ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৭ কার্তিক ১৪৩১, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

স্থাপত্যকলা-জ্যোতির্বিদ্যার প্রাগৈতিহাসিক উৎপত্তিস্থল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
স্থাপত্যকলা-জ্যোতির্বিদ্যার প্রাগৈতিহাসিক উৎপত্তিস্থল বিশ্বের প্রথম খ্রিস্টান রাষ্ট্র আর্মেনিয়ার আধ্যাত্মিকতার পবিত্র ইতিহাস তার প্রাচীন স্থান ও স্মৃতিসৌধগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায়। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বিশ্বের প্রথম খ্রিস্টান রাষ্ট্র আর্মেনিয়ার আধ্যাত্মিকতার পবিত্র ইতিহাস তার প্রাচীন স্থান, গির্জা ও স্মৃতিসৌধগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায়। স্থাপত্যকলা ও জ্যোতির্বিদ্যারও প্রাগৈতিহাসিক উৎপত্তিস্থলও বলা হয় প্রায় ৭ হাজার বছরের পুরনো মাত্র ৩০ লাখ জন অধ্যুষিত দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার ছোট দেশটিকে।

রাজধানী ইয়েরেভেনের দক্ষিণে সাইয়ুনিক প্রদেশের কারাহুঞ্জে রয়েছে ৭ হাজার বছর আগের কবরস্থান। প্রায় ৭ হেক্টর এলাকাজুড়ে থাকা কবরগুলোতে রয়েছে আংটির মতো কেন্দ্রীয় বৃত্তাবদ্ধ মেগালিথ পাথরের সমাধির সারি।

 

ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন, ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জের বয়স ও চেহারার সঙ্গে তুলনীয় কারাহুঞ্জ একটি প্রাগৈতিহাসিক কবরস্থান। কারণ, ব্রোঞ্জ যুগে এখানে মৃতদের দাফন করা হতো এবং পাথরের স্ল্যাব দিয়ে আবৃত ছিল। মেগালিথের আংটিটির ব্যাস ৪৫ মিটার পর্যন্ত, উচ্চতা ২8 মিটার পর্যন্ত ও ওজন ১০ টনের বেশি। মোট ২২৩টি পাথরের প্রায় এক তৃতীয়াংশের মাঝে ছোট ও গোলাকার গর্ত রয়েছে। কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণেও তৈরি করা হতে পারে সেগুলো। এটি প্রমাণিত হলে কারাহুঞ্জ হবে বিশ্বের প্রাচীনতম পর্যবেক্ষণকারী।  

কারাহুঞ্জ হতে পারে বিশ্বের প্রাচীনতম জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণকারী।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীতসেন্ট্রাল আর্মেনিয়ার কোটেক প্রদেশের গর্নি গ্রামের কাছে খাড়া বাঁধের প্রান্তে গর্নির দুর্গ অবস্থিত। আর্মেনিয় পুরাণে উল্লেখিত সূর্যদেবের প্যাগান দুর্গ মন্দিরটি প্রথম শতাব্দীতে নির্মাণ করেন রাজা প্রথম তিরিডেটস্‌, যার মধ্যে খ্রিস্টধর্ম বিস্তারের প্রেক্ষিতও নিহিত।  

রাজা তৃতীয় তিরিডেটস্‌ ৩০১ খ্রিস্টাব্দে যখন আর্মেনিয়াকে খ্রিস্ট‍ান রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেন, যখন অনেক পৌত্তলিক মন্দির ধ্বংস হয়। কিন্তু কয়েকটি রক্ষা পায়, যেগুলোর একটি গর্নি। আজ এটি আর্মেনিয়ান প্যাগান উপাসনার প্রতীক। বছরের ১ লাখ ৩৬ হাজারেরও বেশি পর্যটক আর্মেনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রটিতে আসেন।  

কারাহুঞ্জ হতে পারে বিশ্বের প্রাচীনতম জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণকারী।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভেনের পশ্চিমভূমি দেশটির ‘পবিত্র রাজধানী’ নামে পরিচিত। এখানকার ভাগাসারসাপাত শহরের সেন্ট গেইনি চার্চ ৬৩০ সালে নির্মিত, যেটি এখন ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। সেন্ট আব্রাহাম গেইনির মৃত্যুদণ্ডের স্থানে নির্মিত হয়েছে চার্চটি, যাকে রাজা তৃতীয় তিরিডেটস্‌ নিজে খ্রিস্টান হওয়ার আগে ফাঁসি দেন।  

