অস্ট্রালোপিথেকাস্ প্রজাতির মানব ছিল আমাদের আদি পূর্বপুরুষ। আমাদের নিজের প্রজাতি আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সরা বিবর্তিত হয়েছে এ প্রজাতির অস্ট্রালোপিথেকাস্ অ্যাফারেনসিস্ গোত্র হয়ে আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস্ থেকে।
২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার মালপা গুহায় খুঁজে পাওয়া অস্ট্রালোপিথেকাসের নতুন প্রজাতি সেদিবার কঙ্কালগুলো ‘ম্যালাপে’ নামে পরিচিত। হোমিনিন জীবাশ্মগুলোর আবিষ্কার আমাদের শারীরবিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তেজনাপূর্ণ অবদান হয়ে দেখা দিয়েছে। যা মানুষের প্রজাতিগুলো একে অপরের সঙ্গে কিভাবে সম্পর্কিত, সে বিষয়েও বিজ্ঞানীদের আরও বিস্তারিত জানতে সহায়তা করেছে।
অস্ট্রালোপিথেকাস্ সেদিবার জীবাশ্মগুলোর মধ্যে ছিল ১২/১৩ বছর বয়সের একজন পুরুষের পূর্ণাঙ্গ এবং একজন বয়স্ক নারীর আংশিক চোয়ালসহ প্রায় সম্পূর্ণ কঙ্কাল। দক্ষিণ আফ্রিকার উইটওয়াতসরাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. লি বার্গারের নেতৃত্বে জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা টুকরো হাড়গুলোর পূর্ণাঙ্গ রুপ দিয়ে গবেষণা করেন।
অস্ট্রালোপিথেকাস্ সেদিবারা ১৭ লাখ ৮০ হাজার থেকে ১৯ লাখ ৫০ হাজার বছর আগের পৃথিবী দাঁপিয়ে বেড়াতো বলেও গবেষণায় জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণার পর তারা বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকান অস্ট্রালোপিথেকাস্ সেদিবা প্রজাতি গাছের ছাল, ছোপ, পাতা, তেজপাতা, ঘাস, ফল, বনফুল এবং বনের পাম্পের মতো গাছপালা-উদ্ভিদ খেয়ে জীবন ধারণ করতো। জীবাশ্মের দাঁতগুলোর ফাঁকে ফিটোলিথ নামে পরিচিত গাছগুলোর জীবাশ্মীকৃত ক্ষুদ্র অংশগুলো এ তথ্যের প্রমাণ দেয়।
২০১২ সালের ২৭ জুন প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটিতে প্রাথমিক ডায়াবেটিসের বিভিন্ন বৈচিত্র্যের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, মানব বিবর্তনের সূচনা লগ্নে মানুষের প্রাক ও আদি প্রজাতিগুলো থেকেই রোগটির উৎপত্তি বলেই ধারণা বিজ্ঞানীদের।
খাদ্যকণায় তৈরি দন্তপৃষ্ঠে ক্ষতির মাইক্রোস্কোপিক গবেষণায় আরও জানা যায় যে, এই প্রজাতি সমকালীন অন্য প্রজাতিগুলোর তুলনায় ঘাস ও নরম সাবর্ণ গাছপালার মতো কঠিন খাবার খেতো।
২০১৩ সালের ১২ এপ্রিল প্রকাশিত ড. লি বার্গারের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেদিবার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলো প্রারম্ভিক হোমো প্রজাতিগুলোর অনুরূপ। এ প্রজাতি পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া হোমো এক্সদের (প্রাচীন মানব জীবাশ্ম) চেয়েও অনেক পুরনো। এর দাঁতগুলোর বৈশিষ্ট্য, অস্ত্র ও পায়ের দৈর্ঘ্য এবং সংকীর্ণ উচ্চতর বুকও আগের বিস্তৃত নিচু বুকের অস্ট্রালোপিথেকাস্ প্রজাতিগুলোর মানুষের মতোই।
আশ্চর্যের বিষয় যে, হাঁটতে পারা এই প্রজাতি ডান পা আগে ফেলতো। প্রতিটি পদক্ষেপে অস্ট্রালোপিথেকাস্ সেদিবা বাইরের প্রান্তের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতো নিজের ওজন পায়ের নিচে প্রবেশ করে। এই অদ্ভুত পথভ্রষ্টতার অর্থ হতে পারে যে, মানব বিবর্তন চলাকালে একাধিক পথে সরাসরি হেঁটেছিল তারা।
অস্ট্রালোপিথেকাস্ অ্যাফারেনসিস্ (লুসি’র প্রজাতি) অথবা অন্য প্রজাতিগুলো হোমো প্রজাতির পূর্বপুরুষ কি-না- এ মৌলিক প্রশ্নে মানুষের উৎসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও যোগ করে এ ম্যালাপে হোমিনিন।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
এএসআর