এক ব্রিটিশ মহিলা স্ট্রোক করার পর ইতালীয় ভাষায় বলতে শুরু করেছেন যদিও তিনি কখনও এই ভাষা শেখেনি বা ইতালি যাননি।
৫৮ বছর বয়স্ক অলথিয়া ব্রাইডেনকে এক সন্ধ্যায় তার স্বামী উইনস্টনের অচেতন অবস্থায় পান।
উইনস্টন বলেন, স্ত্রী কথা বলতে পারছিল না দেখে তিনি তৎক্ষণাৎ অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর গত ৩০ জুলাই গলায় সার্জারির জন্য অলথিয়াকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই অপারেশনের পর অলথিয়া তিন মাস কথা বলতে পারেননি। পরে যখন তিনি কথা বলতে শুরু করেন তখন ইতালীয় ভাষা বলতে থাকেন।
ডাক্তাররা বলছেন অলথিয়া ‘ফরেন অ্যাকসেন্ট সিন্ড্রোমে’ আক্রান্ত। এটি একটি বিরল রোগ। যেখানে একজন ব্যক্তির কথা এমনভাবে শোনায় যেন তারা বিদেশি উচ্চারণে কথা বলছে। যদিও সেই ভাষা তারা কখনো শেখেনি।
অলথিয়া বলেন, আমার স্ট্রোকের পর তিন মাস ধরে আমি ভেবেছিলাম যে আমি আর কখনও কথা বলতে পারব না... আমার মনে হচ্ছিল আমি এক ধরনের খোলসবন্দী হয়ে গেছি। আমার গলায় সার্জারির পর, এক নার্স আমার হাসপাতাল বেডে রুটিন পরীক্ষা করতে এসেছিলেন এবং তখন সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে আমি কথা বলা শুরু করলাম। এই ঘটনায় তিনি যেমন হতবাক ছিলেন, আমিও তাই।
তিনি বলেন, ডাক্তাররা এবং হাসপাতালের কর্মীরা তার বিছানার চারপাশে জড়ো হয়েছিলেন তার কথা শুনতে। যত বেশি আমি কথা বলছিলাম, তত বেশি আমরা সবাই বিভ্রান্ত হচ্ছিলাম। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, আমার স্ট্রোকের আগে কি ইতালীয় উচ্চারণে কথা বলতাম কিনা... সবকিছুই খুব দ্রুত ঘটছিল, আমি বিভ্রান্ত ছিলাম।
দিনগুলো যত যচ্ছিল, আমার ইতালীয় উচ্চারণ তত স্পষ্ট হয়ে উঠছিল এবং আমি কথা বলার সময় যে শব্দগুলো তৈরি করছিলাম তার উপর আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আমি অবাক হয়ে যাই যে আমি ইতালীয় ভাষাও বলতে পারি... যা আমি কখনও শিখিনি বা কখনও বলিনি। আমি জানি না কেন আমি এটি করছি- আমার মস্তিষ্ক ইংরেজি শব্দকে ইতালীয়তে রূপান্তরিত করে।
তিনি বলেন, স্ট্রোকের পর এই সিন্ড্রোম নিয়ে জীবনযাপন করা কঠিন। আমি এমনকি যখন আমি ভাবি তখনও মাথায় ওই উচ্চারণ শুনতে পাই। আমি প্রতিদিন সকালে আশা করি যে আমার পুরানো কণ্ঠ ফিরে আসবে।
ডাক্তাররা বলছেন, ফরেন অ্যাকসেন্ট সিন্ড্রোম (এফএএস) একটি বিরল রোগ যেখানে একজন রোগী হঠাৎ বিদেশি উচ্চারণে কথা বলতে শুরু করে যে ভাষাটিতে ওই ব্যক্তি আগে কখনও কথা বলেনি।
এফএএস সাধারণত স্নায়ুতন্ত্রে ক্ষতির কারণে হতে পারে। স্ট্রোক বা মাথার আঘাত ইত্যাদি কারণে, মস্তিষ্কের যে অংশ কথা বলা বা শব্দ তৈরি করে সে অংশে কোনো ক্ষতি হলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কের টিউমারের কারণেও এই সমস্যা হতে পারে।
এফএএস আক্রান্ত সব রোগী যে বিদেশি কোনো ভাষায় কথা বেলন তা কিন্তু নয়। স্বরবর্ণের উচ্চারণে পরিবর্তন, ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণে অসুবিধা, স্বর এবং সুরে পরিবর্তন, একঘেঁয়ে কথা বলা এই সব সমস্যাও হতে পারে।
এই রোগের চিকিৎসা খুবই সীমিত। কিছু রোগী সম্পূর্ণভাবে তাদের আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে, অনেকে পারেন না। ১৯০৭ সালে প্রথম এই রোগ চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে মাত্র ১০০টি এমন কেস নথিভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
ইএস/এমএম