দক্ষিণ-পূর্ব আর্মেনিয়ার আরারাট সমভূমির খোর ভ্রেরাপ মঠটি সেখানে, যেখানে রাজা তৃতীয় তিরিডেটস্‌ কারাবন্দি রেখেছিলেন আর্মেনিয়ার অ্যাপোস্টোলিক চার্চের প্রথম বিশপ গ্রেগরি দ্য ইলমিনেটরকে। মঠটি ২৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে গ্রেগরির সম্মানে অন্ধকূপে নির্মিত হয় এবং ১৬৬২ খ্রিষ্টাব্দে একটি বড় চ্যাপেল ও মঠ যোগ করা হয়েছিল। খোর ভ্রেরাপ এখন আর্মেনিয়ার সর্বাধিক পরিদর্শন করা সাইটগুলোর একটি। এর চ্যাপেলটি বিবাহ ও বাপ্তাইজের জনপ্রিয় স্পট।  

কারাহুঞ্জ হতে পারে বিশ্বের প্রাচীনতম জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণকারী।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীতগর্নির উত্তর-পূর্বে জাঘার্ডের মঠও ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। মঠটি আর্মেনিয়াকে খ্রিস্টীয়করণের পর চতুর্থ শতাব্দীতে গ্রেগরি প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু জটিল কাঠামোর কারণে ত্রয়োদশ শতকের আগে এর নামকরণ করা হয় ‘এয়ারভ্যাংক’ বা ‘গুহা মঠ’। কিছু কিছু গ্রেগহার্ডের (আর্মেনিয় ভাষায় ‘বর্শা) চেম্বার আশেপাশের পর্বতমালায় বিস্তৃত, তাদেরকে গুচ্ছ আকৃতির দেখায়।

কিংবদন্তি আছে, যিশু খ্রিস্টকে যে ক্রুশে বিদ্ধ করা হয়েছিল, সেটি জাঘার্ডের মঠে আনা হয় বলেই ওই সময় আর্মেনিয় ভাষায় ‘বর্শা’ গ্রেগহার্ড নামে এটিকে অভিহিত করা হয়েছিল। ভেঘাশাপাটের এচমাইডজিন ক্যাথেড্রালের কাছ থেকে এনে ক্রুশটি এখানে ৫০০ বছর রাখা হয়েছিল, যেখানে এখন সেটি প্রদর্শিত হচ্ছে।  

দক্ষিণ আর্মেনিয়ার ভ্যটস ডিজার প্রদেশের ইয়েগেহেজিসের জোরাটস্‌ গির্জাটি চতুর্দশ শতকে নির্মিত হয়েছিল, যখন দেশটি মঙ্গোলের নিয়ন্ত্রণাধীন ও সিরিয়ার মামলুকদের সঙ্গে যুদ্ধরত ছিল। গির্জাটির একটি উঁচু বেদি এবং দু’পাশে ছিল। বেদির উচ্চতার কারণে ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন যে, যুদ্ধের আগে আর্মেনিয় সৈন্যরা তাদের ঘোড়াগুলোকে সেখানে উঠিয়ে জয়ের জন্য আশীর্বাদ নিতেন।  

রূপান্তরিত পৌত্তলিক মন্দিরগুলোতে থাকা ক্রুশ ও ফুলের মোটিফে খোদিত খাচকারস্‌ ও পাথরের এপিটাফ প্রাথমিকভাবে আত্মার পরিত্রাণের প্রতীক হিসেবে জীবিত বা মৃতকে প্রতীয়মান করছে। একটি নতুন বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে ৯ম শতাব্দীতে প্রথম মন্দিরগুলোর চারপাশে নির্মিত হয়। পাথরগুলো এখন ইউনিসেকো’র অস্পষ্ট সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভূক্ত।  

গেহরাকুনিক প্রদেশের নরটাস্‌ কবরস্থানটিতে দেশের সর্ববৃহৎ খাচকারস শিল্পের এপিটাফ রয়েছে। দশম শতাব্দীর কবরস্থানটিতে ৪০০টিরও বেশি পাথরের এপিটাফের প্রতিটি একটি অনন্য নকশা দিয়ে তৈরি ছিল।  

বাংলাদেশ সময়: ০৩০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।