকদের। ফেডারেশনের নেতারা মালিক সমিতির সঙ্গে আতাত করে শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিবহণ সেক্টরে চাঁদাবাজির নির্দেশিকা তৈরী করে। পরিবহণ সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকরা একটি মাফিয়া চাঁদাবাজ চক্রের হাতে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত ও বঞ্চিত। শ্রমিকদের শোষণ করে চাঁদাবাজরা শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। রাজধানীর চারটি বড় টার্মিনালসহ দেশের প্রতিটি টার্মিনালের শ্রমিকরা এই মাফিয়া চক্রের হাতে জিম্মি। এরা সড়ক মহাসড়কে চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে নিজেদের প্রাসাদ-প্রতিপত্তি গড়ে তুলছে।

শ্রম আইন অনুযায়ী নিয়োগপত্র প্রদান ও পরিবহণ সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধসহ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক লীগের ঘোষিত ১২ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে শ্রমকি সংগঠনটি।

সড়ক পরিবহন শ্রমিক নেতাদের দাবিগুলো হলো- সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ মোতাবেক সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের স্ব-স্ব মালিক কর্তৃক বাস, ট্রাক চালকদের নিয়োগপত্র প্রদান করা, প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মাসিক বেতন প্রদান ও ৮ কর্ম ঘণ্টা নির্ধারণ করা; সড়ক পরিবহন শ্রমিক ও কর্মচারীদের মালিক কর্তৃক খোরাকি, চিকিৎসা ভাতা এবং ২ ঈদ ও পূজায় উৎসব বোনাস প্রদান করা; পরিবহন সেক্টরে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের বেআইনিভাবে চাঁদার আদায়ের নির্দেশিকা তৈরি করে পরিবহন সেক্টরে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা; যানজট নিরসন ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে মেয়াদোত্তীর্ণ সকল প্রকার ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করা; শরীয়তপুর-হরিনাঘাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, মাওয়া-কেওড়াকান্দীসহ বিভিন্ন ফেরিঘাটে বাস, ট্রাক, কভার্ডভ্যান সিরিয়ালের নামে অবৈধ চাঁদা আদায় বন্ধ এবং ফেরিঘাটে যানজট নিরসনে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা; বিআরটিএতে পরিবহন চালকদের লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে রি-টেস্ট প্রথা বাতিল ও পরিবহন শ্রমিকদের সহজ পদ্ধতিতে লাইসেন্স প্রদান করা; হাইওয়ে সড়কে ট্রাক-ট্যাংকলরি ও কভার্ড ভ্যানের উপর অহেতুক পুলিশের হয়রানি বন্ধ এবং মানিকগঞ্জ, সীতাকুণ্ড, কুমিল্লা ময়নামতি, দাউদকান্দিসহ বিভিন্ন মহাসড়কে ওয়ে স্কেল (ওভার লোডিং) এর নামে বিনা রশিদে টাকা আদায় বন্ধ করা।

এছাড়া ঢাকায় সীমাহীন যানজট নিরসনে ফুলবাড়িয়া স্টপ-ওভার অস্থায়ী পরিবহন টার্মিনালটি কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা; সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের জন্য শ্রমিক কল্যাণ তহবিল বিল অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা; নাইট কোচ যাত্রীদের ডাকাতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিটি পরিবহনের মালিকের মাধ্যমে ২ জন আনসার-পুলিশ নিয়োগ করা; বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত সকল বেসিক ইউনিয়নের পরিচয়পত্র ব্যবহারকারী ভূমিহীন পরিবহন শ্রমিকদের সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ঢাকা মহানগরীতে যানজট নিরসনে মহানগরের মধ্যে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকল বাস ও নাইট-কোচ কাউন্টার অবিলম্বে আন্তঃজেলা টার্মিনালে স্থানান্তর করা।

আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ১২ দফা দাবি মানা হলে ওই দিন পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক লীগ সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইনসুর আলী প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২২
এনবি/এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।