ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

পূর্ণাঙ্গ ‘লিটল ফুট’-এ উন্মোচিত বিবর্তনের সূত্র

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৭
 পূর্ণাঙ্গ ‘লিটল ফুট’-এ উন্মোচিত বিবর্তনের সূত্র ‘লিটল ফুট’ এর পূর্ণাঙ্গ জীবাশ্ম উন্মোচিত হয়েছে চলতি সপ্তাহেই। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

পুরো পৃথিবী এখন এক নারীর দিকে তাকিয়ে আছে। তবে তিনি সোশ্যাল মিডিয়া বা বাস্তবের সেলিব্রিটি নন, নন কোনো অভিনেত্রী বা রাজকন্যাও। তাদের সকলের তুলনায় অনেক পুরনো কয়েক মিলিয়ন বছর আগের মানুষ তিনি।

আবার জীবিতও নন, ৩৬ লাখ ৭০ হাজার (৩.৬৭ মিলিয়ন) বছরের পুরনো ৩০ বছর বয়সী এক তরুণীর জীবাশ্ম বা কঙ্কাল তিনি, যার নাম ‘লিটল ফুট’।

তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আবিষ্কারের পর ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেগুলো পরিষ্কার ও একসঙ্গে স্থাপন করেছেন জীবাশ্ম নৃ-বিজ্ঞানীরা।

দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া মানবজাতির পূর্বপুরুষদের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে সম্পূর্ণ এ কঙ্কালটির উন্মোচন করা হয়েছে চলতি সপ্তাহেই। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হাড়গুলো পরিষ্কার ও একসঙ্গে স্থাপন করেছেন জীবাশ্ম নৃ-বিজ্ঞানীরা।                                          ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীতবিজ্ঞানীরা তার যে বয়স নির্ণয় করেছেন, তার অর্থ ‘লিটল ফুট’ পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়ায় পাওয়া প্রাগৈতিহাসিক মানব প্রজাতির বিখ্যাত জীবাশ্ম ‘লুসি’রও প্রায় ৫ লাখ বছর আগে বেঁচে ছিল।

লিটল ফুট আমাদের পারিবারিক বৃক্ষের সংযোগসূত্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রটিকে আরও সহজ করে তুলেছে। কিভাবে আমরা মানুষ হয়ে উঠলাম, সেটিও শেখায় লাখ লাখ বছর গুহার মাটিচাপা পড়ে থাকা ওই তরুণীর কঙ্কাল।

১৯৭৪ সালের ২৪ নভেম্বর লুসির কঙ্কাল আবিষ্কার মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসই বদলে দেয়,  আমাদের পূর্বপুরুষের নাম-পরিচয়ও নতুন করে লেখায়। ৩২ লাখ বছর আগের পৃথিবীতে বসবাস করা লুসিই ছিল আমাদের আদিমাতা।

অন্যদিকে লিটল ফুটকে পাওয়া গেছে ১৯৯০ এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান শহর জোহানেসবার্গের দক্ষিণ-পশ্চিমের স্টেরফফটন গুহায়।

গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, লুসি ও লিটল ফুট উভয়ে একই মানব প্রজাতি (হোমিনিডিন) ‘হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস্‌ অ্যাফারেনসিস্’-এর অন্তর্গত, তবে তারা বিভিন্ন প্রজাতি।

লিটল ফুটই এখন পর্যন্ত পাওয়া এ হোমিনিডিন প্রজাতির সবচেয়ে প্রাচীন জীবাশ্ম। আর ৩৬ লাখ ৭০ হাজার বছর আগে উদ্ভব হওয়া অস্ট্রালোপিথেকাস্‌ আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস্‌- এর পূর্ববর্তী ধাপ।

লুসি-লিটল ফুটেরও অনেক আগে ১৯২৪ সালে অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার টং এলাকায় আবিষ্কৃত হয় এ প্রজাতির প্রথম জীবাশ্ম, যার নাম ছিল ‘টং শিশু’। আলাদা আলাদা হাড় আবিষ্কৃত হয় জীবাশ্মটির।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীতআমরা আগে অস্ট্রালোপিথেকাস্‌কেই আমাদের সরাসরি পূর্বপূরুষ বলে মনে করতাম। তবে ১৯৮৪ সালে হোমো ইরেকটাস্‌ বা ইরেক্ট প্রজাতির হোমিনিনি শিশু ‘তুরকানা বয়’ বা ‘নারিওকোটমি বয়’ এর পূর্ণাঙ্গ অববয়ব আবিষ্কার প্রমাণ করে, অস্ট্রালোপিথেকাস্‌ থেকে হোমো স্যাপিয়েন্সে পরিণত হতে মাঝের ধাপ আদি আধুনিক ইরেক্ট পার হয়েছে আধুনিক মানুষেরা।


নৃ-বিজ্ঞানীরা জানান, আফ্রিকার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মানবজাতির পূর্বপুরুষদের বিভিন্ন প্রজাতির বসবাস ছিল। তাদের আরও অনেক জীবাশ্ম সেখানে লুকিয়ে আছে, যেগুলো এখনো খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। মানুষের বিবর্তনের সম্পূর্ণ সূত্র উদ্ধারে তাই তারা ইথিওপিয়ার অদূরে লুসির বাড়ির কাছে প্রতি বছর জীবাশ্ম খনন করে আসছেন।

ধারাবাহিক এ খননকালেই পাওয়া লিটল ফুট স্টেরফফটনের গুহায় পড়ে গিয়েছিল বলে গবেষণায় জেনেছেন বিজ্ঞানীরা। অর্থাৎ, তার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। বিজ্ঞানী দলের নেতা অধ্যাপক রন ক্লার্কের মতে, তাকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে ১০ মিটার (৩৩ ফুট) গর্তে। সম্ভবত ঘুমন্ত অবস্থায় গাছ থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান তিনি।

তিনি বলেন, ‘এটি ছোট জীবাশ্ম হলেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি একটি ছোট্ট হাড়ের সঙ্গে শুরু হয়েছে, যা আমাদের হোমো সেপিয়েন্স বা আধুনিক মানুষের উৎস বুঝতে সাহায্য করেছে’।

‘গুহা থেকে খুব ভঙ্গুর হাড়গুলোর জীবাশ্ম তুলে আনার প্রক্রিয়াটি ছিল যন্ত্রণাদায়ক।  কারণ, অত্যন্ত নরম এবং একটি প্রাকৃতিক কংক্রিটের মতো পদার্থে সমাহিত ছিল সেগুলো। আমরা খননকালে সূঁচের মতো খুব ছোট ছোট সরঞ্জাম ব্যবহার করেছিলাম, তাই বেশি সময় লাগে’ - যোগ করেন তিনি।

লিটল ফুটের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অধ্যাপক রন ক্লার্ক জানান, তিনি প্রায় ৩০ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন- যা তিন মিলিয়ন বছর আগে জন্ম নেওয়া কোনো মানুষের জন্য ভালো বয়স।

প্রিয় সন্তানদের চলচ্চিত্র ‘দ্য ল্যান্ড টাইম’- এর প্রধান চরিত্র ‘লিটল ফুট’ এর নামে তার নামকরণ করেছেন বলেও জানান এই নৃ-বিজ্ঞানী।

‘লিটল ফুটের সম্পূর্ণ কঙ্কাল প্রমাণ করে যে, তিনি আমাদের আরো একটি পূর্বপুরুষ বনমানুষের (এপ) তুলনায় ছোট শরীর ও ছোট হাতের অধিকারী ছিলেন’।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।