ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অফবিট

বঙ্গবন্ধুর স্মরণে ৫২ হাজার তালগাছ লাগিয়েছেন খোরশেদ

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৩
বঙ্গবন্ধুর স্মরণে ৫২ হাজার তালগাছ লাগিয়েছেন খোরশেদ

ঠাকুরগাঁও: পল্লী চিকিৎসক খোরশেদ আলী, বয়স ৮০ বছর। এলাকায় তালগাছ পাগল ডাক্তার নামেই পরিচিত সবার কাছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি তার রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা। তাই বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবার ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন সড়কে ৫২ হাজার তালগাছ লাগিয়েছেন তিনি। মোট এক লাখ তালগাছ লাগানোর ইচ্ছে তার।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই ধারে লাগানো গাছের পরিচর্যা করছেন তিনি। এভাবে গত নয় থেকে ১০ বছর ধরে জেলার বিভিন্ন উপজেলার রাস্তার পাশে তালগাছ লাগিয়েছেন তিনি। এ কাজ করতে গিয়ে নিজের কৃষি জমি পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। তবুও তিনি থেমে থাকেননি। নিজের টাকায় আঁটি কিনে বিভিন্ন রাস্তার পাশে তালগাছ রোপণ করেন তিনি।

গাছ পরিচর্যার এক ফাঁকে বৃদ্ধ খোরশেদ আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ইউনিয়নের পাহাড়ভাঙা এলাকায় তার বাড়ি। স্ত্রী আর সাত ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে তার সংসার। আয়ের উৎস বলতে কেবল নিজের অল্প কিছু কৃষি জমি আর পল্লী চিকিৎসা। এ দিয়েই চলে তার সংসারের খরচাপাতি।

এ বয়সে এসেও হাজার হাজার তালগাছ কেন লাগাচ্ছেন এমন প্রশ্নে খোরশেদ আলী বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে যাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই সব শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় আমার এ উদ্যোগ। একই সঙ্গে মানুষ যাতে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পায়, তাই সড়কের দুই ধার দিয়ে এ পর্যন্ত ৫২ হাজার তালগাছের চারা রোপণ করেছি। ইচ্ছে আছে, এক লাখ তালগাছ রোপণ করার।

তালগাছের যত্ন নেওয়া প্রসঙ্গে খোরশেদ আলী জানান, প্রতিদিন মোটরসাইকেলে বিভিন্ন সড়কে গিয়ে ১০০টি করে তালগাছের চারার পরিচর্যা করি। তবে কিছু তালগাছ খারাপ লোকেরা উপড়ে ফেলছে, গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।  

ওই গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, তালগাছ পাগল ডাক্তার দীর্ঘদিন ধরে অনেক গাছ লাগিয়েছেন মানুষের উপকার করার জন্য। তিনি গাছগুলো লাগিয়েছেন নিজের খরচে। অনেক সময় তিনি লোক নিয়ে আঁটি পোঁতেন। সাধারণত রাত ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে এ কাজটি করেন  তিনি। কারণ দিনে আঁটি পুঁতলে কেউ সেগুলো তুলে নিয়ে নিতে পারে বা আঁটির শাঁস খেয়ে ফেলতে পারে।  

একই গ্রামের আকবর আলী বলেন, তালগাছ রোপণ করা নিয়ে তার (খোরশেদ) পরিবারের মধ্যে অনেক সময় ঝগড়া হয়েছে। তিনি নিজ উদ্যোগে জমি বিক্রি করেও তালের চারা লাগিয়েছেন। এ মহৎ কাজ তিনি করে যাচ্ছেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের উপকারের জন্য। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে কোনো সহযোগিতা করলে তিনি আরও উৎসাহ পাবেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন, খোরশেদ আলী নিজ উদ্যোগে তালগাছের বীজ রোপণ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রকৃতির সৌন্দর্য, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তালগাছের ভূমিকা অনেক। ইউপি কার্যালয় থেকে তালবগাছ রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

খোরশেদ আলীর তালগাছ রোপণকে সাধুবাদ জানিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, খোরশেদ আলীর তালগাছ লাগানো সামাজিক ভালো কাজের একটি চরম দৃষ্টান্ত। আমাদের জেলা প্রশাসন এ কাজে খোরশেদ আলীকে উৎসাহিত করতে সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।